বল্লরী সেনের কবিতাগুচ্ছ
আজ ২২ নভেম্বর কবি,অধ্যাপক বল্লরী সেনের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
সুরের শৌহর
এক. একটা বিস্ফারিত মাফলার মোড়ানো দিন জানালার লাল টালি চুঁইয়ে গড়িয়ে দাও মরাল উপত্যকায়, উঁচু সাদা বাকলে অবাক কথারা নিভে যায়, স্বর আর শোনা যায় না কিছুতেই
তীব্র গোলাপ বর্ণ পাতারা এখানে ফুলের মতো পসরা সাজানো লাল ঢালু বাড়ির ছাদ চিমনিতে ভাতের গন্ধ, অতিথিকে বিনা কারণে কাছে এনে বসায়, কথা বলে। ফিরোজা নদীর ডান বাঁকে বাতাসেরা ফেরার কথা বলতে চায় কষ্ট হয়, অন্য ভাষায় শব্দ বেঁকে যায় তার।
সমস্ত যোগাযোগ ফেলে আসার পর এখন শব্দেরা নৌকার মতো পাতার দেহে ভেসে যাচ্ছে, প্রবাহের সঙ্গে একা চলে যাবে বলে
দুই. মনে-রাখা রোদ্দুর এখন বারখলোমিউ-এর ছাতিম পাতায় —তুই একা সব পোড়ানো মাছের ছালটুকু বসে খেয়ে নিলি? —একটাই খাবার প্যালেট, রঙ লাগছে দানায় দানায়, মাছের ঘিলুর মতো অসমাপ্ত আকাশ একটু করে সূর্যকে টেনে রাখতে চাইছে —তোর গলা ওই বুঝি শুনলাম। বুঝি ভিড়ের মধ্যে তোর ঘ্রাণ। জলে তোর নিস্তরঙ্গতা, কেবল আসে আর চলে যায় —ফর্কের পিনে তোকে কাঁটা ফুটিয়ে ছুঁয়ে দেবে ছেলেবেলা, তখন আমরা ২২ বছর পর রুমাল চুরির খেলা খেলবো —তুই কেবল হাঁটুতে বল নিয়ে লোফালুফি করবি আর হুস্ করে কফির মতো আমি উড়ে যাচ্ছি পাহাড় রঙের একটা তুষারপাতে।
এখন এটাই আমাদের শীত শীত খেলা।
তিন. কিছু কথা কোনোদিন বিনিময় হবে না। কিছু কথা সুরের শৌহরকে ভুলে থাকে, ভুলে থাকে তারও চোখে চোখ পড়েছিল—ট্রেন যখন ৩ মিনিট দাঁড়িয়েছিল জংশনে। অগোছালো চোখের মনি, আম্রপল্লবের তলায় সব জমা খরচ ফেলে ঠাঁ ছুটলো, একটিবার চোখের দেখা দেখতে পাবে বলে। হলুদ ধানের ক্যানভাসে পূর্বরাগ এইরকম খোলা তোরঙ্গের মুখে এক লহমা আগল খুলে চায়।
ভয় পেও না। উদাসীন বৃষ্টির ছাটে এবারের মতো আর কিচ্ছু চাইবো না।
