| 19 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস

চে গুয়েভারার বহুমাত্রিক জীবন

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

চে গুয়েভারা। বিশ্ব ইতিহাসে যিনি বিপ্লবের এক মহানায়ক হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন। একসময় যে মার্কিন ভিত্তিক মিডিয়াগুলো চে গুয়েভারাকে বিশ্ব সন্ত্রাস মানবতার জন্য হুমকি হিসেবে অপপ্রচার চালিয়েছে পরবর্তী সময়ে তারাই আবার চে গুয়েভারার নামে গুণকীর্তন। অপপ্রচার কিংবা নীতিহীন পুঁজিতন্ত্রের অবাধ বাণিজ্যের শিকার হয়ে নিজ নিজ পণ্য বিক্রির প্রসারে চে’র নাম ব্যবহার সে যাই হোক না কেন চে দিন দিন মুক্তির লড়াইয়ে প্রেরণা হিসেবেই রয়ে গেছেন।

সুঠাম দেহী, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, শৈল্পিক মুখাকৃতি আর অসাধারণ মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন এই মানুষটিকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে কম আলোচনা হয়নি। মিথ হয়ে যেমন ছড়িয়ে আছে যেমন নানা গল্প আবার তেমনি প্রচুর গবেষণা থেকেও বের হয়ে এসেছে নানা ধরনের তথ্য উপাত্ত।

সেসব গবেষণা ও তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায় বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী ছিলেন আর্নেস্ত চে গুয়েভারা। বিপ্লবের এক মহা কবিতা হয়ে ওঠা চে গুয়েভারার বহুমাত্রিক জীবনের কিছু কথা তুলে ধরা হলো।

মেধাবী শিক্ষার্থী চে

শৈশবেই চে গুয়েভারা শিক্ষাজীবনে ছাত্র হিসেবে নিজের ছাপ রেখে যান। তিনি মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্কুলে সব সময় ভালো ফলাফল করতে।

উচ্চ শিক্ষায়ও চে গুয়েভারা সেই ধারাবাহিকতা রাখতে সক্ষম হন। জীবন চিন্তা দর্শনের নানা উত্থান পতন বাক ঘুরে যাওয়া জীবনের গতি পথেও তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। চিকিৎসক হিসেবে খুবই ভালো ফলাফল করেন পরীক্ষায়। বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রের্কড পরিমাণ মার্কস নিয়ে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তির্ণ হন চে। এমনকি সব চেয়ে কম বয়সী এমবিবিএস পরীক্ষার্থী হিসেবেও তার নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে রিফলিস বিলিভ ইট আর নট এ।

লেখক চে

বিপ্লবী চে গুয়েভারা লেখক হিসেবেও নিজের সুনাম ছড়িছেন। এক সময় প্রচুর ডায়রি লিখতেন। সেই সব লেখা পড়ে বই আকারে প্রকাশ হয়।

চে গেভারা কিউবান ভাষায় লিখেছেন প্রায় ৭০টি নিবন্ধ, ধারণা করা হয় ছদ্মনামে কিংবা নামহীন অবস্থায় লিখেছেন ২৫টি।

মৃত্যুর পূর্বে তার লেখা বলিভিয়ার ডায়রি ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পায়। লিখেছেন কবিতাও। তরুণ বয়স থেকেই কবিতা লিখতেন। তার প্রিয় কবি ছিল পাবল নেরুদা। তার প্রিয় সহযোদ্ধা ফিদেলকে নিয়ে লেখা কবিতাও সারা বিশ্বে কবিতা প্রেমিদের কাছে সমাদৃত হয়েছে।

এ তিনি লিখে দিয়েছেন পাঁচটি বইয়ের ভূমিকা। বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে লেখা তার অসংখ্য চিঠির মধ্যে সংগৃহীত আছে ৭০টির মতো। তার লেখালেখি নিয়ে এখন পর্যন্ত বের হয়েছে নয় খণ্ড রচনাবলি।

ফটোগ্রাফার চে

বিপ্লবের জন্য যে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন সেই হাত ছবি তোলায়ও দক্ষ ছিল। ছুবি তুলতে পছন্দ করতেন চে। তাই তো বিভিন্ন সময় তিনি ছবিও তুলেছেন।

চে গুয়েভারার তো ছবি দিয়ে রীতিমতো প্রদর্শনী হয়ে গেল জাপানে। ৯ আগস্ট বুধবার টোকিওর ফটোগ্রাফিক মিউজিয়ামে ১৮ দিনব্যাপী চে গুয়েভারার নিজের তোলা ছবির প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীতে তার তোলা ২৪০টি ছবি স্থান পায়। যার ভেতর কয়েকটি ছবি রয়েছে জাপানে হিরোশিমায় পরিদর্শন কালে তোলা।

চে’র তোলা ছবিগুলো সংরক্ষিত ছিল তাঁর স্মরণে হাভানায় গড়ে ওঠা জাদুঘর ও গবেষণাকেন্দ্র সেন্ত্রো দে এসতুদিয়স চে গেভারায়।

পর্যটক চে

চে’র কৌতুহলী মন সব সময়ই নতুন কিছু জানার জন্য আকুল হয়ে থাকত। তার প্রমাণ মেলে তার জীবন যাপন প্রক্রিয়াতেই। ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন চে। প্রথম বারের মতো বড় পরিসরে ভ্রমণে বের হন ১৯৫০ সালে। একটি সাইকেলে ইঞ্জিন যুক্ত করে একাই বের হয়ে পড়েন আর্জেন্টিনার পথে। নিজ দেশকে ঘুরে ঘুরে দেখেন এই তরুন চে। শুধু প্রাকৃতিক শোভা আর দর্শনীয় স্থানই নয় তিনি ঘুরে ঘুরে দেখতেন মানুষের জীবন যাপন দুখ হাসি আনন্দকে।

সময়ের সঙ্গে এই ভ্রমণ নেশা আরো বাড়ে। এরপর ১৯৫২ সালে বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদোকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ল্যাটিন আমেরিকা ভ্রমণে।মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের সেই যাত্রা হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক ভ্রমণ।

এরপর বিপ্লব। কিউবার ক্ষমতায় যাওয়া অনেক কিছু ঘটলেও চে বিভিন্ন কাজ নিয়েই বেরিয়ে পরতেন তাঁর রাজনৈতিক ভ্রমণে।

চিকিৎসক চে

বিপ্লবী চে গুয়েভারা চিকিৎসক হিসেবেও সুনাম আছে। যেখানেই লড়াই করেছেন সেখানে চিকিৎসক হিসেবেও আর্বিভূত হয়েছিলেন এই গেরিলা নেতা। কিউবা বিপ্লবের সময় প্রথমে তো তিনি চিকিৎসক হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত হন দলে। পরে অস্ত্র তুলে নিয়েও নেতৃত্ব দেন গেরিলা দলের। তবে যুদ্ধের পাশাপাশি তিনি স্থানীয় দরিদ্র জনগণেরও চিকিৎসা সেবা দিতেন। বিপ্লবের উদ্দেশে কঙ্গোতে গিয়েও তিনি রীতিমতো চিকিৎসা ক্যাম্প খুলে বসেছিলেন। স্থানীয় দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা দিতেন নিয়মিত। শুধু তাই নয় কিউবা যে আধুনিক চিকিৎসার বিপ্লব ঘটিয়েছে সেখানেও চে’র অবদান অন্যতম।

অনন্য ব্যক্তিত্বের এক স্টাইলিস্ট পুরুষ

চে গুয়েভারার ব্যক্তিত্ব যেমন আর্কষণীয় ছিলো তেমনি ছিল তার স্টাইলিস্ট চাল চলন। পোশাকে-আশাকে সব সময় পরিপাটি ছিল তার চাল-চলন। চে গুয়েভারার বিপ্লবী আর্দশের বাইরেও নেহাত স্টাইলিস্ট তরুণদের কাছেও হয়ে উঠেছেন জনপ্রিয়। বিশ্বজুড়ে যুগ যুগ ধরে তরুণরা তাঁর মতো চুল-দাড়ি কিংবা পোশাকি সাজ নিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।

দীর্ঘ চুল- দাড়ির গঠন আর তারকা খচিত টুপিতে চে’র দশ্যগত রূপেও নজর কাড়তেন সবার। শুধু তাই নয়, সুদর্শন এই পুরুষের ছবিও স্টাইল আইকন হিসেবে পোস্টার হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফটোগ্রাফের ছবিতে ধরা পরেন তিনি। আজ সেই সব ছবিই হয়ে উঠেছে পোস্টার।

যদিও চে গুয়েভারা তাঁর রাজনৈতিক আর্দশের জায়গা থেকেই এই ধরনের প্রচার পছন্দ করতেন না।

বলিভিয়ায় আটক অবস্থায় যে মানুষটিকে হত্যা করা হয়েছিল তাকে কি আসলেই হত্যা করা গেছে? তারাতো মূলত মানুষ চে কে থামিয়ে দিতে চায়নি। তারা চেয়েছিল তাঁর আদর্শ রাজনীতি লড়াই কে থামিয়ে দিতে। কিন্তু যুগে যুগে চে’র আদর্শ সাহস হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মুক্তিপ্রেমি মানুষের কাছে। চে গুয়েভারা অমর হয়ে উঠেছেন এভাবেই।

 

 

 

 

সূত্রঃএনটিভি

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত