সময়ের ডায়েরি: যম দুয়ারে । সাহানা ভট্টাচার্য্য

Reading Time: 2 minutes
“হ্যালো”

ঘুম জড়ানো গলায় তারস্বরে বেজে ওঠা মোবাইলের উত্তর দেয় যম। ছানি কাটা চোখ আজকাল চশমা ছাড়াই দিব্যি সব দেখতে পায়! এই ভোর সাড়ে চারটেয় চিত্রগুপ্ত ফোন করে কেন? 

“প্রভু, ৯১১. It’s an emergency”.
কি সাংঘাতিক! চিত্রগুপ্ত এই ভোররাতে ৯১১ বলছে কেন? গ্লোবালাইজেশনের যুগ, গত দুবছর প্যানডেমিকে প্রচুর এনআরআই ডেডবডি সামলিয়ে দেশবিদেশের কেতা মুখস্থ করেছে বুড়ো চিত্রগুপ্ত। আমেরিকার এমার্জেন্সী নম্বর যে ৯১১ তা কি ছাই যমরাজই জানতেন আগে! চিত্রগুপ্তর কাছ থেকেই এসব সাহেবীকেতার আমদানি। 
“দাঁড়াও, আসছি!” 
তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসে যমরাজের চক্ষু ছানাবড়া। এ বছর কাঁটার বদলে পৃথিবীর মানুষ যমদুয়ারে ফেলে দিয়ে গেছে ছাইছাইরঙা কাঁটার বল, লাললাল কাঁটাওয়ালা, আর তাকে ঘিরে ছড়িয়ে চারটে যমদূতের মৃতদেহ। এ আবার কি নতুন জিনিস! বাঃ, দিব্যি দেখতে তো বলটা! কৌতুহলে যম হাত বাড়াতেই সবাই “ছোঁবেন না ছোঁবেন না ছ’ফুট” করে চেঁচিয়ে উঠলো! 
ভাইফোঁটার পরের দিন প্রতি বছরই কাঁটা সাফ করার জন্য যমের বাড়িতে এক্সট্রা লেবার দরকার হয়, তা স্বর্গনরক সবাই জানে। প্যানডেমিকে লোক মরেছে প্রচুর, মানুষের ভয়ও বেড়েছে, তারপর দুদিন ধরে ভাইফোঁটা, এ বছর যে বেশি কাঁটা পড়বে, তা আঁচ করে সিংহদুয়ারের কাঁটা সাফ করার জন্য পার্মানেন্ট স্টাফ যমদূতের সাথে সাথে বেশ কিছু টেম্পোরারি লোককেও নেওয়া হয়েছিল, সবাইকে সেভাবে ইন্টারভিউও করা হয়নি। প্রতিপদের ফোঁটা হওয়ার পরদিনই গোল বাঁধিয়েছে তাদেরই কয়েকজন। টেম্পোরারি স্টাফগুলোর কয়েকজন নাকি বেঁচে থাকতে সায়েন্টিস্ট ছিল, তারা চিনতে পেরেছে ওই কাঁটার বলটা আসলে কি! মর্ত্যবাসী কায়দা করে এবছর ভাইফোঁটায় যমদুয়ারে কাঁটার বদলে করোনা ভাইরাস পাঠিয়েছে।  
যম এবার ভয় পেলেন। বছর দুই আগে কুচক্রী যম এমন ভাইরাস বানানোর জন্য সমস্ত ফান্ডিং পাঠিয়েছিলেন, বিশ্বস্ত গুপ্তচর কুমতি বয়ে নিয়ে গিয়েছিলো সে ফান্ডিং। সে ষড়যন্ত্র কোথায় কিভাবে কাজ করেছে যম জানতেন না, খালি মহানন্দে ছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ মারা যাওয়ায়। মাঝে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে প্রকোপ কিঞ্চিৎ কম হওয়ায় আবার ঢেউয়ের পরে ঢেউ উঠিয়েছিলেন। 
পিপিই নেই, ভ্যাকসিন নেই, সিংহদুয়ারে দৈত্যাকার করোনা ভাইরাস আর তাকে ঘিরে পড়ে থাকা যমদূতদের থেকে ছফুট দূরে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার যমদূতের সাথে দাঁড়িয়ে শুকনো মুখে যমরাজ দাঁড়িয়ে রইলেন, চোখে ভয়। দুয়ারের একদম ওইপাশে মোহিনী রূপসী কার্মার ঝলমলে হাসি দেখতে পেয়ে মনে  পড়লো নিজেরই কৃতকর্মের কথা। কূটনীতিতে মত্ত যম ভুলে গেছিলেন – কর্মফল যমকেও ছাড়ে না। যমালয়ে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সায়েন্টিস্টরা, মানুষ তো দূরের কথা, যমুনাও ফিরে গেলেন, যম এ বছর ফোঁটা পেলেন না। খোলা সিংহদুয়ারের ওই দিকে কার্মা তখন মিষ্টি হেসে বিরাট প্রজেক্টারে দেখাতে লাগলো মর্ত্যের ভাইফোঁটা উৎসব। 
বেচারা যম যে এবার কি করেন! 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>