Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,bangla golpo asish chakraborty

গল্প: নবকুমার চরিতনামা । আশীষ চক্রবর্তী

Reading Time: 2 minutes
মধ্যবিত্ত জীবন যেভাবে বয়, অন্তত বেশির ভাগেরই একই রকম। অনেকটা কাছাকাছি, তবে অনেকেই অস্বীকার করে থাকে। বিশেষ করে  যৌবনের স্বতঃসিদ্ধ “গোপন কম্মটি।”
যাকগে, তবে  বলতে কেমন লাগলেও, আমি ছিলাম ছন্নছাড়া। চেহারা লম্বু হলে কি হবে, শুদ্ধ পাটকাঠি। বৃষ্টি পড়লে তারতম্য ঘটে, তবে আবার যেইকে সে-ই। জামা আনফিট। চুল টাকে নিয়ে বহুবার চেষ্টা করেছি, কায়দা করার জন্য। সব কায়দা ফেল। সবসময় দাঁড়িয়ে থাকে। হাত দিয়ে চেপে ঠিক করলেও, পরক্ষনেই কড়াৎ করে দাঁড়িয়ে গেল। তবে গোঁফটাকে তারিফ করতে হয়। মাঝে মাঝে বুড়ো আঙুলের পেছন দিকটা দিয়ে গোঁফে ঠেকালেই একগুচ্ছ সেফটিপিনের অনুভূতি। 
পেরেক মারা চপ্পল গলিয়ে মেস বাড়ির গলি পেড়িয়ে সূর্যসেন স্ট্রিটের মুখে। আজ সোমবার , সান্ধ্যকালীন কোলকাতা। বিভিন্ন কোম্পানির ঝলকানি বিজ্ঞাপন। গ্লোসাইন বিজ্ঞাপন তো সবে আসলো। 
আগে,  টিউব লাইট বসিয়ে বিজ্ঞাপনের আলোর ব্যবস্থাটা ছিল। তবে মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন চেহারা টা বিচিত্র হতো। যেমন ধরুন  ব্রিটানিয়া  বা কোলগেট। অনেক সময় ইংরেজিতে, টি, এল, আর, সি অক্ষর গুলোর টিউব জ্বলতো না। তবে দ্রুতগামী মানুষ গুলোর চোখে পড়তে না। হঠাৎ জয়শ্রী। তখন একটা ফ্যাশন অল্প দিনের জন্য এসেছিল। হাত কাটা ব্লাউজ আর যতটা সম্ভব নাভির নিচে শাড়ি। উঁহু , ওভাবে নয়। দেখতে হবে তৃতীয় চোখ দিয়ে। তা বেশ বেশ, তৃতীয় চোখ টা কি রকম? সেটা,  লেখক, সন্দীপন বাবু বললেন, দুচোখ বন্ধ করে দ্যাখো। 
ব্রেইল পদ্ধতিতে? 
জয়শ্রী  ছিল  আইন কলেজের সহপাঠী। ও-ই আমার নামটা চাঁদপাল রেখছিল। আমি এক সহপাঠীর কাছে জানতে পেরেছিলাম । আমি ওকে জিজ্ঞেস করাতে বললো, কাছেই আমহার্স্ট স্ট্রিটে, আত্মীয়র বাড়িতে এসেছে। আমাকে জিজ্ঞেস করাতে আমিও বললাম, এই তো এখানে। 
বললো, এই  রাস্তায়? বলে খিলখিল করে উঠলো। ও থাকে গুমঘর লেনে। জ্যোতি সিনেমা হল থেকে হসপিটাল রোড ধরে এগিয়ে গেলেই  “গুমঘর লেন”। 
যাহোক মন শক্ত করলাম। বললাম, “ববি” বইটা দেখেছে কিনা? বললো, না দ্যাখা হয়নি, তবে সুযোগ করে দেখার ইচ্ছে আছে। 
সোজা, কোন সুইং নেই , সর্ট পিচ বল। ছয় না মারতে পারলে, ক্যাপ্টেন ” কামদেব ” কান ধরে টিম থেকে বার করে দেবে। আমি কালবিলম্ব না করে বললাম, কালকে টিকিট কাটবো? ঘাড় কাত করতেই, মনে হল যেন  রাস্তার টিমটিমে বালব গুলো হাজার ওয়াটের মতো জ্বলতে শুরু করলো। 
সে চলে গেল, কয়েকটা বালব যেন  ফেটে পড়লো, নাকি হৃদযন্ত্রের আওয়াজ কান দিয়ে বেরোচ্ছে। বুকের ভেতরে দুই ভাই,  অলিন্দ আর নিলয় দাপাদাপি করলো কিছুক্ষণ। 
পরের দিন  লাইটহাউস সিনেমা হলে গিয়ে দেখি অবাক কান্ড। ববি ছবি টা উধাও। আজ দুপুরে এই ছবির  শুভারম্ভ, “আকালের সন্ধানে”। মনটা ভরে উঠলো। হলে ভিড় নেই। ছবি শুরু হওয়ার শেষ বেলটা বাজলো। হাতে দুটো টিকিট নিয়ে হলের ভেতরে ঢুকলাম। জয়শ্রী না আসাতে পাশের সিটটা খালি পড়ে রইলো। অদ্ভুত সিনেমা। সিনেমার মধ্যে সিনেমা বানানোর গল্প। একশন নেই, সমাজের রিয়্যাকশন, বলে গেলেন মৃনাল বাবু নিজেই। প্রথাগত পন্থা নেই। আজ মনে পড়ছে বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটারের কথা। ঠিক এরকমই লেগেছিল, যখন দর্শক আসন থেকে উঠে এসে একজন অভিনয় করতে লেগেছিল। এনারা কালদর্শী। বাইরে বেরিয়ে দেখি, লোকেরা মাথা নিচু করে হেঁটে চলেছে, ঠিক যেন বাদল সরকারের “মিছিল” নাটক চলছে। 
জয়শ্রী বোধহয় জানতে পেরেছিল, ছবিটা পাল্টেছে। যুবতীদের আবেগ কী ক্ষনস্থায়ী?  আপনি কিছু বলবেন, স্যার? “বালজাক”, বিশিষ্ট ফরাসি কথা সাহিত্যিক বললেন, চল্লিশ বছরের নারী তোমাকে সর্বস্ব দিতে পারে, বিশ বছরের তরুণী কিছুই দেবে না। ওনার বিশ্বাস, পঁয়ত্রিশ বয়সে নারী পূর্ণতালাভ করে। বাস্তবে ও উনি তাই করেছিলেন। বিয়ে করেছিলেন পঁয়তাল্লিশ বয়সের মহিলাকে, যিনি নয় সন্তানের জননী। “নারীর সর্বশেষ ভালবাসা যদি পুরুষের প্রথম ভালোবাসা জাগ্রত করতে পারে, তাহলে তেমন মধুর প্রেম আর কিছুই হতে পারে না।” 
যাইহোক সাতপাঁচ ভাবতে, ভাবতে মাথা ঝিম ঝিম। চলে এলাম মহাত্মা গান্ধী রোডে। ঝলমলে আলোয় আলোকিত,  জওহরলাল নেহেরু রোড ছেড়ে  টিমটিমে  মহাত্মা গান্ধী রোডে। যে আলো দিলো, তার আলো কম। 
সব ঝেড়ে ফেলে, নিঃশ্বাস নিলাম…! “তোমার উপরে নাই ভুবনের ভার…”

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>