অনুবাদ কবিতা: রুদ্র সিংহ মটকের অসমিয়া কবিতা
১৯৫৯ সনে জন্ম। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সাহসী মানুহর হাতত’,’কবিতার পৃথিবী ক’ত’, ‘ভালপোৱার জলফাইরঙী পৃথিবী’,’আর্টগীল্ডত সন্ধ্যা’ এবং ‘শঙ্খবোর সারে আছে’। যোরহাট সাহিত্য সভার ‘বকুল বন বঁটা’এবং অসম কবিসমাজ কর্তৃক অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী বঁটা দ্বারা সম্মানিত। স্টেট ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।
আমার হৃদয়ের না শুকানো ঘা গুলিতে ছড়িয়ে আছে তোমার
আঙ্গুলের রোদ
রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে কোন পথে আস
তুমি আমার যন্ত্রণার আকাশ-অনুবাদ
তোমার দেহের উজ্জ্বলতা আমার দুঃখের গুণগুণানি
তোমার আত্মার ঢেউগুলি
ভোরের চোখ মেলা সূর্য এবং হৃদয়কে যুক্ত করে
মেঘ এবং মাটিকে
যুক্ত করে
নীলাভ তারার আভরণ খুলে
জ্যোৎস্নার নদীতে প্রতি রাতে স্নান কর তুমি
তোমার নিঃশ্বাসের সাগরে উড়ে বেড়ানো ঈগলের
পাখা
তুমি যে মোহময় পৃথিবীর প্রথম নারী
আমার লাঙলের ফলায় আশ্চর্য চমকে উঠা
মাটির গভীরে
পুনরায় বেঁহুশ রাতের ঘড়ি
মহানাগরিক জীবন। শৌখিন জীবন
এষণা।
নীলরঙের সম্রাট আ্যাপার্টমেন্ট | ফোর্থ ফ্লোর। ওপরে
আর কিছু নেই। মেঘ-চাঁদ,হাসতে থাকা উজ্জ্বল তারা নেই।
হরলুকি আকাশ… ….
বন্ধ দরজা । বাতাস নেই। রোদ নেই। নিরুদ্বিগ্ন জীবন।
স্বার্থ না থাকলে নিষিদ্ধ সাক্ষাৎ। নিষিদ্ধ
কথা-বার্তা,কুশল-বিনিময়। কেবল
অহ্ঙ্কার,ধোঁয়ার কুণ্ডলির মতো অযুত খেয়াল।
নিজের সঙ্গেই জেদ-তর্ক | নিজের সঙ্গেই যুদ্ধ। শেষে
অশ্রুহীন রক্তপাতহীন সহজ আত্মসমর্পণ |
কী ভীষণ ব্যস্ত!
মহানাগরিক শৌখিন জীবন।
মায়াবী রাতের চোখে অভিমানী ফ্ল্যাশলাইট।
রাউণ্ড টেবিলে
রোষ্ট পিগ চিকেন ফ্রাই। সুগন্ধি কাজুর ডিশ।
ফুল-কাটা গ্লাসে লালায় ভেজা ব্ল্যাক ডগ। ব্র্যাণ্ডেড শ্যাম্পেন।
অদ্ভুত মধ্যবিত্ত মেজাজ। একই সেই
রাতের ইতিহাস। … তাসের সাহেব | তাসের
গোলাম।
বমি-বিষ্ঠা-মৈথুন। পুনরায় বমি।
মখমলের বিছানায় অতৃপ্ত মেমসাহেব।
মোজাইক করা মেঝেতে
ছিটকে পরা ভাঙ্গা কাচের ক্রোধ।
টলমল পৃথিবী । চাঁদবিহীন আকাশবিহীন ক্লীব
অন্ধকার
টীকা-
হরলুকি -অদৃশ্য অবস্থা
আরো পড়ুন: সৈয়দ পারভিজ হোসেনের অসমিয়া কবিতা
বিপ্লবের বীজগণিত না বুঝলে
আমাদের উপলদ্ধি করতে খুবই দেরি হল
লাল মেঘ থেকে যেমন বৃষ্টিপাত হয় না
বন্দুক হাতে নিলেও
বিপ্লব হয় না
স্টেনগান গর্জে উঠলেও পরিবর্তিত হয় না ইতিহাস
সময়ের কুটিল স্রোত
শ্রেণিদ্বন্দ্বের জটিল স্বরূপ না চিনলে
বন্দুকের গুলিগুলি অনেক সময়
বুকের উদ্দেশ্যে ফিরে আসে
শকুন পড়ে আত্মীয় স্বজনের ঘরের চালে,কাক হাসে
গণ বিপ্লবের বর্ণাঢ্য বীজগণিত
না বুঝলে
হাতের স্টেনগানই
ছিন্নভিন্ন করতে পারে
দীর্ঘদিন লালিত স্বাধীনতার গান
ঢেকে ফেলতে পারে প্রতি বিপ্লবের কালো ধোঁয়া
আকাঙ্খিত বিপ্লবের প্রথম শ্বাস
আমার মানুষের মুক্ত আকাশ
আমার কবিতার নবজন্ম
নরক কোথায় আমি কোনোদিন প্রশ্ন করিনি
স্বর্গের সোণালি দরজা কোথায়,তার খোজেও
কোনোদিন আমি ব্যাকুল হই নি।
স্বপ্ন স্মৃতি আমার প্রিয় নারী,নদী জ্যোৎস্না সমস্ত হারিয়েও
বেঁচে আছি একা
সিজু-কাঁইট অন্ধকার ঘিরে ধরেছে দেহ মন আমার সমস্ত সত্তা
চাঁদ সূর্য এবং নিশ্বাসের নীলাভ আকাশ
মৃত্যুর কথা ভাবিনি
নরকের শয়তানদের ভয়ও আমাকে তিলমাত্র
আতঙ্কিত করেনি কোনোদিন
স্বপ্ন হারিয়েও আমি সন্ধান করেছি নতুন স্বপ্পের
ঝরা পাতায় সকালের শিশিরের আঙ্গুলের স্পর্শ
প্রেম হারিয়েও হিংস্র কিম্বা উদাসীন হইনি আমি
বাগিচার
সদ্যপ্রস্ফুটিত ক্রিসেনথেমাম অথবা অনাঘ্রাত
গোলাপের রঙিণ ঠোটে
সন্ধান করেছি নতুন প্রেমের খতু সৌন্দর্যের আবাহনী
মদিরা নয়,সারাটা জীবন
কেবল বিষপান করেছি নীলকণ্ঠের মতো
আঘাতের পরে সহেছি আঘাত ,যন্ত্রণার নীরব
চিৎকার,নিঃসঙ্গতার অভিশাপ
আমাকে উপহাস করা আমার কুটিল নিয়তি
আর
ছদ্মবেশী মৃত্যুকে করাঘাত করেছি
আমার প্রজ্বলিত প্রজ্ঞায়
রাতের বুকে জ্বলে ওঠা নীলরঙের
হাজার প্রদীপে
কান পেতে শুনেছি গাছে নীড় বাঁধা পাখিদের হৃদয়ের
গান
লবনাক্ত অশ্রুর সাগরেও
আমি উন্মোচিত হতে দেখেছি জীবনের
অন্যরূপ,জোয়ারের বসন্ত ,প্রাণে প্রাণে
রোদের ফুল,রোদের শিল্প
ইস্পাত এবং যৌবনের উন্মীলিত স্বপ্ন
নারী এবং নদীকে আজন্ম ভালোবেসেও আমি
দূরের বন্দরের দিকে
পা বাড়িয়েছি জ্যোৎস্নাবিহীন এই শেষ রাতে
আমি যে চির উদগ্রীব
প্রাণ ভরে
দেখতে চাই আমার কবিতার নবজন্ম,কুয়াশার
শিলের আস্তরণ ভেঙ্গে সুমুদ্রের বুকে
রক্তিম সুর্যোদয়।
কবিতার ভালোবাসা
কী সবুজ হৃদয়ের এই আশা ,ভোরের শিশিরের মতো
স্বচ্ছ,উজ্জ্বল
আশা যদি না থাকে বুকে, আমি হাতের
তালুতে তুলে নেব
জ্বলে যাওয়া আশার একমুঠো তামারঙের ছাই
আর যদি জীবনও না থাকে, আমি বুকে
তুলে নেব ধবধবে সাদা আমার কফিন
আর একদিন যদি কবিতাও না থাকে
এই পৃথিবীতে
আমি আমার হৃদয়ে ঢেকে রাখব অল্প কুয়াশা
আর কিছুটা
কবিতা রঙের আকাশের নিঃশ্বাস

অনুবাদক