শ্রদ্ধাঞ্জলি : ছিলেন বাঁড়ুজ্জে হয়ে গেলেন ভাঁড়ুজ্জে
সব জায়গাতেই ‘ঢাকার ভানু’ হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে ভালোবাসতেন তিনি। আজ সেই ঢাকার ভানুর মৃত্যুদিন। ‘ঢাকার ভানু’র প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ প্রণতি।
তিনি নিজেই বলতেন, ‘আমি ঢাকার ভানু!’ পোগোজ স্কুল, সেন্ট গ্রেগরী হয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন জগন্নাথ কলেজে। বোঝাই যাচ্ছে, ঢাকার জল-হাওয়া তাঁর সাথে কতটা মিশে আছে।
জন্ম ১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট। তাঁর মূল নাম সাম্যময় বন্দোপাধ্যায়, ডাক নাম ভানু।
যদিও পরবর্তীতে তিনি তাঁর এই ডাকনামেই বাংলা তথা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় কমেডিয়ান নন। একজন পূর্ণাঙ্গ অভিনেতা। তবে দর্শক ভালোবেসেই কমেডিয়ান বলতেন।
আসলে কমেডিয়ান হতে গেলে সব দিক পরিক্রমা করে আসতে হয়। যিনি হাসাতে পারেন, তিনি দর্শকের চোখে জলও আনতে পারেন।
যেমন চার্লি চ্যাপলিন। দেখে হাসছেন, কিন্তু কখন যে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়বে, বুঝতে পারবেন না। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও তেমন।
‘মাসিমা মালপো খামু…’ এই একটি সংলাপ বাঙালির হৃদয়ে চিরন্তনভাবে থেকে যাবে।
ছোটখাট চেহারার এক ব্যক্তি, সহজ-সরল, ছাপোষা আদ্যোন্ত বাঙালিয়ানায় ভরপুর… এক্সপ্রেশনেই পর্দায় বাজিমাত করতেন!
কৈশোরে বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের পার্শ্বচর হিসেবে তাঁর নির্দেশমাফিক টিফিনবক্সে রিভলবার আর ‘নিষিদ্ধ’ বই পাচার করতেন তিনি।
তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকার সদরঘাট দিয়ে পুলিশ ও সরকারি কর্মচারীদের আসা-যাওয়ার ওপর রাখতেন তীক্ষ্ণ নজর। এক কথায়, তিনি ছিলেন খুদে গুপ্তচর।
পরে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন, অনন্ত সিং—এঁদের সঙ্গে পরিচয় ও জানাশোনা হয় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়ানোর পর জনমানুষের সঙ্গে অবাধে মেশার সুযোগ পান ভানু। এ সূত্রেই মানুষকে তীক্ষ্ণ পর্যালোচনা ও অনুধাবন করার ক্ষমতা গড়ে ওঠে তাঁর।
ঢাকায় তিনি মিশতেন ঘোড়ার গাড়ির চালক ‘ঢাকাই কুট্টি’দের সঙ্গে। কুট্টিদের প্রবল তীক্ষ্ণ রসবোধ ভানুর কৌতুকপ্রতিভা বিকশিত করতে সাহায্য করেছিল। এর প্রভাব দেখা যায় তাঁর পরবর্তী জীবনে।
বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে, ততদিন ভানুও থাকবেন স্বমহিমায়। সিনেমা ছাড়াও কিছু হাস্যকৌতুক রেকর্ডেও তিনি নিজের দক্ষতার ছাপ রেখে গেছেন।
এখনো যখন বাঙালি শুধুই হাসতে চায়, তার কানে বাজে সেই “মাসিমা, মালপো খামু!”
কিংবা ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’-এর অসামান্য মুহূর্ত “হাম-হাম-গুড়ি-গুড়ি নাচ”, যেটা ভানু ঊর্বশী কে শেখাচ্ছিলেন!
সরস রঙ্গ ও কৌতুকের জন্য যে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের খ্যাতি দুই বাংলাজুড়ে, তিনি ঢাকার সন্তান। তাই হয়তো সব জায়গাতেই ‘ঢাকার ভানু’ হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে ভালোবাসতেন তিনি।
আজ সেই ঢাকার ভানুর মৃত্যুদিন। ‘ঢাকার ভানু’র প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ প্রণতি।