| 26 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ

বুদ্ধিজীবী হত্যা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

একাত্তরের এই দিনে বীর বাঙালিরা জানত না যে আর মাত্র দুই দিন পরেই তারা মুক্ত হবে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে, দেশ স্বাধীন হবে। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়-আত্মসমর্পণ ও মিত্রবাহিনীর যুদ্ধের প্রচন্ডতা বাঙালিদের মাঝে বিজয়ের সুর ধ্বনিত করছিল। এসময় শান্তি কমিটি, ডা. মালিক মন্ত্রিসভা ও স্বাধীনতাবিরোধী দালালদের অধিকাংশই অবস্থা বেগতিক দেখে গা ঢাকা দিচ্ছিল। এর মধ্যেই ঘাতক আলবদর চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করার নীলনকশা প্রণয়ন করে তারা। যার নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জাতির ও দেশের সবচেয়ে কৃতী সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর পতনের ঘণ্টা বেজে চলছিল। অব্যাহত অগ্রযাত্রায় মিত্রবাহিনী সাভার, জয়দেবপুর ও টঙ্গী হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হয়। এদিন কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পতন ঘটে বীর বাঙালিদের হাতে। রাজশাহী থেকে পিছু হটে হানাদার বাহিনী নাটোরে আশ্রয় নেয়। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে যুদ্ধ করার মতো কোন কৌশল ছিল না বলে পরে তাদের কমান্ডাররা স্বীকার করে নেন।

এদিকে, ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকসেনাদের ভীতসন্ত্রস্ত করতে ঢাকার নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বোমাবর্ষণ শুরু করে। এদিন তৎকালীন গভর্নর হাউসে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে গভর্নর এএম মালিকের বৈঠক চলার সময় ভারতীয় বিমান গোলাবর্ষণ করে। তখন গভর্নর এএম মালিক তড়িঘড়ি করে পদত্যাগ করে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে রেডক্রসের গাড়িতে করে নিরপেক্ষ এলাকা বলে ঘোষিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে রূপসী বাংলা হোটেল) এসে আশ্রয় নেন। মনোবল হারা জেনারেল নিয়াজি বোমাবর্ষণ বন্ধ রাখার জন্য ভারতের জেনারেল মানেকশ’র প্রতি আহ্বান জানান। তার অনুরোধে পরে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ১৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকা ও এর আশপাশে বোমাবর্ষণ বন্ধ রাখা হয়।

অন্যদিকে ১২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবে ১৩ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নে ভেটো দেয়। পাশাপাশি এ যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের শীর্ষনেতাদের মধ্যে হটলাইনে আলোচনা হয়। অন্যদিকে এদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিলিটারি ক্রস পাওয়া মেজর জেনারেল রহিম আহত অবস্থায় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বাসায় অবস্থান করছিলেন। ২৪ ঘণ্টা ধরে তিনি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, যুদ্ধবিরতি ছাড়া আমাদের জন্য আর কোন পথ খোলা নেই। দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের একনিষ্ঠ এ সমর্থকের কাছে (রহিমের) এ কথা শুনে রাও ফরমান আলী স্তম্ভিত হয়ে যান। এ সময় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর হাতে প্রচন্ড মার খেয়ে ৩৬ ডিভিশনের সেনাধ্যক্ষ মেজর জেনারেল জামশেদ কোনক্রমে প্রাণটুকু নিয়ে ঢাকায় আশ্রয় নেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়োজির কাছেও আত্মসমর্পণের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় পাকহানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। দেশজুড়ে খন্ড লড়াইয়ে বিপর্যস্ত পাকবাহিনী অধিকাংশ জায়গাতেই আত্মসমর্পণ করেছে। সৈয়দপুরে এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ ১০৭ জন পাকিস্তানি সেনা। সিলেটের মুক্তিসেনারা মুক্ত করেন হরিপুর পাইপলাইন এলাকা। লে. কর্নেল সফিউল্লাহর নেতৃৃত্বে এস ফোর্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে এদিন ঢাকার উপকণ্ঠে ডেমরা পৌঁছায়।

আসলে ১৯৭১ সালের সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে যতই অগ্রসর হচ্ছিল ততই কমছিল তথাকথিত দুর্ধর্ষ পাকিস্তানি জেনারেলদের মনোবল। ইসলামাবাদে বারবার সাহায্যের করুণ আবেদন জানাচ্ছিল তারা। ইসলামাবাদ থেকে সামরিক কর্তারা ঢাকায় অবস্থানরত জেনারেলদের এ বলে আশ্বস্ত করেন, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর। পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারতীয় বাহিনীকে এমন মার দেয়া হবে যে, তারা নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইবে ও যুদ্ধ থেমে যাবে।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত