বিজেপির প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ
অবশেষে লোকসভা ভোটের প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল শাসক দল বিজেপি। দোলপূর্ণিমার সন্ধ্যায় মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৮৪ কেন্দ্রের প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির সম্পাদক জগৎ প্রকাশ নাড্ডা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর প্রদেশের বারানসি কেন্দ্র থেকেই ভোটে লড়বেন। দলীয় সভাপতি অমিত শাহ দাঁড়াচ্ছেন গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগর থেকে। এটাই হতে চলেছে অমিত শাহর প্রথম লোকসভা ভোট। গান্ধীনগর ছিল প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানির কেন্দ্র। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এটা এখন স্পষ্ট, দলে আর কোনো ভূমিকাই আদভানির থাকল না। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরযেওয়ালা টুইট করে বলেছেন, বিজেপির উত্থানের জন্য যাঁর কৃতিত্ব সর্বাধিক, সেই আদভানিকে ছেঁটে ফেলে দল বোঝাল যে প্রবীণ নেতাদের আর কোনো স্থান দলে নেই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং লড়বেন তাঁর পুরোনো কেন্দ্র লখনৌ এবং জাহাজ ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি দাঁড়াচ্ছেন নাগপুর থেকে। আমেথি থেকে দ্বিতীয়বার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। অভিনেত্রী হেমা মালিনীও আরও একবার লড়বেন উত্তর প্রদেশের মথুরা কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু পশ্চিম অরুণাচল প্রদেশ এবং ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠোর দাঁড়াচ্ছেন জয়পুর গ্রামীণ কেন্দ্র থেকে।
এগারো দিন আগে ভারতের নির্বাচন কমিশন লোকসভা ভোটের তফসিল ঘোষণা করে। সাত দফা ভোটের প্রথম পর্ব ১১ এপ্রিল। সেই পর্বের ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৫ মার্চ। অধিকাংশ দল যখন প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার অভিযান শুরু করে দিয়েছে, বিজেপি তখন ভুগেছে তীব্র দোলাচলে। বারবার বৈঠক সত্ত্বেও প্রথম দফার তালিকা চূড়ান্ত করতে বিজেপি নেতৃত্বের হিমশিম হাল হয়েছে। অবশেষে সেই তালিকা প্রকাশিত হলো যখন প্রথম দফার ভোটে মনোনয়নপত্র পেশের বাকি মাত্র চারদিন।
বিজেপির প্রবল প্রতিপক্ষ কংগ্রেস দেড় শতাধিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার (১৮ এপ্রিল ভোট, মনোনয়নপত্র পেশের শেষ দিন ২৬ মার্চ) প্রার্থীদের সমর্থনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দিনে দু-তিনটি করে জনসভা করছেন। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, এনসিপিসহ বামপন্থীরাও।
প্রার্থী পদ ঘোষণায় কেন এই বিলম্ব—সেই ব্যাখ্যা একাধিক। বিজেপি দলীয়ভাবে দিন কয়েক আগে জানিয়ে দেয়, ছত্তিশগড়ের মোট ১১টি লোকসভা কেন্দ্রে আগেরবার যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন ও জিতেছিলেন, তাঁদের কাউকেই এবার প্রার্থী করা হবে না। প্রার্থীরা হবেন সবাই নতুন মুখ। দলীয় সূত্র অনুযায়ী, এ ঘোষণাটা করা হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া দেখতে। বিজেপি নেতৃত্ব ঠিক করেছে, বহু ক্ষেত্রে জয়ী প্রার্থীদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বহু জয়ী প্রার্থীদের কেন্দ্রও বদল করা হবে। এসব ক্ষেত্রে আগের ভোটে জয়ী প্রার্থীরা যাতে বিক্ষুব্ধ হয়ে অন্য দলে চলে না যান, অথবা শেষ মুহূর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন—সে জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তালিকা প্রকাশে বিলম্ব করা হচ্ছে।
বিজেপির মিডিয়া সেলের এক সাংসদ-নেতার কথায়, ‘দলে প্রার্থী-প্রত্যাশীদের সংখ্যা প্রচুর। কার দাবি মানা হবে কার হবে না, এ সিদ্ধান্ত তাই অনেক ভাবনাচিন্তা করে নিতে হচ্ছে। সে কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তা ছাড়া বিরোধীরাও কোনো কোনো রাজ্যে এখনো জোট গঠন বা আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে পারেনি। বিরোধীদের সেই সমঝোতাও দল দেখে নিতে চায়।’
এই ব্যাখ্যার পাশাপাশি পঞ্জিকা অনুযায়ী ‘শুভ-অশুভ’ মুহূর্তও বড় হয়ে উঠেছে। দলীয় এক সূত্রের মতে, হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী দোলপূর্ণিমার আগের তিথি নাকি তেমন শুভ ছিল না। সে কারণে পূর্ণিমার আগে কোনো প্রার্থীর নাম জানানো হয়নি। শুভ-অশুভের এ বিষয়টি দলীয় নেতারা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। অশোক রোড থেকে পার্টি অফিস দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে নিয়ে যাওয়ার পর যতগুলো ভোট হয়েছে, কোথাও বিজেপি সুবিধে করতে পারেনি। কর্ণাটক জিততে পারেনি। ধরে রাখতে পারেনি রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ও। দলের নতুন সদর দপ্তর ‘অপয়া’ কি না—এমন একটা জিজ্ঞাসা শীর্ষ নেতাদের মনে জেগেছে। এ অবস্থায় দলীয় ধর্মগুরুদের পঞ্জিকার ব্যাখ্যা শীর্ষ নেতারা উড়িয়ে দিতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার রাতে যে রাজ্যগুলোর ১৮৪ আসনের নাম ঘোষণা হলো, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর প্রদেশের ২৮ আসন, মহারাষ্ট্রের ১৬টি, আসামের ৮টি, অরুণাচল প্রদেশের ২টি, ছত্তিশগড় ও জম্মু-কাশ্মীরের ৫টি করে আসন, কর্ণাটকের ২১টি, কেরালার ১৩টি, লাক্ষাদ্বীপের ১টি, মনিপুরের ২টি, মিজোরামের ১টি, ওডিশার ১০টি, রাজস্থানের ১৬টি, সিকিমের ১টি, ত্রিপুরার ২টি, তামিলনাড়ুর ৫টি, তেলেঙ্গানার ১০টি, উত্তরাখন্ডের ৫টি, পশ্চিমবঙ্গের ২৮টি, আন্দামানের ১টি ও গুজরাটের ১টি আসন।
উত্তর–পূর্ব ভারতে নতুন মুখের প্রাধান্য
উত্তর–পূর্ব ভারতেও বিজেপির লোকসভা ভোটের আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হয়েছে। বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই দলে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয় উত্তর–পূর্ব ভারতে। এ দিনের তালিকাতেও বাদ গেছেন বেশ কয়েকজন বর্তমান সাংসদ। আংশিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর হিন্দুত্ববাদী দলটিতে ক্ষোভ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটিই এখন দেখার।
উত্তর–পূর্ব ভারতের ২৫টি আসনের মধ্যে রয়েছেন ১৫ জন প্রার্থী। এখানকার আট রাজ্যেই বিজেপি সরকার। তবে অরুণাচল প্রদেশ, আসাম ও ত্রিপুরায় প্রার্থী বাছাই নিয়ে ব্যাপক সমস্যায় ছিল বিজেপি। দল ছেড়ে বহু নেতা-মন্ত্রী অন্য দলে চলে গেছেন। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত হলো প্রার্থী তালিকা। প্রথম দফার ভোটের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর চার দিন পর শাসক দল প্রকাশ করল আংশিক প্রার্থী তালিকা। ওদিকে কংগ্রেস এরই মধ্যে ৬ দফায় বহু কেন্দ্রের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিজেপি এত দিন কোনো প্রার্থীরই নাম ঘোষণা করেনি।
এবারের প্রার্থী তালিকায় চমক বলতে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থীদের বদল করা হয়েছে। ত্রিপুরার দুটি আসনের মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরায় প্রার্থী করা হয়েছে প্রতিমা ভৌমিককে। আর রেবতী মোহন ত্রিপুরা প্রার্থী হচ্ছেন পূর্ব ত্রিপুরা আসনে। উত্তর–পূর্ব ভারতে ১১ এপ্রিল ছাড়াও ১৮ ও ২৩ এপ্রিল রয়েছে ভোট।
উত্তর–পূর্ব ভারতে ২৫টির মধ্যে বর্তমানে কংগ্রেস ও বিজেপির ৮ জন করে লোকসভা সদস্য রয়েছেন। সিপিএমের রয়েছে দুটি আসন। বাকি সবই বিভিন্ন আঞ্চলিক দল ও একটি নির্দলের।
সূত্রঃ নিউজ18