
শিমূল ইউসুফ
মার্চ ২১, ১৯৫৭ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং সাত ভাই বোনদের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। তার পিতা মেহতের বিল্লাহ কমলাপুরে একজন গায়ক হিসেবে কাজ করতেন। শিমুল পাচঁ বছর বয়স থেকে গান শুরু করেন। তিনি রেডিও এবং টেলিভিশনে গান পরিবেশন করতেন এবং কচি কাঁচার মেলা নামক একটি শিশুদের গানের অনুষ্ঠানে তিনি গান গায়তে যান।[২] তিনি ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পি সি গোমেজ, আলতাপ মাহমুদ এবং আব্দুল লতিফ থেকে শাস্ত্রীয় এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত গানের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি শিশুশিল্পী হিসাবে মঞ্চে অভিনয় ও সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে শিশুশিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে তঃকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনের সম্প্রচারের প্রথম দিন শিশুশিল্পী হিসাবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটাওে যোগ দেন এবং এ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থিয়েটারের ৩৪টি নাটকে অভিনয়শিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, কোরিওগ্রাফার এবং পোশাক পরিকল্পনা, সহযোগী নির্দেশক ও পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজ করেছেন। ১৯৮১ সালে গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনকে সংগঠিত করতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। শৈশব থেকে শিমূল ইউসুফ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত এবং গণসঙ্গীতে ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পিসি গোমেজ, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, শহীদ আলতাফ মাহমুদ, শেখ লুৎফর রহমান, আব্দুল লতিফ, ওস্তাদ ইমামউদ্দীন এবং সুধীন দাসের কাছে দীর্ঘদিন তালিম নেন। তিনি আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যানিকেতন থেকে সঙ্গীতে ডিপ্লোমা লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে ডিগ্রি নিয়েছেন।
মঞ্চের ৩৩টি নাটকের ষোল শতাধিক মঞ্চায়নে সফল অভিনয় করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক: মুনতাসীর, কসাই, চর কাঁকড়া, শকুন্তলা, ফণীমনসা, কিত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, হাতহদাই, চাকা, একাত্তরের পালা, যৈবতীকন্যার মন, মার্চেন্ট অব ভেনিস, বনপাংশুল, প্রাচ্য, বিনোদিনী, ধাবমান, নষ্টনীড়, দ্য টেম্পেস্ট সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তার একক অভিনয়ের নাটক ‘বিনোদিনী’ বিশ্বনাট্য অলিম্পিকস ও আন্তর্জাতিক মনোড্রামা উৎসবে মঞ্চস্থ হয় এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
টেলিভিশন নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ঘরোয়া, পোস্টমাস্টার, গ্রন্থিকগণ কহে, নির্বাসন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৬টি চলচ্চিত্রে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা ও কণ্ঠ দান করেন। উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘আগামী’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘ঘুড্ডি’, ‘গেরিলা’ ইত্যাদি।
গণসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত এবং লালনের গান নিয়ে শিমূল ইউসুফের ৫টি একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।
শিমূল ইউসুফ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১৯৬৫ সালে পাকিস্কানের শিশুশিল্পী হিসাবে প্রেসিডেন্ট পদক, লোকনাট্যদল পদক, বাচসাস পদক, মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, রুদ্র পদক, নুরুন্নাহার সামাদ পদক, আরণ্যক দীপুস্মৃতি পদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার পদক, কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি পদক, মানবজমিন পাঠকজরিপ এবং কচিকাচা মেলার আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। বাঙলা অভিনয়রীতি বিকাশে এবং শুদ্ধ সঙ্গীতচর্চায় তার অবদানের জন্য কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনকর্তৃক তিনি ‘মঞ্চকুসুম’ উপাধিতে ভূষিত হন।
