আয়শা ঝর্নার চারটি কবিতা

Reading Time: 2 minutes

আজ ২১ আগষ্ট কবি ও অনুবাদক আয়শা ঝর্নার জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


সতীত্ব

অসংখ্য লোকের ভিড়ে কুঁকড়ে পড়ে থাকি, হাত-পা ভাঁজ করে।
এ আসে ও আসে আমার চোখ খুবলে নেয়, চক্ষুশূন্য কোটর থেকে
ঝরে রক্ত..। কেউ একজন আমার নাক খুবলে নেয় নাকছাবি খুঁজতে
যেয়ে। কেউে এসে খোঁজে আমার সতীত্ব, কেউ খোঁজে শাখাসিঁদুর।
সিঁদুর খুঁজতে যেয়ে মাথার চামড়া তুলে ফেলে। চুড়ি ভাঙলে আমার
হাতের হাঁড় বেরিয়ে আসে আমি তবু পাথর। কুঁকড়ে পড়ে থাকা বিন্দু।

অসংখ্য ছুরির আঁচড় খেয়ে মা আমাকে আঁকড়ে ধরে বুকে। আর বলে,
’মেয়ে আমার, আয় এই বুকে, নেই তোকে জঠরে আবার।’  আমি তখন,
ঠিক তখনি জেগে উঠি পাথরঘুম থেকে। গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকি মায়ের
বুকে।
মা আমার মৃত্যুকে সহজ করতে গায় ঘুমপাড়ানিয়া গান। সে গান ছড়িয়ে
পড়ে নদীর স্বচ্ছ জলে যেখানে টুপটাপ রক্ত ঝরে অবিরাম মৃত্যুনামধারী
গাছ থেকে।

জীবন ও গান

যে যেখানে থাক তোমাদের ওপর বর্ষণ হোক
আলোর, অমৃতের, জীবনের।
কেননা তুমি আমি অন্য পৃথিবী, অন্য মানুষ।
শুনি শীতঝরা পাতাদের দীর্ঘশ্বাস, বাধি
দেবতার কন্ঠস্বর, টানি অর্জুনের ধনুক ছিলা।
নগ্নতা, পরচর্চা, আজ আমারও প্রাণ নাও
গাও বৃষ্টির সুর, দাও বেদনার অগ্নিদাহ,
নাও পোড়াও এই প্রাণবাটি
জ্বালো প্রেরণার ধূপকাঠি।
রঙ ঢেলে দাও উপুড় করে
চরণ ফেলো আপন মনে একবার
যে বেড়াল বার্তা পাঠায়,
আজ তার সংকট তীব্র অতি।
দূর আরও বহুদূরে শেয়ালেরা সভায় বসেছে
‘যন্তর মন্তর ফু একটান দুইটান—
খাড়ান ভাইসব,
একপাও নড়বেন না, গলা দিয়া রক্ত উটবো!”
তিনটান। কালো কাপড় আবৃত।
চকচকে ছুরি ধড় বরাবর
দেহটি নড়েচড়ে শেষ চিৎকার—
‘দ্যাখেন ভাইসব। দুইচক্ষু খুইল্ল্যা দ্যাখেন,
গলাখান আলগা হইয়া গ্যাছে
এইবার আমার কেরামতি।’
আবরণ উন্মোচিত, বালকের হাসি।
‘যে যেহানে আছেন সিকিখান ফ্যালাইয়া যান।’
জীবনের গান। অন্ধকার বেদনার।
অন্ধকার বিদায়ের। অন্ধকার প্রেরণার।

প্রভাকর

প্রভাকরকে ডেকে বললাম দ্যাখো তো আমার শরীরের চিহ্নগুলি ঠিক
কতযুগ ধরে বয়ে চলেছি? প্রভাকর তার তীব্র চোখ ঝালিয়ে আমাকে
গুরুগম্ভীর জবাব দেয় যেদিন গৌতম তার প্রিয়াকে ছেড়ে এসেছিল
সমস্ত মেঘলোক কেঁদেছিল।
আর গৌতম তার ঋজুভঙ্গি ঠিক রেখেই অনমনীয় চিত্তকে করেছিল স্থির।
তপোবন থেমে থেমে বিলাপ করছিল যেন। প্রভাকর শুধু তুমি দেখেছিলে
কী ভীষণ নির্মোহ বোধ তার সারামুখে ছড়িয়ে পড়েছিল।

মুগ্ধভিড়

মেয়েটা হাসে এবং ব্যতিক্রম
এই যে বিশাল ঘেমো আর্দ্র ভিড়
ঝুলকালির জীবন চোখে মুখে এই মানুষগুলো
এদের জটপথে মেয়েটার হাসি,
বেশ। অবাক। তবু, সত্যি।

মেয়েটার মুখ মনে নেই। অথবা দেখিনি
কতো কতো মুখই তো মনে নেই,
স্মৃতির বুকে তাদের শোকগাঁথা
জেগে রয় গ্যাংগ্রিন হয়ে।

উৎসব ফেরা মানুষ আজ শহরমুখী
বাণিজ্যভবনসমূহ টপকে পড়ে
পিছলে যায় ভিড়।

এরই ভেতর মেয়েটার হাসি,

তবে কি ও উৎসবে যায়নি?

না। সবাই যখন ফিরছে তখন শুরু
ওর যাত্রা উৎসবে।

0 thoughts on “আয়শা ঝর্নার চারটি কবিতা

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>