আজ ২৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষক,কবি অনুপমা অপরাজিতা’র জন্মতিথি।ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
প্রকৃতিস্বরূপা
বরাবরই নিম্নগামী, জলের পতন
হেঁটে চলে স্বপ্নরথ, খানাখন্দ সরুপথ
সমুদ্রের বিপুল বিলাসে
তিথির আগমনীর চূড়ায়
খণ্ড খণ্ড মেঘদল কেঁপে কেঁপে আসে
মুহূর্তের বৃষ্টিঅভিলাষ গড়িয়ে সমুদ্দুরে ভাসে
ছুঁড়ে দেওয়া ফুলে কতখানি ঘ্রাণ
রঙিন চশমার আড়ালে হয়নি তা দেখা
সেজেছে দেহখানি ,মেটেনি তৃষিত প্রাণ
সুরায় উপচে পড়ে নীলজোছনা
ঘোরলাগা পরিবেশনায় ছিলো মূর্ছনা
গোলাপি-সাদা মাংস রঙিন ডিভানে
বাঁধানো ছবিগুলোয় প্রাণবন্ত দৃষ্টি
গ্রীবায় লেগে আছে দাগ চুমোর সাবানে
ফুড়ুৎ উবে যায় নেশা ফাঁক গলে খিড়কির
বিবরণের অশেষটুকু একদা ম্লান হয়ে আসে
তক্ষক সময় ধুয়ে দেয় মুছে নেয় সবুজ ঘাসে ।
রাতের মাধুরী
কোমল রূপালি শাদা কাশের বায়
আলু-থালু করা জোসনা সুধা মেখে হাঁটছি
সোহাগী রাতের সুরভি বাহারে।
শরতের আকাশের সমস্ত নীল চেখে নিয়ে
নীলিমার গোপন হাতছানিতে
শিউলীর তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ নিয়ে শিশির বিন্দুর স্পর্শ
একাকার করে আমার অন্তর পরম সোহাগে ।
উদাসীন নক্ষত্ররাজি স্থির প্রহরীর বেশে
খুঁজে ফেরে সেক্সোফোনের সুরেলা আবহ সঙ্গীত ।
মৌনী নিশির সীমাহীন শূন্য নিস্তদ্ধ আকাশের নীচে
চুরমার আর আচ্ছন্ন করে তোলে
নির্জন অরন্যের হাতছানি ।
ব্লটিং পেপারে
রাঙিয়ে দিয়ে যাও বার বার
রক্ত রাগে ফাগুণের আগুনে
কী বিস্ময়ে কী লীলায় খেলে প্রাণ
তুমি নেই বারো মাস নিশি দিন
তবুও আছো এই কাক ডাকা ভোরে
কৃষ্ণচূড়ার লালে , রাধাচূড়ার
থোকা থোকা সোনালি আলোয়
ঝাউ বনের সারে সারে বালিয়াড়ি সৈকতে
তুমি থাকো ঘিরে, কাজে যাবার দৌরাত্বে
শপিংমলের ব্রান্ডের শো-রুমে
ঘুমের ঘোরে মনোহর আবেশে
কখনো আবার জেগে থাকা স্বপনে
ছোট্ট কিশোরের ঝাঁপিয়ে পড়ার দৌড়-ঝাপে
কিংবা আমার ড্রেসিংটেবিলের আয়নায়
তোমার চোখেই আমাকে দেখি সদা
তুমি নেই সুরে , লয়ে আছো প্রতিক্ষণই
তুমি থাকো সব না থাকা জুড়ে
মহুয়া মাতাল আবেশে চুমুর উষ্ণতায়
ব্লটিং পেপার হয়ে ফাগুণের রঙে রঙে ।।
এক নড়ি রাখিতে ভালোবাসা
আমি তোমার পাশে বসতেই
পকেট থেকে সিঁদূরলাল একটি রাখি
জড়িয়ে দিলে আমার কব্জিতে
মনে হলো আমার সিঁথি রাঙালে লালে
তোমার ঘরের সেলফ সুরসরঞ্জাম আড়চোখে
দেখলো চারুকলায় ভরা নিপুণ নৈবেদ্য
আমি মনে মনে বৃষ্টির কাছে বলে ফেলি
ও বোধ হয় আমাকে ভালোবেসেছে—
ভেতরে ভেতরে ডোপামিনের ক্ষরণ টের পাই
ভরাভাদরে বিসমিল্লার সানাই বেজে ওঠে ঠায়
আহ্বানের সুরে প্রতিধ্বনি করে আমার খুলি
তার বিহীন মাউসের ক্লিকে হিয়া ওঠে দুলি
আবিররাঙা সন্ধে উড়ে এসে
রাঙিয়ে দিয়ে যায় আমার বৈধব্যের বেশ
মুহূর্তেই একগুচ্ছ দোলনচাঁপার সুগন্ধ
ভার্টিক্যাল পর্দা গলে লেপ্টে থাকে
চর্চিত চন্দনের রূপান্তরে
কৃত্রিম ফুলদানিতে ক্ষণজন্মা সন্ধ্যামালতির আরতি
আমায় মুগ্ধ করে– আর
ভেতরে সজোরে একঝলক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে
নিঃশব্দ ঝুম বৃষ্টি নামে অতলে ……!
বিমূর্ত রাতে বৃষ্টি এলো
পারদ নামে দ্রুত
প্রলাপ বকে শরীর জ্বরে
হৃৎপিণ্ডে সর্বনাশের ডাক
রাতের ফিস ফিস শব্দে
পাতারা সবুজ লুকায়
সময়ের দিকে গাছ হাঁটে
বাউল বাতাসে ঝড়
বৃষ্টি নামায় ঘ্রাণে
শালবনে কামিনী ভেজে
প্রাচীন সম্মোহনে উর্বর মৃত্তিকা
মাধুরী আড়মোড়া ভেঙে
কেয়া বা যুঁথী হয়ে ফোটে ।