বর্ষার কবিতা

Reading Time: 2 minutes

 

ও বৃষ্টিদিন ও সন্ধ্যা

মেঘের গ্রীবা ছুঁয়ে নেমে যাচ্ছে মেঘ- আত্মজ সন্ধ্যায়;
মনের দিগন্তে যে এসে দাঁড়ায় রোজ,
বৃষ্টির পদাবলি শুনে সে-ও ঘুমিয়ে পড়ে
বুকের সরোবরে!

মাছরাঙার পালকে জলজ গন্ধ ঢেলে শতবর্ষী বৃক্ষ
মাতাল করে অলৌকিক জলের শরীর।
তাপদগ্ধ ব্যাকুল বিরহী- মনোস্নানে তুলে নেয়
বর্ষণসিক্ত সজীবতা আর ঋতুর পরিহাস ভেঙে
সঞ্চয় করে ঈশ্বরের ছায়া!

প্লাবন সন্ধ্যায়- মৌন আঁধারে ঝুলে আছে চাঁদের শরীর;
এসো আজ পাটাতনে বসে সুবাসিত সৌরভ মাখি,
ও বৃষ্টিদিন ও সন্ধ্যা, মনস্তাপ মুছে ফেলে এই দিনে
এসো যুগল ভেলা সাজাই মেঘের সরোবরে।

 

বৃষ্টির এপিক

আটপৌরে বৃষ্টির গন্ধ হেঁটে এলে বুকের বারান্দায় কিছু মনস্তাপ গোপন ঐশ্বর্য দিয়ে ঢেকে রাখে অশ্রুর বেদনা, মেঘের চিরকুটে সঞ্চিত ক্ষোভ ও চঞ্চলতা লাজুক সম্ভাষণে ঝরে যায়। ঝমঝম, ঝমঝম। টানাস্রোত ভেঙে কত আর ঘুরে দাঁড়াবো জলের সীমানায়! ঘুমের মন্ত্রণা জাগিয়ে উড়ে গেছে যে পাখি চন্দ্রচ্যুত আলোর আকাশে, পলাতক গন্ধ তার ঢেকে রাখি বুকের বাস্তবতায়, মসৃণ আদরে।

বৃষ্টির গন্ধ হেঁটে এলে বুকের বারান্দায়, জৈষ্ঠ্যের মধুযন্ত্রণা ভুলে, নিদ্রাহীন রাতে লিখে রাখি বৃষ্টির এপিক!

 

 

সময়যাপন

বৃষ্টির সঙ্গে অশ্রুপাতের সম্পর্ক কতটা নিবিড়
সৎ প্রেমিকমাত্রই তা বোঝে
অথচ বড্ড অসতর্ক তারা-অভিমানী-ও
কিংবদন্তির টাট্টুঘোড়া হওয়ার খায়েশ নেই বলে
বেদনা লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসে বৃষ্টির স্বচ্ছ জলে
বৃষ্টিবাচক দৃশ্যগুলো

 

১. উড্ডয়ন
সূর্যের প্রার্থনা ফেলে জলে ভাসে পাতার উঠোন
ইচ্ছেগুলো সকরুণ- জলবাচক হাওয়ার দীর্ঘ ওড়াউড়ি
ঘুমপ্রবণ দেহের ভাঁজে সমৃদ্ধ এক বৃষ্টিপ্রহর
আড়মোড়া ভাঙা মাতাল…

 

২. অপেক্ষা

স্নেহময় ছায়ার পাশে ঘুরে দাঁড়ালে সুদীর্ঘ চুম্বন
ভাবনার যোগফল শূন্য করে বৃষ্টিবাচক সন্ধ্যায়
উড়ে যায় বাদামী চুল, খানিক পারফিউম ঢেলে
রাতের বাহুতে…

 

৩. অভিমান

কেনো তবে অকারণ অভিমান? প্রশ্ন হতে পারে
উত্তর নেই। শুধু জানি, সহস্র বৃষ্টির ফোটায় জমে থাকে
অপেক্ষার বিহ্বলতা। শোডাউন উন্মুুক্ত হওয়ার আগে
এই অভিমান ছুঁয়ে যাক উড়ালপ্রবণ মন…

 

৪. সংযম
বৃষ্টিভেজা অক্ষরগুলো ফিরে এলে মুঠোফোনে
সম্পর্কের অপেক্ষাঘরে শূন্যের কোলাহল
গভীর আকুতি আর ঘুমহীন নিমগ্নতা নিয়ে
ছুটিবার রমনহীন- সুদীর্ঘ বিরহ-সকাল…

 

 

অগণন বৃষ্টির ভেতর

অগণন বৃষ্টির ভেতর লুকিয়ে পড়বে অপঠিত গ্রন্থগুলো; পরচর্চা সিকেয় তুলে বহু শতাব্দী ধরে ঝুলতে থাকবে বিচিত্র রঙ; বর্ণ-অন্ধ জিজ্ঞাসার দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে অবসন্ন, ঠোঁটলাল টিয়েগুলোও হারিয়ে ফেলবে আজন্ম কৌতূহল! অথচ, লোভাতুর আঙুলগুলো তখনও ভেসে বেড়াবে না-দেখা আঙুরপাতায়!

এভাবে ভেসে থাকব, বহুকাল- গীত হতে থাকবে প্রকাশ্যে, স্বরের নতুনত্ব; কখনও হাঁটতে হাঁটতে, পথিমধ্যে অনুমোদন পেয়ে যাবে সূর্য ফোটার দিন। আপাতদৃশ্যের ভেতর উড়ে যাবে সাবলীল আড়াল! দেখতে পাবে ঝুলে আছে অস্তিত্ব, অপসৃয়মান দিগন্তরেখায়-

তোমাকে ভাবতে থাকা রাত্রিশেষে যদি না আসে প্রত্যুষ, হিরন্ময় সময়ের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তবুও রূপকথার কোনও বাঁকে অপেক্ষা ফুটে থাকবে লাল ও নীল- অগণন;

 

এমন দিনেই

এমন দিনেই চলে এসো, যেভাবে-
স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উড়ে আসে মেঘের সম্বরা
জীবন তো নিয়মেই ভাংচুর আর দিনগুলো
নেচে যায় চোখের তারায়- অবিরাম;

বরং এমন দিন সাক্ষী রেখে চলে এসো,
বরষামথিত রাজপথে ভিজতে ভিজতে
ঈষৎ হাসিতে, প্রাণের খুব কাছেই-

বিন্দু, অতীতের বাতুলতা সরিয়ে বিপুল বাঁচো…

 

 

জলবউ

জলবউয়ের হাত ধরতে গিয়ে পৌঁছে যাই বৃষ্টির বারান্দায়, অতশী কাচের শরীর থেকে গন্ধ চুরি করে ফিরে আসি ফের; যে বিদ্যায় তোমার ভূগোল ওড়ে মাঝ আকাশে, তার অনুশাসন থেকে নামিয়ে আনতে দেহের করাত। একদিন প্রাচীন পাখিদের কোলাহল ভাঙা ঐশ্বর্য ডুবে গেলে সঘন সন্ধ্যায়, তার নিতম্বের হাড় ঘঁষে ময়ূর বানাতে বানাতে বার বার ফিরে যাবো জলমঞ্চে, ঝুলনের আবির মেঘে সমুদ্রস্নানে ওড়াবো জলঘুড়ি…

কেননা, বৃষ্টিচর্চিত অভিপ্রায়গুলো তোমার স্পর্শে জেগে উঠেছে ফের।

 

 

অক্ষরের নদী

বৃষ্টিফুল হয়ে ঝরে পড়া অক্ষরের নদী
ঢেলে দেয় রূপ-রস-গন্ধ, বর্ণহীন; আর
গ্রীবা উঁচিয়ে রাজহাঁসের চলে যাওয়া দৃশ্যে
থমকে যায় তোমার দৃষ্টি, তখন
মাথার মধ্যে কেবলি ঘুরপাক খায় সন্ধ্যার রেস্তোরাঁ
প্রিয় জেসিকা, দেখো-
ভিউক্যাসেলে রাত্রি নামতে এখনো ঢের বাকি…

 

 

 

 

0 thoughts on “বর্ষার কবিতা

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>