Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Assamese poetry by dr pranay phukan

অনুবাদ কবিতা: প্রণয় ফুকনের অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস

Reading Time: 3 minutes

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, dr pranoy phukan১৯৬২ সনে কবি প্রণয় ফুকনের জন্ম হয়।‘মোরে শপথ টেলিফোন নকরিবা’ এবং ‘এখন্তেক নিজর সতে’ কবির অন্যতম কাব্যসঙ্কলন। পেশায় চিকিৎসক ডাঃফুকনের কবিতা গ্রন্থ ‘মহাভারত,প্রেম আরু যন্ত্রণার পদাবলী’ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা পত্রের জন্য ‘এশিয়া ওসেনিয়া’পুরস্কারে সম্মানিত হন। কবি প্রণয় ফুকনের বাড়ি শিবসাগরের দিখৌমুখে। অসম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক।



 

দেশ বিষয়ক তিনটি কাহিনি

 

(এক)

রাজসিক ভোজনের শেষে

রানির সুখনিদ্রার প্রয়োজন

 

বাইরে কোকিল কেতেকির  ডাক,

পেঁচার হুট

শিয়ালের হুক্কাহুয়া,

কুকুরের ঘেউ ঘেউ।

 

‘ অসহ্য অসহ্য এসব অশান্তি’

ভীষণ বিরক্ত  রানি।

 

‘ সেনাপতি, সবাইকে বধ করে ফেল

এই মুহূর্তে।’

রাজার আদেশ।

কথা মতো কাজ।

 

অদূরে তর্জন-গর্জনে

একটি পাহাড়িয়া নদী।

আকাশে আরম্ভ হয়েছে

বিদ্যুতের গর্জন।

 

‘ মহারাজ

এসব কী করব এখন?’

বিমূঢ় সেনাপতি।

 

নিরুত্তর নির্বীজ রাজা।

 

(দুই)

তুমি বলেছিলে,

‘ সত্যের সদায় জয়।’

মেনে নিয়েছিলাম নির্দ্বিধায়।

 

তুমি বলেছিলে,

‘ অহিংসা পরম ধর্ম।’

মেনে চললাম নিঃসংকোচে।

 

তুমি বলেছিলে,

‘ নম্রতা মানুষের সম্পদ।’

মেনে চললাম নির্বিবাদে।

 

গ্রামের বৈঠকখানা ঘরে

তোমার ছবির সঙ্গে

ফ্রেমে সাজানো ছিল

মা পিসির সেইসব হাতের কাজ।

 

পঞ্চাশ পার হল আমার

একটি কথাও যদি

সত্য প্রমাণিত হত।

 

এখন অবশ্য,

মা পিসিও নেই, তুমিও নেই

ফ্রেম করা ফোটোগুলির ও 

কোনো অস্তিত্ব নেই।

 

একবার তোমার সঙ্গে দেখা হলে

চরণ দুটি জড়িয়ে জিজ্ঞেস করতাম,

এইসব অলীক স্বপ্ন

কেন দেখেছিলে হে উলঙ্গ ফকির?’

 

(তিন)

 

আমার একটি ঘর আছে,

আমার একটি দেশ আছে,

 

আমি ঘর ভালোবাসি,

আমি দেশ ও ভালোবাসি।

 

দীর্ঘদিন ধরে

আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি

দেশের ভেতরে ঘর,

ঘরের ভেতরে দেশ।

 

আমি পাইনি।

 

দেশকে আমি ভালোবাসি,

দেশ আমাকে ভালোবাসে না।

দেশ তাদের ভালোবাসে

যে দেশকে ভালোবাসে না।

 

একপেশে প্রেমে আমি

ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আজীবন।

 



 

স্মৃতির ভেতরে তুমি

 

সাঁতার না জেনেই নেমে পড়েছিলাম

একটি গভীর বিলে

একটি পদ্মফুলের লোভে।

 

শৈশবের সেই অনাবিল অনুভূতিতেই

যৌবনে আবিষ্কার করেছিলাম তোমাকে

যৌবনের কোনো এক অসতর্ক মুহূর্তে।

 

আমার দুরন্ত নিবেদন,

তোমার অনুচ্চারিত আশ্বাস।

আমার সমুদ্র প্রত্যাশা,

তোমার সন্তর্পন সমর্পণ।

আমার তৃষ্ণাতুর আবেগ,

তোমার বিস্তীর্ণ অবস্থিতি।

আমার পাপ পুণ্য বিচ্ছেদ বিরহ,

তোমার সান্নিধ্য শরীরী ব্যঞ্জনা।

অভিসার অবিনাশী অস্তিত্ব,

আমার কবিতার চিরন্তন স্থাপত্য…

 

এভাবেই আজীবন

স্মৃতির ভেতরে তুমি

অতি ব্যক্তিগত একটি নিষিদ্ধ উপন্যাস…

 



 

 

লাইনেই আছি

 

লাইনেই আছি

নিয়ম ভাঙ্গিনি।

 

রেশনের দোকানে সারি পেতে দাঁড়িয়েছি

পাঁচশো টাকার আশায় 

ব্যাংকের বারান্দায় লাইনেই আছি।

 

লাইনেই আছি

সারি পেতে ভোট দিয়েছি,

অধিকার সাব্যস্ত করেছি।

 

জ্বর এবং কাশি হয়েছে,

কোভিদ টেস্টের জন্য সারি পেতে  দাঁড়িয়েছি।

নিয়ম ভাঙ্গিনি।

 

লাইনেই আছি

ভ্যাকসিন নেই, ফিরে এসেছি।

নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট পেয়েছি,

অক্সিজেন নেই

লাইনেই আছি।

 

মর্গে জায়গা নেই

সারি পেতে বারান্দায় পড়ে রয়েছি

নিয়ম ভাঙ্গিনি।

 

জ্বালানোর জন্য খড়ি নেই, টাকা নেই

পবিত্র নদীর বুকে ভেসে গিয়েছি

লাইনেই আছি।

 

শ্মশানে খালি নেই

আগে আর ও তিনটি বডি রয়েছে

লাইনেই আছি।

 

নিয়ম ভাঙ্গিনি

লাইনেই আছি।

 



আরো পড়ুন: জিতেন নাথের অসমিয়া কবিতা


 

 

প্রতিবার অন্নের প্রাকমুহূর্তে

 

নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করায় আপত্তি কোথায়

সেই সব মানুষের কথা?

প্রতিবার অন্নের প্রাকমুহূর্তে

স্মরণ করা উচিত যার মুখ।

 

সেইসব শীর্ণদেহ, রোদে পোড়া মুখ

অনাবৃষ্টি অতিবৃষ্টি তুফানেও যারা

নির্বিকার ভাবে গেয়ে যায় সৃষ্টির গান

মাটি যার ত্রাণ, মাটিই প্রাণ…

 

যারা ঘাম এবং রক্তের কালি দিয়ে

মাটির বুকে লেখে সবুজ কবিতা,

রাজনীতিতে কূটনীতিতে যারা নিস্পৃহ,

কিন্তু শাসনের নামে শোষিত  হতে বাধ্য হয় না।

 

মানুষগুলির ক্ষুধা আছে, শোক আছে,

আছে অভিমান অসম্মান।

অধিকার চাইলে কোনো একজন বলে উঠে

টেররিস্ট,দেশদ্রোহী।

যার অন্যের মতো থাকা নাকি অনুচিত

সুদৃশ্য বাসগৃহ অথবা বিলাসী গাড়ি।

 

কখন ও অধিকার চেয়ে 

ক্রোধিত দেবতার মত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে

এইসব জীবনাভিসারী।

কেঁপে উঠে রাজপথ,

কেঁপে ওঠে কর্পোরেট, কেঁপে ওঠে রাজদরবার।

 

অনুভব করে কে

এই সব মানুষের যাপিত যন্ত্রণা?

পতাকার নিচে পদদলিত স্বদেশপ্রেমিক।

প্রতিবার অন্নের প্রাকমুহূর্তে

মনে করি এসো

সেই সব স্বপ্ন মুগ্ধ মানুষের মুখ,

তাদের বেঁচে থাকতে দিই

সুখের সম্মানে।

 

 

জীবনের উপান্তে আজ
                                                                                                                                           
 
যেদিন আরম্ভ হয়েছিল ঈষৎ প্রশ্রয়,
 
সেদিন থেকে মূর্ত হয়ে উঠেছিলাম আমি।
 
 
 
দস্যুতাতো কম করিনি,
 
ব্যাকুল স্থপতির মতো
 
তোমাকে সাজাব বলে
 
কতবার ভাঙলাম নিজেকে।
 
   
 
কতদিন রাখলাম তোমার বুকে  
 
আমার এই তৃষিত মুখ,
 
কত মায়াবী রাত কত কথকতা,
 
উদ্দাম ঠোঁটে পূর্ণ করেছিলে কতবার
 
নিবিড় দুরন্ত ইচ্ছা।
 
 
 
তোমার স্নিগ্ধতায় উজ্জীবিত হয়ে
 
কাটালাম কত ঋতু,কত অভিন্ন প্রহর।
 
উপভোগ করলাম কত মোহিনী মুহূর্ত
 
কত অপ্রীতি,অভিনব শাণিত ক্রোধ।
 
আমার বাইরে কে বুঝতে পারবে
 
তোমার অভিলাষ,বাসন্তী অসুখ।
 
 
 
 
    
 
         
 
   

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>