Categories
বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ
আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
পণ্যসভ্যতার যে জাগরণ আমরা একবিংশ শতাব্দীতে দেখছি তার সূচনা হয়েছিল ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে। বাংলা সাহিত্যের এই সম্রাট অবদান রেখেছেন বিজ্ঞাপন নির্মাণেও। কখনও ব্যক্তিগত অনুরোধ, কখনও বা অর্থের জন্য হরেক রকম পণ্য এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞাপন লিখেছেন রবি ঠাকুর। কখনও বা অনুমতি দিয়েছেন বিজ্ঞাপনে তার নাম ব্যবহার করার। এসব বিজ্ঞাপনে কখনও বা রবীন্দ্রনাথের উক্তি ব্যবহৃত হয়েছে বিজ্ঞাপন হিসেবে।
*
সরকারি রেল কোম্পানির বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা:
সরকারি রেল কোম্পানির বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা:
‘রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনদিন’
*
হিন্দুস্থান কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স নামক কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ!
হিন্দুস্থান কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স নামক কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ!
*
রবীন্দ্রনাথের লেখা সবচেয়ে রসোদ্দীপক বিজ্ঞাপন বোধহয় এটিই! এস সি রায় অ্যান্ড কোং কলকাতার ১৬৭/৩ কর্নওয়ালিশ রোডে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরি করত পাগলের ওষুধ। সেই ওষুধের বিজ্ঞাপনেও রবীন্দ্রনাথের প্রত্যয়ন পত্রের সন্ধান জুড়েছেন তারা! ডাক্তার উমেশচন্দ্র রায়ের জগদ্বিখ্যাত ‘পাগলের মহৌষধ’ শিরোনামের সেই বিজ্ঞাপনটি এমন-
‘৭০ বৎসরের ঊর্ধ্বকাল যাবৎ লক্ষ লক্ষ দুর্দ্দান্ত পাগল ও সর্ব্বপ্রকার বায়ুগ্রস্ত রোগীর আরোগ্য করিয়াছে। মূর্চ্ছা, মৃগী, অনিদ্রা, হিষ্টিরিয়া, অক্ষুধা, স্নায়বিক দুর্ব্বলতা প্রভৃতি রোগেও ইহা আশুফলপ্রদ। প্রতি শিশি মূল্য ৫ টাকা।
বিবরণী-পুস্তিকা বিনামূল্যে পাঠাই ।
“আমি ইহার উপকারিতা বহুকাল যাবৎ জ্ঞাত আছি”—রবীন্দ্রনাথ।
(রবীন্দ্রনাথ পাগলের ওষুধের উপকার সম্পর্কে বহুকাল যাবৎ জ্ঞাত আছেন!)
অনেকে আবার নিজের প্রতিষ্ঠানে প্রত্যয়নপত্রে ঝুলিয়ে রাখতেন এমন কিছু পোস্টার। যেমন : নেপিয়ার পেন্ট (পেইন্ট!)
*
বন্ধুস্থানীয় হেমেন্দ্র মোহন বোসের পিড়াপীড়িতে কবি লিখেছিলেন সুলেখা কালির বিজ্ঞাপন–
বন্ধুস্থানীয় হেমেন্দ্র মোহন বোসের পিড়াপীড়িতে কবি লিখেছিলেন সুলেখা কালির বিজ্ঞাপন–
‘সুলেখা কালি… এই কালি কলঙ্কের চেয়েও কালো।’
*
ব্রিটিশরা তখন ‘চা’ নামক এক নতুন ধরণের পানীয় বাঙালিদের কাছে বেচার খুব চেষ্টা করছে। জায়গায় জায়গায় খোলা হয়েছে চায়ের দোকান, লাগানো হয়েছে চায়ের বিজ্ঞাপনী পোস্টার! রবীন্দ্রনাথের কাছে সেসময় ধরনা দিয়েছিল অন্যতম বিশ্বসেরা চা কোম্পানি লিপটন। ওদের জন্যও পদ্য ফেঁদেছিলেন নোবেল লরিয়েট। এইখানে দেখা মেলে কবিগুরুর ইংরেজিকে আত্মীকৃত করার সেই ট্রেডমার্ক টেকনিক। অফিসকে আপিস বলার মতো রবীন্দ্রনাথ এখানে কেটলিকে বলছেন কাতলি—
ব্রিটিশরা তখন ‘চা’ নামক এক নতুন ধরণের পানীয় বাঙালিদের কাছে বেচার খুব চেষ্টা করছে। জায়গায় জায়গায় খোলা হয়েছে চায়ের দোকান, লাগানো হয়েছে চায়ের বিজ্ঞাপনী পোস্টার! রবীন্দ্রনাথের কাছে সেসময় ধরনা দিয়েছিল অন্যতম বিশ্বসেরা চা কোম্পানি লিপটন। ওদের জন্যও পদ্য ফেঁদেছিলেন নোবেল লরিয়েট। এইখানে দেখা মেলে কবিগুরুর ইংরেজিকে আত্মীকৃত করার সেই ট্রেডমার্ক টেকনিক। অফিসকে আপিস বলার মতো রবীন্দ্রনাথ এখানে কেটলিকে বলছেন কাতলি—
‘চা-স্পৃহ চঞ্চল
চাতকদল চল
কাতলি-জল তল
কলকল হে…’
*
স্বদেশীদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত ‘গডরেজ’ সাবানের এই বিজ্ঞাপনটি প্রথম প্রকাশিত হয় ইংরেজি দৈনিক দ্য অ্যাডভান্স- এ। বিজ্ঞাপনের ভাষাটি ছিলো–
Godrej’s is Toilet Soaps/ High Class Swadeshi Soaps/
“The best in the World’ Poet Rabindranath Tagore speaks ‘highly of our soaps’.
(সূত্র: দ্য অ্যাডভান্স, জানুয়ারি ৭, ১৯৩৭, পৃষ্ঠা: ১৩)
পরে বিজ্ঞাপনটি আনন্দবাজারেও প্রকাশিত হয়েছিলো। সেখানকার ভাষ্য–
“কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘গডরেজ সাবানের অপেক্ষা ভালো কোনো সাবান আমার জানা নাই। আমি ভবিষ্যতে শুধু এই সাবানই ব্যবহার করিব স্থির করিয়াছি।”