ঝরে যাওয়া দিনগুলো
জীবন যদি হয় একটা খেরোখাতা তবে জীবনের পরতে পরতে একেকটি ঘটনা, দুঘর্টনা, আনন্দ, বেদনা, শোক, দুঃখ জায়গা করে নেয় সেই খেরোখাতায়। সব মানুষই বোধহয় জীবনের একটা সময়ে এসে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠে। মানস পটে কত শত স্মৃতির ডালপাল উঁকি দেয়।
সেই সব স্মৃতিকথা কেউ ব্যাক্ত করতে পারে কেউ পারে না। প্রকৌশলী মির্জা নূর আহম্মেদের ‘ঝরে যাওয়া দিনগুলো’ তেমনই একটি আত্মজীবনীমূলক বই। বইটিতে ১৯৪২ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লেখকের জীবন সম্পর্কিত ঘটনাগুলোই বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে তার বাল্যকাল, স্কুলজীবন এবং বুয়েট জীবনের মধুর স্মৃতিগুলোর বর্ণনা আছে। তার ব্যবসা-বাণিজ্যের অভিজ্ঞতার কথা এবং পরিবারের ছয়জনের মৃত্যুর হৃদয় বিদারক বর্ণনা পড়লে চোখ অশ্রু-সজল হয়ে ওঠে। এরপর রয়েছে গৃহকর্মী নারীদের কার্যকলাপের হাস্যকর বর্ণনা। লেখকের নামাজ শুরুর কাহিনী, হজ ও ওমরাহর অভিজ্ঞতা। রয়েছে লেখকের পাত্রী দেখার রোমাঞ্চকর কাহিনী। সুঁইয়ের প্রতি তার ভীতি এবং অসুখ বিসুখের বর্ণনা। এছাড়াও আছে ট্রাফিক জ্যামের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা। সবচেয়ে আর্কষণীয় অংশ হচ্ছে লেখকের নানা-নানির ত্রিশ বছরের বর্ণিল,হাসি-কান্নায় ভরা দাম্পত্য জীবনকাহিনী। আছে লেখকের শিশুকালে সংঘটিত স্বাধীনতাযুদ্ধের বর্ণনা। শিশুমনে গেঁথে যাওয়া স্মৃতির পাতা থেকে নেওয়া এই কাহিনী সত্যিই খুব হৃদয়স্পশী।
প্রকৌশলী মির্জা নূর আহম্মেদের জন্ম মুন্সিগঞ্জ হলেও দেশের বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার হাজীনগর গ্রামে। জন্মলগ্ন থেকেই তিনি ঢাকা শহরের বাসিন্দা। ছোটবেলায় বাবার চাকরির কারণে কিছুদিন ঢাকার বাইরে কাটলেও ছয়-সাত বছর বয়স থেকেই ঢাকা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। ঢাকার রায়ের বাজার হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তী সময়ে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে সানরাইজ নামে একটি কোচিং সেন্টার খুলে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একসময় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ইচ্ছুক প্রায় সবাইকেই সানরাইজের শরণাপন্ন হতে হতো। বর্তমানেও তিনি সানরাইজ কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক। তিন জনই ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করছে বা করেছে। মির্জা নূর আহম্মদ একজন সদালাপী মানুষ এবং সাধারণ জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথমদিন থেকেই বইটি অন্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাবে। বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী মাসুম রহমান।