বল্লরী সেনের কবিতা
আজ ২২ নভেম্বর কবি ও অধ্যাপক বল্লরী সেনের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
১ যুধিষ্ঠিরকে জানানো হল বৃষ্ণিবংশ লোপ পেতে বসেছে, বসুদেব এক দীর্ঘ হাতল কেদারায় শুয়ে একে একে বলরাম ও কৃষ্ণের ধ্বংস দেখে চলেছেন প্রাসাদময় পুত্রবধূদের ক্রন্দনে অভ্যস্ত কবুতরের দল আজ নেই যুধিষ্ঠির এখানেই প্রথম তাঁর অযাচিত পরামর্শলিপ্সা থেকে বেরোতে পারলেন কাউকে ভয় পেলেন না নিজের কাছে নিজেকে গচ্ছিত না রেখে দাবদাহ ধারণ করলেন একা ক্ষত পালনের জন্য আমাদের কাছেও আজ আগুন মৃত ঘৃত, দুগ্ধ, অশ্রু, অন্ন সমস্ত অরন্ধন। বাড়ি বাড়ি আলুনি হচ্ছে গতকাল। এসো, হাত জড়ো করি, কোনও ডোম করুণা করেনি কাক চিল নকুলের পরিত্যক্ত কঙ্কাল, সবাই আজ বিধর্মী যবন ২ এখন খাস বেলা ফুটছে। ঘড়িতে ভারতীয় ১০.৪৭ সকাল, আমার জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ওদিকের বারান্দার তারে জ্যান্ত কাপড় গেঞ্জি মোজা রুমাল শুকোচ্ছে। ওর আরও পাশে কিচ্ছু নেই সদর গলি অব্দি সুনসান একটা ইউক্যালিপ্টাসের চামড়া শোওয়ানো রাস্তা একা পিঠ উল্টে পড়ে আছে। আমার হাতে আর সময় নেই। এই কলম কালি খাতা সব জীবাণু সংক্রমিত হয়েছে। একটা আপাদমস্তক ব্লু ফিল্ম হয়ে আছি। আছি। এখনও ৬৬৫৪ সেকেণ্ড ধরে করোনায় আমার মগজ বিস্ফারিত, ঘুমোতে যাই না, খাবার নেই এখানে। জল নেই, জলজ গুল্ম কেবল দেখি। দেখি একটা রোববারে মায়ের সঙ্গে গীর্জায় বসে আছি। কালও ছিলাম। আজ ইঁদুরের মতো ওরা লাথি মেরে আমাকে জালের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে যাবে নির্বাসনে। যেখানে আলো কেবল অন্ধের মতো চুপচাপ গলা বিঁধিয়ে দেয়। চালগুঁড়োর গন্ধ আমার শেষ কয়েক ঘন্টার শ্বাসবায়ু। এও তো একরকমের থাকা, নয়… ৩ স্বরবর্ণ থেকে ব্যঞ্জন কেয়ামত্ আগুনের মতো ধরে যায় গোলাপ গাছের আয়ুরস সাইকেলে বসিয়ে একটা দিন কেবল মাঠানের গায়ের সুবাস মনে পড়ে। তারপর কাজ নেই আর। ভেনিসের ল্যাম্পপোস্টের তলায় যেমন মৌমাছিরা মরবার জন্য ভিড় করে শববাহিকায় তোমার বাহু ধরে ভাবি একদিন আমারও সময় আসবে। মুসুরডালের গাগরি ভেঙে একফালি বেগনি চাঁদসুতো, সাইকেলের চাকায় আটকে যাওয়া সালোয়ারে কোনদিন মরিনি তো। সুতোর মতো কত জন্ম নিরোধক খেয়ে মায়ের জঠরের রক্তলাগা ঠোঁটে কালসিটে জাবর কাটা ১০ টা দিন তোমার নীরবতার ঝাঁকাবন্দি হয়ে আর একবার ঐ হাত ভিজিয়ে দেব অমানুষ চুম্বনে তুমি ঘুমের ভেতর ভাববে অবিরাম দোয়েল ডাকছে তুমি আমার গায়ের গন্ধে মৌজ মৌতাতে বেঁচে থেকো স্বয়ম্বরা হয়ে। ভেজা জুতো ও তার কৈফিয়ত কী যে হল কানের দো বুঁদ খুলে রাখলাম পকেটে। ডান পকেটে তখনো বৃষ্টির ছাট এলো হয়ে মণ্ড পাকিয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে, কী মনে হল, লাইন পাল্টে জুতোর মধ্যে পা গলিয়ে কান্না নম্বর এক কে অন্ করি, নাহ্, হেভি ওয়েট কষ্ট চলবে না বরং স্প্যাগেটি ছায়াদের ডাকযোগে ছেড়ে আমি জুতো জোড়া না হয় হাতে তুলে দৌড় দিই, অথবা সাইট্রাস একধরণের না-পারা ইচ্ছে এরপর আইবুড়ো গাছের পাতাদের শিরায় আমাকে জড়িয়ে রাখলো সার দেওয়া রোদের মুসুরিতে, পাল্টে যাচ্ছিলাম…জারানো বেগনি ফুলের ডানায় তার চাহনি লুকিয়ে রাখলে আর হলদে বাগানের বুনো সুখের লবঙ্গে আমার সর্বাঙ্গ ভিজে যেতে লাগলো, মায় জুতো পর্যন্ত খাম্বাজ ক্রমশ আওয়াজসঙ্কুল হল পাখি হাঁড়িচাচা গাছের ছালের ভারে চুপ থাকে না, তার কানে মৌমাছি অন্যায় গুঞ্জন করে চললো দিনরাত পার্থিব সমস্তের ভারে এখন নিশুত গাছেরা ও পাতার বাতাসে গলা তোলে। গান এসে শ্বাস টেনে নেয় ঘাসের থেকে কুশ কেবল তোমার কাছে সময় এসে চাপরাসির মতো একা একা ফিরে চলে যায় পূর্ণিমার ঘোর লাগে মন্ত্রসিক্ত ভোরের বাগানে গুলমোহরের কাছে গোলাপের কিচ্ছুটি আর বলবার রইল না। আলো নেই বলে রা নেই কুঁড়ির ফুল ফুটলে ঠিক কেউ তোমার মতো করে বুঝে নেয় কথা নেই, গন্ধটুকু রয়ে গেছে

কবি