তিনটি কবিতা । যাজ্ঞসেনী গুপ্ত কৃষ্ণা
দিনগুলো মাসগুলো লাঙল আর মইএর মতো। খোলা আকাশের নীচে প্রতিদিন জীর্ণ হয়ে যাচ্ছে –
অব্যক্ত
এক
হাওয়ার আঘাত লেগে মনের পাতা ঝরে পড়ে
যেমন মাটির বন্দরে ভিড়ে চৈতি পাতারা সমুদ্রগামী হয়
ঠিক এখনই যেন এক জাদু মুহূর্ত – আশ্চর্য নির্লিপ্তি ছড়িয়ে আছে চরাচরে
চরাচরই মগ্ন বুদ্ধ
তবুও পৃথিবী কাঁদে হাওয়ার এস্রাজে
আর জলের গাল বেয়ে কান্নার ফোঁটার মতো ভেসে যাচ্ছে নৌকোটি
দুই
এরপর বুদ্ধও মরে যায় স্বভাবতই , আর সামান্য হাওয়ার আঘাতে পাতার মতো মানুষও গড়িয়ে যাবেই
ঈশানের মেঘ বরাবর পালিয়ে যেতে চায় জানলার শার্সি , তাঁবুর দড়ি –
সদ্য রজঃস্বলা আমি এই সারদা কিস্কু, হলদেটে কাপড়ে শুষে নিতে চেয়ে সব বদরক্ত… তবু পরিত্রাণ নেই। দিগন্ত বেঁধছে আমায়, সেই বাঁধন কেটে আমি কি পালিয়ে যেতে পারি? তাই প্লাস্টিক কারখানায় দৌড়োই।
ব্যথাকে বেঁধেছি তলপেটে,
বাসি উনুনের জন্য অন্য মেয়েদেরও জ্বালানির আগুন বাঁধতে কি দেখোনি?
জলের খর স্রোতে তৃষ্ণার্ত কাকের চঞ্চু ঝাঁপায় – পলায়নবাদী পা জুড়ন চায় জলের কাছে।
সেখানে জলের কুরুশে গল্প বোনা চলে…
অথচ পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গের মতো ‘একতার মূর্তি’ অদ্বিতীয় ভগবান হয়ে
পাহাড় জঙ্গল নদীর উপর দিয়ে চোখের ছুরি বিঁধে দিচ্ছে প্রতিটি সিনায় ,
তার নখের কণাটুকুর মূল্যেও কারও কারও পেটের আগুন নেভে ।-
কিংবা নির্মাণের ঢলানিপনায় নখের কণিকা ধোয়া জলে সত্যিই কারও পেটের আগুন নেভে কি?
পলক ফেরাতেই কী যেন একটা গড়িয়ে নামল, ভাবলাম আমার হারানো ছায়াটা ফিরে এলো। কিন্তু না, আমার ছায়াকে কোথাও দেখতে পেলাম না।

পূর্ব বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলের অজ পাড়াগাঁয়ের ধুলোবালিতে জীবনের অনেকটা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। শিক্ষকতার বৃত্তি। কবিতা প্রথম প্রেম। প্রকাশিত কবিতার বই এখনও পাঁচটি। গদ্যের বই একটি।