অনুবাদ কবিতা: জিতেন নাথের অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস
কবি জিতেন নাথ ১৯৬৮ সনে জন্মগ্রহণ করেন। ডিমৌ হাইস্কুলে শিক্ষকতায় রত। একমাত্র প্রকাশিত কাব্য সংকলন ‘পানী যুঁৱলীর ঘর’।অসমের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখে থাকেন। একজন গীতিকার হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে।
একটি রহস্যের আবর্তে
একটি রহস্যের আবর্তে
আমরা বিচরণ করি
নিজেকে খুঁজি অনন্তকাল
আদি-অন্তহীন
জীবন অবধি
এই যাত্রা
শেষ কোথায়…?
সব কিছুই শেষ যেখানে
সেখান থেকেই পুনরায় আরম্ভ!
সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-সংহার
(যেন)ভাঙতে না পারা রহস্য
পার নেই অপার
আত্মার অন্ধকার যে
জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে
এই নিরন্তর অন্বেষণ
সেই পথ মায়ায় ছায়াচ্ছন্ন
ধোঁয়াশা-কুয়াশা
বৃত্তের বাহু ভেদি
আসা আর যাওয়ার
খোলা থাকে একটি দরজা –
গভীর আত্মোপলদ্ধির
যেখানে একদিক আলো অন্যদিক অন্ধকার
বর্ষার এক ঝাঁক বৃষ্টি হয়ে
তুমি বর্ষার প্রাচুর্যে কানায় কানায় ভরে উঠেছ
তোমার বুকে বর্ষার গর্জন
চোখে বিজলির লুকোচুরি
দুপায়ে তোমার বৃষ্টির রুণু-ঝুনু
নূপুরের ছন্দ
তুমি বর্ষার এক ঝাঁক বৃষ্টি হয়ে
আমাকে ভিজিয়ে ফেল
স্নাত হতে দাও
তোমার অতি কোমল বৃষ্টিতে
এলেও আসুক বুকের দুপার উপচে
ভরা বর্ষার বান
তুমি বর্ষার অনেক সম্ভাবনা
ঝাঁকে ঝাঁকে বৃষ্টি
আমাকে ভিজিয়ে ফেল
গায়ে লাঙলের ফলার দাগ রেখে বয়ে যাক
বৃষ্টির অবিচ্ছিন্ন ধারা
তোমার বৃষ্টির ভিজে উষ্ণতায়
উর্বর হোক আমার বুকের মাঠ
দ্রুত বেড়ে উঠুক আকাঙ্খার
শস্য সোনালি স্বপ্ন…
গতরাতে আমি একটি স্বপ্ন দেখলাম
গতরাতে আমি একটি স্বপ্ন দেখলাম
কেরোসিনের মাটির প্রদীপের আলোতে
মেঝে আলো করা বিকেল বেলার একটি ঘর
একটাই প্রদীপ –একই আলোতে
ধাড়ি পেতে মাটির মেঝেতে
ছেলে মেয়েরা শ্লেট-পেন্সিল নিয়ে পড়ত
পাঠশালার পাঠ
কিছুটা দূরে পিতা পিঁড়িতে বসে
কাঠি চেঁছে চেঁছে দেখত
ওদের অলেখ লেখ
চোঙা দিয়ে ফুঁ দিয়ে দিয়ে
ভাতের হাড়িতে জাল দিতে থাকা মা
বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঝিমুতে দেখে
সজোরে ধমক দেওয়ায়
ঘুমের মধ্যেই আমি চমকে উঠলাম
ঘুমের আবেশ লাগা
দুচোখের দূর সীমানায়
প্রদীপটার ক্ষীণ আলো একটু
তখন জ্বলছিল
নিভু নিভু …
আরো পড়ুন: প্রয়াগ শইকীয়া’র অসমিয়া কবিতা
মাঠ যখন নিমন্ত্রণ করে বৃষ্টিকে
প্রেমের সরল আকুলতায়
মাঠ যখন
নিমন্ত্রণ করে বৃষ্টিকে
আমার বুকের আকাশ জুড়ে
দল বেঁধে একঝাঁক হাঁস উড়ে
প্রেমাস্পদের বৃষ্টি যখন
আলিঙ্গণ করে মাঠটাকে
আমার চোখের সবুজ পাপড়িতে
সম্ভাবনার সোনালি প্রদীপ জ্বলে
বৃষ্টির সুরের ঢেউয়ে নেচে নাচিয়ে
মাঠটি যখন ধারণ করে
বৃষ্টির বীর্য
আমার বুকের মধ্য দিয়ে উজিয়ে আসে
এক দল রৌদ্রস্নাত মানুষ
সবুজ স্বপ্নদ্রষ্টা
যার রক্তে ঝলমল
সোনালি শস্যের ভোরবেলা।
জ্যোৎস্নায় ভিজতে থাকা মাঠটা আমাকে ডাকে
জিতেন নাথ
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস
জ্যোৎস্নায় ভিজতে থাকা মাঠটার
কোমল মসৃণ একটা ডাক
আমাকে ডাকে
আমি শুনেছি
সেই ডাকে গভীর উপলদ্ধির আহ্বান
মায়ের মধুমাখা
যে ডাকের ছায়ায় পরিতৃপ্ত
আমাদের অতীত,বর্তমান,অনাগত ভবিষ্যৎ
জ্যোৎস্নায় ভিজতে থাকা মাঠটা
আমাকে ডাকে আমি শুনেছি –
হৃদয় আকুল করা সেই ডাকে
শস্য সোনালি গান
যে গান ছবি আঁকে সম্ভাবনার,বুক ভরিয়ে,প্রাণ জুড়ায়
ছুঁয়ে যায় আকাঙ্খার বেগবতী নদী
জ্যোৎস্নায় ভিজতে থাকা মাঠটা
আমাকে ডাকে
ফেলে আসা পদুলির স্মৃতির সুবাস নিয়ে
আমি চলে যাই
মায়া মাখানো সেই ডাকের আড়ালের
ডাক একটার খোঁজে…

অনুবাদক