| 26 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

অসমিয়া কবি অর্চনা পূজারী’র অনুবাদ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

এক সময় অসমের নাম ‘কামরূপ’ ছিল। আরও প্রচীনকালে কামরূপ ছিল ‘প্রাগজ্যোতিষ’ নামে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত। এর অভ্যন্তরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ, বরাক উপত্যকা এবং উত্তর কাছাড় পর্বতমালা। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় রাজ্য দ্বারা অসম বেষ্টিত এবং অসম সহ প্রতিটি রাজ্যই উত্তরবঙ্গের একটি সংকীর্ণ অংশ দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া অসমের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে। চা, রেশম, পেট্রোলিয়াম এবং জীববৈচিত্রের জন্য অসম বিখ্যাত। অসমিয়াদের প্রধান উৎসব হলো বিহু। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অসমিয়ারা বিহু পালন করে। বিহু তিনটি- ব’হাগ (রঙালি) বিহু, মাঘ (ভোগালী) বিহু আর কাতি (কঙালি) বিহু। অসমীয়া সাহিত্য অন্য সমস্ত ভাষার মতো অসংখ্য উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ এবং অন্য অন্য বিষয়ক গ্রন্থে পূর্ণ। অসমীয়া সাহিত্য ভাষাটির বর্তমানের সাহিত্য সম্ভার ছাড়াও এর ক্রমবিবর্তনের সময়ে সৃষ্টি হওয়া পুরানো অসংখ্য সাহিত্যের সম্ভারে পরিপূর্ণ, যে ধারার আরম্ভ ৯ম-১০ম শতকের চর্যাপদ থেকে আরম্ভ হয়েছিল বলে ধরা হয়। অজিৎ বরুয়া, অনন্ত কন্দলী,অনিরুদ্ধ কায়স্থ, অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী, আনন্দরাম বরুয়া , ইমরান শাহ, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য, জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা, ভোলানাথ দাস, মফিজুদ্দিন আহমদ হাজারিকা, মহেন্দ্র বরা, মাধবদেব, রবীন্দ্র সরকার, রমাকান্ত চৌধুরী, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা, স্নেহ দেবী, হরিবর বিপ্র, হীরেন ভট্টাচার্য সহ আরো অনেক অসমীয়া ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি আছেন। এই সময়ে অসমীয়াতে কি রকম কবিতা লেখা হচ্ছে কারা লিখছেন, এই সময়ের কবি অর্চনা পূজারীর কবিতা নিয়েই আজকের আযোজন। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন অনুবাদক বাসুদেব দাস।


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Archana Pujari
 

কবি অর্চনা পূজারী ১৯৬১ সনে অসমের যোরহাটে জন্ম গ্রহন করেন।আর্য্য বিদ্যাপীঠ কলেজের অসমিয়া বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।অসমিয়া সাহিত্যের একজন প্রতিষ্ঠিত কবি।প্রকাশিত কাব্য সংকলন সাতটি,সম্পাদিত গ্রন্থ ছয়টি।ভারতের প্রায় সমস্ত প্রান্তীয় ভাষায় কবির কবিতা অনূদিত হওয়া ছাড়াও ফরাসি এবং উজবেক ভাষাতেও কবির কবিতা অনূদিত হয়েছে।সাহিত্য আকাদেমি আয়োজিত বিভিন্ন কবিসম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন।


 
কোণারক
এক প্রাচীন মহানগরের মধ্য দিয়ে
আমি প্রাচীন পথিক
শিল্পীত সেই তন্ময়তা
ধীরে ধীরে অবগাহন করে দুচোখে বাঙময় হয়ে উঠে
অশান্ত এক ক্ষুধার তাড়নায়
সময়কে আমি ধরে রাখতে চাই
স্থপতি আমাকে ডাকে এসো
পূরণ কর ইপ্সিত বাসনা
দেবদাসীর নৃত্যরতা ভঙ্গিতে
 
নূপুরের রুনুঝুনু
জীবনের শিল্পালয়
চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক আমার সামনে
মেলে ধরে ইতিহাসের প্রতিটি পাতা
আঃ আমি কোণারকের শিলের পরে শিল
হৃদয়ে রিণি-রিণি ধ্বনি
নমঃ সবিত্রে … …
এই আদিত্য
এই দিবাকর
এইমাত্র অবতরণ হল রথ
মাটি খামচে রয়েছে রথের শরীর
আমি প্রাচীন বাসিন্দা
রাজা এসেছে সাদা ঘোড়ার কদমে
শব্দে পাথর জেগে উঠছে
নর্তকীর নাচের মুদ্রায় খসে পড়ছে বাজু
হর্ষধ্বনি হচ্ছে 
ধুলায় ধূসরিত সাগর পারে সূর্য উত্থিত হয়েছে
আশ্চর্য সমাচ্ছন্ন সময়
বিনত হয়ে স্মরণ করি
ভাস্কর
আশ্চর্য তার ভাস্কর্য
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
বুদ্ধ আবার আসবে
নদী যার পরিচয়
বালির নিচে হারিয়ে যাওয়া
সরস্বতী
অজান্তে একবারও জিজ্ঞেস করলাম না
তোমার ঠিকানা
তোমার গভীরতা মুগ্ধ করার সময়
ঢেউ গুণে গুণে
যুগে যুগে আমরা সীতাকে ডেকেছিলাম
‘মা’বলে
আর কণ্ঠ শুকিয়ে যাওয়ায়
গভীর থেকে তুলে এনেছিলাম
অঞ্জলি ভরা সঞ্জীবনী
সূর্য নিভে যাবার শব্দে
খসে পড়েছিল যেদিন
সেদিনও
তোমার পাখি কাপে
উপুড় করে দিয়েছিল
একটি জমিয়ে রাখা কথা
নিজের দীপ নিজেই জ্বালাবে
আলো-আঁধারি পথে
পা টিপে টিপে যাবে
টীকাঃ পাখি কাপ –পাখির পালকের কলম।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
 
 
অগতানুগতিক একদিন
ঐ গির্জার পেছনে গিয়ে
একটা কাঠে হেলান দিয়ে
যীশু হাত মেলে উড়তে চাইছে
চোখে ধরেছে মোমের আলো
এবং প্রার্থনার শব্দগুলির অসমান
বুজে যেতে চাওয়া চোখগুলি জোর করে মেলে
এখনই যদি ক্রুশবিদ্ধ দুহাতে ডানা গজায়
একটা পথ শিকড় মেলে নীলার বুকে
ঈশ্বরও অসন্তুষ্ট
মন্দিরের কপাট খুলে বেরিয়ে গেছে
দাঁড়িয়ে আছে বিশাল জলের সিঁড়িতে
এখনই জলের গভীরে প্রবেশ করবে
জলকেলি করবে
সবাইকে মুক্ত করতে গিয়ে নিজে আর পারে না
মন্দিরে শ্বাসরুদ্ধ হবে
তাই সে বলল-আমি যাই
ভোরের আজানের সঙ্গে আল্লা উঠে এল
আকাশের সিঁড়ি দিয়ে
ইস বাতাসে শব্দগুলি মুক্ত হয়ে পড়েছে
নির্জনে কোথাও একা বসতে ইচ্ছা করে
এই যে দেখতে পেলাম দিগ্বলয়
প্রত্যেকেই মনের তূলিকায় অল্প আলো তুলে নিয়েছে
প্রত্যেকেই কিছু শব্দের আকার স্পর্শ করছে
ক্যানভাসে ‘আত্মা্র ছবি একটা এই হবে
রঙের পরিধি ছুঁয়ে ছুঁয়ে
জলের রঙ উদ্বেল
মৃত্যুর হাত থেকে ছোঁ মেরে তুলে এনেছে
একটি রূপালি শব্দ
সবাই ফিরে তাকাচ্ছে
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 

আরো পড়ুন: নীলিম কুমারের কবিতা


ঘর
তোমার ঘর
আমারও একটি ঘর
এসো এক সঙ্গে বানাই
একই ঘর
একই রুয়া
সূর্যকে আপন করে বাতাস
সবুজের আঁচল ধরে
তোমার ঘরেও স্বপ্ন দেখে কি
গহীন বনের
ঝিল্লির ডাকে জাগে দুপুর
আমার শিশুটি বালি দিয়ে তৈ্রি করে
তারও একটি ঘর
ভাঙে,বারবার বালির সাগরে
হেসে হেসে পাতে সখি
সোনালি পামে ইটের দেওয়াল উঠেছে
সূর্যের দিকে মুখ করে
সবুজগুলি পাথর হয়ে উঠেছে
শব্দ নিঃশব্দের সঙ্গে ফাঁসি কাঠে ঝুলছে
অঙ্কুর জাগিয়ে
নরার বাঁশি বাজাও
রাখাল ছেলেটি এসে বিশ্রাম নিচ্ছে
ঠোঁট দুটিতে বনগীতের কলি
নরা পুড়ে ছাই হল
অরণ্য শোষণ করে নিল তার দুটি পা
কুয়াশার বুকে জ্যোৎস্না গলে যায়
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
ভায়োলিনের বাদক
ভায়োলিনটির বুকে হাজারজনের দুঃখ
বিলাপ করতে থাকে রাত থেকে সকাল
অহির ভৈরব
সেই দুঃখে কাতর হয়ে পড়ে ঘরের ভেতর
কেঁপে উঠে থরথর
আর নিজের অজান্তেই খসে পড়ে
ঘরের টই
সুযোগ বুঝে বাতাস
সেই সুর চুরি করে নিয়ে
মেলে ধরে মুক্ত আকাশে
শোকের নক্মা দেখে
রাতে ফোঁটা ফুলগুলি
একটা দুটো পাপড়ি খসে
নীচে আর জায়গা নেই
ভালোবাসা কেন কাঁদায়
কোমল শিশির
সেদিনের রাতটা কুশল বাদক
উৎসর্গ করে
ভায়োলিনটাকে
 
 
 
 
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
 
 
 
 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত