১৪ মে কবি আসমা অধরার জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় জন্মতিথির শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
তোমার পছন্দের লাল টাঙ্গাইল শাড়ীটা
তুলে রেখেছিলাম খুব যত্ন করে
আলমিরার মাঝের তাকটায়
খুব আলগোছে স্বপ্ন বোনার মতো করে
যেনো সে স্বপ্নটাও বড় হবে !
বড় হয়ে একটা ডাগর সংসার হবে ,
সকাল থেকে সাঁঝবাতি অবধী নেই স্বপ্নের শেষ।
রাতের জন্য আবার স্বপ্নের ভিন্নতায় আমি নিজেই অবাক !
কেবলি মনে হতো এক বয়াম জোনাকী ধরে এনে
ঝুলিয়ে দেব বিছানার মাঝ বরাবর উপরে ফ্যানের সাথে ,
রাতের বেলা সিলিংটা হবে আকাশ আর
জোনাকীগুলো মিটমিটে তারা আকাশে,
জ্বলবে আবার নিভবে যেন নক্ষত্রের রাতে তুমি আমি !
আজ সেই শাড়ীটায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছি জানো ?
কিছু অমূলক সন্দেহ অক্লেশে আমার স্বপ্ন সংসারে লাগায় আগুন ।
এখন আমার সেই সাদার মধ্যে কালো ছাপার সুতী শাড়ীটাই পছন্দ !
তুমি গেছ চলে, জীবন হারিয়েছে রং
আজ কেবলি নিজেকে সাদাকালো বিধবা মনে হয়…
দেখা হয়নি ফুটফুটে জোছনায় একটা পাহাড়
আর তার ওপরে ঝাপসা দিগন্ত
বাতাস মাতাল করা মহুয়ার গন্ধ !
হয়নি তোমার সংসারে সাঁঝবাতি,
তার আগেই তাল কাটে জীবন
এভাবেই নাহয় চলুক আমরন ।
দুঃস্বপ্নে শেষরাত
অক্ষ বলো আর কক্ষপথ
আমি তো ঠায় দাঁড়িয়ে আছি
সেই আগের যায়গাতেই।
তবে কি আবর্তনের নিয়মে
এসেছে বিশাল পরিবর্তন ?
অথবা বদলে গেছে মহাকাশ !
তবে কেনো এ অবিশ্বাস
ভেবে ভেবে চমকে উঠি আমি
শেষ রাতের সেই স্বপ্নটাই
সত্যি হলো কি তবে ?
দেখেছিলাম,
জানালায় বসে থাকে একটা দাঁড়কাক
আর ছাদের কার্নিশে একটা শকুন !!
বার্ন দা ব্ল্যাঙ্কেট (কাঁথায় আগুন)
তুই কি জানিস
প্রিয় মথের
অন্তঃ দহন
ব্যাপক পোড়ন
বানায় রেশম
ক্রমেই শিল্পিত প্রজাপতি…
এক আকাশেই
ওড়াউড়ি
বাউল বাতাস
জড়াজড়ি
ক্ষতি কি বলো
এবারে যদি ছিটকে পড়ি…
অসুখের সুখ
ক্লান্ত চরন
হৃদয় ক্ষরণ
একটা তীরেই
এপার ওপার
আর কতদিন লাইফ সাপোর্ট…
কাছ থেকে ,
খুব কাছ থেকে ,
মরন সইছি
মরন জপছি
মরন দেখছি
উন্মুখ নিদাঘ এর মতো…
তাঁর চারুলতা ও প্রয়াণ জিজ্ঞাসা
(১)
উদ্বেলতা যদিও সহজ হয় না কখনো,
তিমিরে সাতটি তারা জ্বলেনি তখনো।
আশাতুর প্রাণে যেন দ্বিধান্বিত মন,
একলা আকাশে তারাদের নিশ্চুপ রোদন।
বল্গাহীন ঘোড়ার পিঠে সওয়ার আঁধার,
নিখোঁজ চাঁদের আলোর দেখা নেই আর।
শিয়রে চেপে থাকে স্তুপ স্মৃতিকথা,
তবুও বুকের মাঝে বিষ, শ্বাসে ব্যথা।
সে এলেই নিভে যায় ঘোর গহন চাঁদ,
হয় না দেখা তার মুখে খেলে যাওয়া রাত।
তবুও আজ জোছনা জড়িও আঙ্গুলে তোমার
যে আঙ্গুলে বেজেই চলে জীবন সেতার।
(২)
টেরাকোটা নিঃশব্দে দাগ কেটে চলে মাইলে,
ধুলোয় গড়াগড়ি হৃদয়ে ঘন্টা বাজায় মেঘ
আর দু’ ঠোঁটের উপর তর্জনী চেপে বসে দৃঢ়তায়;
দুঃখ আর কষ্টের মাঝে ব্যবধান কি জানো?
রক্তের সাথে শিমুলের ফুল যায়?
ঘৃণার সাথে বিতৃষ্ণা মেশায় কেন?
মন সমুদ্দুর দক্ষিণে কেন ধায়?
(৩)
নিবিড়ে নিস্তব্ধ স্বাগতা নীলিমার নিচে
বয়ে যাওয়া মাস দিন ক্ষণ পলে পলে;
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া সময়ে এখনো কেমন
ছেঁড়া বটের পাতায় লিখে ভাসিয়ে দেওয়া
নামখানি বারবার ফিরে আসে কূলে।
বয়ে যাওয়া দিনের পর দিনে
সময়ও কেমন ক্ষমাহীন হয় ওঠে।
তবুও গতির আহ্নিকে বার্ষিকে
স্হবির হয়েই থাকে রাত্রির নিয়তি;
দহনে দাহনে আরো বিস্তীর্ণ হয় পৃথিবী,
বিজ্ঞান হিসেবের ক্রমশঃ চুপসে যাওয়া ভুলে।
প্রজাপতির রোদ মাখা হুটোপুটি গায়
পিছলে যাওয়া আলোয়, আঁধার হারায়
তবুও প্রণয় কেন প্রয়াণ যে হয়?
ধুসর হলুদ আলো খুঁজে নেয় সূর্যগ্রহণ;
পৃথিবীর হৃদয় চিরে দেখ একবার সহস্র সাধনায়
আপন প্রেম নিঃশেষে, মানবেরই ধরেছে তুলে।
(৪)
যত্ন করে তুলে রাখব না অনুভব
শ্বাস ফেলতে না পারা কাজের ক্ষণ
কৃষ্ণচূড়ার দল ফাঁস নিয়ে মরে যাক
কারো নেই ফুরসতে চেয়ে থাকার মন
আমার বিষণ্ন মনে নষ্ট স্পষ্ট পলে
দূরে থাকা স্বজন তবুও কষ্ট কথা বলে
আবছায়া কমলকান্তি সৌম্য দর্শন
নিশ্চিন্ত অধিকারে সমস্ত হৃদয় অর্পণ
তবুও সে জন বোঝে নাই,
সেই একশ’ আট বিঘা বুকের জমিনে
তার জন্যই কৃষ্ণচূড়ার ব্যাপক রোপন।