| 29 মার্চ 2024
Categories
সময়ের ডায়েরি

বেড নাম্বার ৩১১৮ (পর্ব-৪)

আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিট
মাসিমা ছাড়াও এই কদিনে যারা ভরতি হলেন সকলেই একদিন বড়জোড় দুদিনের অতিথি ।আমার উল্টো দিকের বেডে পরপর দুদিন কেমো নিতে এসেছিলেন ২ জন।ওই বেডটা বোধহয় কেমোর জন্যই নির্দিষ্ট।
প্রথমদিন বেহালা থেকে এসেছিলেন যিনি, তার হাতটা শক্ত করে ধরেছিল অল্প বয়সী সদ্য বিবাহিত একটি মেয়ে।ভারি সুন্দর দেখতে ।জিজ্ঞেস করলাম মেয়ে বুঝি ?
বলল, না, পুত্র বধূ।কিন্তু আমার তো মেয়ে নেই, তাই ওই আমার মেয়ে।
মেয়েটি মিষ্টি করে হাসে।মন ভরে গেল।
মধ্য পঞ্চাশের মহিলা বলল, বৌমাও আমার বিটেক।
আমার ছেলের নিজের সফট ওয়্যার ফার্ম।সেখানেই বৌমা রয়েছে ।
কেমো নিয়ে চলে গেলেন রাতেই।পরদিন দুপুরে এলেন আরেক গুজরাতি মহিলা।বাংলা বলতে পড়তে খুব ভালোবাসেন।স্কুলে তৃতীয় ভাষা ছিল বাংলা।ভবানীপুরে বাড়ি।বললেন, মেয়ে গুজরাতী বলতেই চায়না, খালি হিন্দি আর ইংরেজি ।এত করি বলি যেখানে যে রাজ্যে আছো তার সংস্কৃতি সাহিত্য সমাজ জানার জন্য ভাষাটা শেখা দরকার।না নিজের মাতৃভাষা বলে, না বাংলা।আজকাল বাঙালিরাও দেখি হিন্দিতে বলছে কথা।আমি বকি।বাংলায় বলো।আচ্ছা বলুন তো , নিজের ভাষা ভোলা মানে তো ক্রমশ নিজেকেও ভুলে যাওয়া ।
ভদ্রমহিলার কথাটা বুকের ভিতরে কোথাও ধাক্কা দিল।সত্যি তো, এভাবেই বাঙালি একদিন কেবল গুটিকতক মানুষের ফেসবুকের ভাষা না হয়ে দাঁড়ায়! আমরা সবচেয়ে বেশি অবজ্ঞা করি নিজের সংস্কৃতিকে ।তাই বোধহয় সবজায়গায় পেছনের সারিতে আমরা।শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াব কে জানে!
ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটির দ্বিতীয় বর্ষের বিকমের ছাত্রী মেয়ে মৃদু প্রতিবাদ করল।মা, আমি কী করব?  কেউ যদি গুজরাতি বা বাংলা না বলে তবে আমি কী হাওয়ায় কথা বলব!
মা বলে, কাউকে শুরু করতে হয় বলাটা।একদিন দুদিন তিনদিন. . . তারপর ঠিক একদিন বলা শুরু হয়ে যায় ।
তিনিও চলে যান রাতে। দুপুরে সেই জায়গায় আসেন কেমো নিতে আরেকজন।
আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি এত রোগী দেখতে দেখতে ।রোজ বলি , এত রোগ কেন পৃথিবীতে ? সুন্দর একটা পৃথিবী কেন তৈরি করতে পারি না আমরা? নির্দিষ্ট একটা বয়স প্রত্যেককে দাও, তারপর ফিরিয়ে নাও তোমার সন্তানকে।কিন্তু সুস্থ রাখো।ভালো রাখো সকলকে।তোমার সৃষ্টি রক্ষা করার পূর্ণ দায়িত্ব কিন্তু তোমারই. . .

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত