বেড নাম্বার ৩১১৮ (পর্ব-১)

Reading Time: 2 minutes
জীবন একটা অদ্ভুত চমক।কখন কে কোথায় কীভাবে থাকবে , আদৌ থাকবে কিনা সবটাই অজানা আমাদের।কেউ অলক্ষে সব ঠিক করে রেখেছেন।আমরা কেবল পুতুলরূপে তার খেলার সঙ্গী।
বেড নাম্বার ৩১১৮ এ ভর্তি হয়েছি দুদিন হল।রাত ৯ টার সময় যখন এমারজেন্সি থেকে এই বেডে আনা হল,  দেখলাম ২ জন বয়স্ক রোগী ভর্তি।তখন আমার গায়ে ১০২. ৭ জ্বর।স্যালাইন চলছে।আর একটা  প্যারাসিটামল সম্ভবত ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দিয়েছিল  ।রীতিমত কাঁপছি।ফলে প্রতিবেশীদের ভাল করে দেখার কোনো অবকাশ ছিল না।জ্বর নিয়েই সামান্য খাবার মুখে তোলার চেষ্টা করলাম ।তৎক্ষণাৎ মুখ তেতো হয়ে বমি ।খাওয়া হল না।ঘুমের ওষুধ দিল।ঘুমও এলোনা।
সেই ৫ টায় এমারজেন্সিতে ঢুকেছিলাম, তখন থেকে এখন অবধি কোনো যথার্থ ওষুধ পরে নি। রাত ২ টো নাগাদ উঠে গেলাম আর এম ও এবং সিস্টারের ডেস্কে।বললাম, যদি ১০ মিনিটের মধ্যে ওষুধ শুরু না হয় তবে আমি শুয়ে পড়ছি।একবারও আমাকে ডাকবে না।যা ওষুধ কাল সকালে দেবে।
আমার কথায় জানি না কী হল! মেডিসিন বিভাগে ফোন করে সিস্টার বলল, ম্যাডাম কমপ্নেন করছেন।৫ মিনিটের মধ্যে ওষুধ পাঠাও।
পাঁচ মিনিটের বদলে ১০ মিনিট বাদে ওষুধ এলো। শুরু হলো চ্যানেলের মাধ্যমে ফ্লুরিড যাওয়া ।তখন গায়ে জ্বর বেশ । সব ওষুধ দেওয়া শেষ হতে হতে রাত সাড়ে তিনটে বাজলো।
আরো একটা নিদ্রাহীণ ।বাড়িতে শুক্রবার অফিস থেকে ফেরার পরেই জ্বর এসেছিল ।শনিবার ডাক্তারকে দেখিয়েও ছিলাম । জ্বর কমছিল না।সারারাত বমি করেছি সেই শুক্রবার থেকেই ।ঘুম নেই তখন থেকেই ।
সোমবার ভর্তি ও ডাক্তার দেখানোর জন্য এমারজেন্সিতে চার ঘন্টা । কোনো বেড পাওয়া যায় নি।
এমারজেন্সিতে দেখছিলাম কেমো নিচ্ছেন এমন একজন।থেকে থেকে আর্তনাদ করছেন।আর একটা বাচ্চা পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে গেছে ।ওখানেই স্টিচ করছে। বাচ্চার আর্তনাদে আমার বুক কেঁপে উঠছে।মনে পড়ে যাচ্ছিল আমার মেয়েরও এমন একটা বয়সে বাথরুমে একা স্নান করতে গিয়ে কলে লেগে মাথা ফেটে রক্তের ফোয়ারা ।উ:মাগো:কত রক্ত ।এই বাচ্চাটাকে দেখে ছোট্টো ভোরাই এর মুখটা মনে পড়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
কারোর স্যালাইন কারোর অক্সিজেন চলছে ।সেদিন কোনো রকমে পরিত্রাণ পেয়ে বাড়ি চলে গেছিলাম ।কিন্তু রোগ! সেতো আমাকে মুক্তি দিল না।
আবার এখানেই নিয়ে এল।২ ঘন্টা এমারজেন্সীতে রেখে বেডে দিল।
তবে কেন জানিনা মনে হয় এই ক্রাইসিস খানিকটা ইচ্ছা করেও তৈরি ।আগের দিন ১৭ জন ওয়েটিং আমার আগে, আর পরদিন আমার কেবিনেই ২ টো সিট ফাঁকা ।এমারজেন্সীতে কিন্তু যথারীতি ৭-৮ জন ওয়েটিং এ।আমার দাদা হাইকোর্টের লইয়্যার এই বেড আগে থেকে বুকিং করে রেখেছেন।তাই হয়তো আমি উঠে এলাম দোতলায় ।আর বাকিরা রয়ে গেল নিচেই।
বড় অবাক লাগে , ক্ষমতা ও সিঁড়ি ২ টোই জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে কী ভীষণ ভাবে জড়িয়ে।
ফিরে আসি বেড নাম্বার ৩১১৮।আমার বর্তমান আবাস।সকাল বেলায় ঘুম ভাঙল সিস্টার আর এটেনডেনন্ডের সমবেত কণ্ঠের কোলাহলে। বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আমি! চারদিকে চোখ বুলিয়ে একটা হাসি এল।
আবার আমি বেড়াতে এসেছি।যেন কোনো বড় হোটেলে রয়েছি ।কিন্তু বাড়ির লোকেরা! তখনি এক ধাক্কায় নেমে এলাম বাস্তবে ।আমি শখ করে কোথাও ঘুরতে যাইনি।কাল সনাতন কোনোভাবেই আমাকে ভর্তি হতে রাজি করাতে না পেরে শরণাপন্ন হয়েছিল স্পন্দন আর রম্যানির।রম্যানির কথা না শুনলেও স্পন্দন যে কী ভাবে রাজি করালো কে জানে !

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>