| 3 মে 2024
Categories
গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য

চোরাকাঁটা (পর্ব-২০)

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

নিজের ল্যাপটপটাকে কখনো হাতছাড়া করতো না অনিক। অফিসে সাথে করে নিয়ে যেত। বাসায় এসেও বেশিরভাগ সময়ে ঐ ল্যাপটপ গুঁতোগুঁতি করেই সময় কাটতো তার। মাঝে মাঝে এই নিয়ে সুমনার সাথে একটু আধটু কথা কাটাকাটিও যে হয়নি কখনো, তা নয়। সুমনা রাগ করে বলতো,

‘অফিস থেকে ফিরেও ওটা নিয়েই বসতে হবে তোমার? একটু কথাবার্তা বললেও তো পারো কিংবা টিভিই দেখো! তা নয়… দিনরাত শুধু ঐ এক ল্যাপটপ নিয়েই যত ব্যস্ততা।’

অনিক তর্ক করতো না। কিংবা বেশি কথা বলে অযথা নতুন কথার জন্ম দিত না। এটা এক আশ্চর্য গুণ ছিল অনিকের। সুমনার কখনো কোনো কারণে রাগ হলেও অনিক সেটাকে আরেকটু উস্কে দিত না। বরং চুপ করে থেকে সুমনার রাগটাকে আগে পানি বানাতো। তারপর কখনো কিছু বোঝানোর প্রয়োজন হলে ঠান্ডা মাথায় বোঝাতো। ল্যাপটপের প্রসঙ্গে অবশ্য একেবারে চুপ করে থাকেনি অনিক। অল্প কথায় শুধু বলেছিল,

‘অফিস থেকে ফিরে এলে কি কাজও ফুরিয়ে যায় নাকি?’

সেই সার্বক্ষণিক আগলে রাখা ল্যাপটপকে কিছুটা সময়ের জন্য হাতে পাওয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার ছিল। অনিক যখন গোছলে যেত, তখনই ধুকপুক বুকে ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড কী খুলতে চেষ্টা করতো সুমনা। খুব বেশি সময় হাতে পেত না তখন। শুধু শেষের সেই দিনটাতেই অনিক বেশ অনেকটা সময় বাইরের ঘরে বসে ছিল। টিভি দেখছিল, মোবাইলে দীর্ঘ সময় নিয়ে কার সাথে যেন কথা বলছিল। সুমনাকে আনিসুল হক প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন,

‘কিছু দেখতে পারলে? খুলেছিলে ওর ল্যাপটপ? কাজটা করা জরুরি সুমনা! লেগে থাকো।’

এই জোর তাগাদা থেকে সেদিন মরিয়া হয়েই অনিকের ল্যাপটপটা অন করেছিল সুমনা। দরজাটা অবশ্য লক করে নিয়েছিল আগে। কারণ অনিক হুট করে ঘরে ঢুকে পড়লে তাকে দেওয়ার মতো কোনো অযুহাতই থাকতো না সুমনার হাতে।

আজ ভাবলে মনে হয়, কেন সেদিন ঐ ল্যাপটপটা অন করেছিল সুমনা? না করলে কী এমন ক্ষতি হতো! অনিক তো চলেই গেল সেই দিনই। কিছু বিষয় না হয় সুমনার অজানাই থাকতো চিরদিনের জন্য।

সেদিন দ্রুত হাতে প্রতিটা ড্রাইভের সব ক’টি ফোল্ডার খুলে ফাইলগুলো দেখে যাচ্ছিলো সুমনা। কতক্ষণ সময় হাতে পাবে জানতো না সে। তাই দুনিয়ার সবকিছু ভুলে নিবিষ্টমনে নিজের কাজ করে যাচ্ছিলো। ডি ড্রাইভ, ই ড্রাইভ সব একেবারে ঠিকঠাক। কিছুই নেই আপত্তি করার মতো। কিন্তু এফ ড্রাইভটা খুলতেই সুমনার হাত পা জমে একেবারে বরফ হয়ে গিয়েছিল। 

এফ ড্রাইভে পিকচার নামে একটা ফোল্ডার ছিল। সেই ফোল্ডারে যেসব ছবি ছিল তা দেখার মতো মানসিক অসুস্থতা সুমনার কোনোদিনও ছিল না। আর এসব ছবি অনিকের ল্যাপটপেই বা কী করছে, সেটাও বুঝতে পারেনি সে। ছবিগুলো দেখার মতো মানসিক অবস্থা না থাকলেও প্রতিটি ছবিই সেদিন দেখেছিল সুমনা। কিশোরী বা অল্প বয়সী সব তরুণীর ছবি। দেখে বোঝা যায়, সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে তারা। পরনে কিচ্ছু নেই… একটা সুতোও না।ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে যথেষ্ট হিম্মত জোগাতে হচ্ছিল সুমনাকে। বেশিরভাগ মেয়েরই চোখ বোজা। দেখে মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে। অথবা অজ্ঞান হয়ে আছে। কে বলতে পারে! দু’একজনের চোখ খোলা। তাদের মুখভঙ্গিতে ভয়, আকুতি। স্বেচ্ছায় তাদের ছবিগুলো যে তোলা হয়নি সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। 

সুমনার হাত পা কাঁপছিল। অনিক মেয়েগুলোর নগ্ন ছবি এভাবে নিজের ল্যাপটপের ফাইলে রেখে দিয়েছে! কিন্তু কেন? এই মেয়েগুলোর সাথে অনিকের কীসের সম্পর্ক? একে একে সবগুলো ছবিতেই চোখ বুলাচ্ছিল সুমনা। ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো একটু একটু করে। এসব কী দেখছে সে? তার স্বামীর ল্যাপটপে লুকানো রয়েছে এসব ছবি…যে স্বামীকে অবিশ্বাস করার মতো আজ পর্যন্ত কোনো কারণ খুঁজে পায়নি সুমনা।

একটা ছবিতে চোখ পড়তেই অবশ হয়ে গেল সুমনা। দু’হাত একেবারে স্থবির হয়ে গেল তার। মনে হচ্ছিলো মাথাটা একদম শূন্য, ভেতরে ভোঁ ভোঁ করছে ঝিঁঝিঁ পোকা। এ কী…এসব কী! এ যে রুমানা! শুয়ে আছে বিছানায়। সুমনার অতি চেনা সেই বিছানা। এই বিছানার চাদর সে নিজের হাতে পাট পাট করে বিছিয়ে দেয় রুমানার ঘরে। রুমানার দু’চোখ বোজা। গাল বেয়ে লালা নামছে। রুমানা কি ঘুমোচ্ছে? অনিক এভাবে কেন ছবি তুলেছে রুমানার? কখন তুললো? রুমানা বাঁধা দিলো না কেন?

মাথা ঘুরছে সুমনার। ধপ করে একসময় বসে পড়ে নিজের বিছানায়। উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছিল ওর। বসতে গিয়ে সাইডটেবিলে রাখা ল্যাম্পটা ধপ করে নিচে পড়ে যায়। ঠিক তখনই অনিকের গলার আওয়াজ কানে ভেসে আসে সুমনার।

‘এ্যাই সুমনা! কী হয়েছে? কিছু পড়ে গেল নাকি?’

সুমনা এক মুহূর্ত দেরি না করে ফোল্ডার ক্লোজ করে দিয়ে ল্যাপটপ শাট ডাউন করে রাখে। তারপর নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে নিতে নিতে রুমের দরজা খুলে ফেলে। তবুও হয়ত নিজের চেহারার বিধ্বস্ত রূপ লুকাতে পারে না অনিকের কাছ থেকে। অনিক তাকে দেখেই কিছু একটা আন্দাজ করে। বিস্মিত জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকে সুমনার দিকে। সুমনা তখন নিজের মধ্যে নেই। কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা তখন নেই তার। ওর ইচ্ছে করছে, গলা ছেড়ে কাঁদে। নিজেকে লুকাতেই সুমনা বলে ফেলে,

‘খারাপ লাগছে। একটু ছাদে যাবো!’ 

অনিক আপত্তি করে না। যদিও প্রশ্ন তোলে…এই অসময়ে ছাদে কী কাজ?

ছাদে গিয়ে নিজেকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করায় সুমনা। অনেক জিজ্ঞাসা তার নিজের কাছে। সব একে একে জানা চাই। সবগুলো উত্তর আগে নিজের মনঃপুত হতে হবে। তারপর সেগুলোকে সামনে আনতে হবে। অথবা পুলিশ কমিশনার আনিসুল হকের কাছে উত্থাপন করতে হবে। 

অনিকের ল্যাপটপে ওসব কাদের ছবি? এমন সব ছবি তো খারাপ ছেলেদের কাছে থাকে। অনিকের কাছে কেন? এই মেয়েগুলোর সাথে কি কোনো সম্পর্ক আছে অনিকের?

রুমানার এমন ছবি কেন তুলেছে অনিক? কীভাবে তুললো? সুমনা মাঝে মাঝে রুমানা আর অনিককে বাসায় রেখে চট করে একটু মার্কেট থেকে ঘুরে আসে। অনিকের ভরসায় তো কতদিনই রেখেছে রুমানাকে! সেই সময়গুলোতেই কি এসব কাজ করেছে অনিক? 

রুমানাকে দেখে বোঝা যাচ্ছিলো সে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। সেটাই হওয়ার কথা। সচেতন অবস্থায় থাকলে কিছুতেই নিজের বিকৃত এই মনোষ্কাম পূরণ করতে পারতো না অনিক। রুমানা কিছুতেই সেটা করতে দিতো না! একজন মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েও জানে, শরীরে আঘাত না করেও কীভাবে একটি মেয়েকে সবচেয়ে বেশি আহত করা যায়। ধর্ষণ একটি মেয়ের পুরো জীবনটাকে বিকলাঙ্গ করে দেয়। একজন ধর্ষিতা মেয়ে তার সারাজীবনেও এই মানসিক বিকলাঙ্গতা থেকে মুক্তি পায় না। না জানি কত মেয়ের জীবনে অমনিশা ডেকে এনেছে অনিক। আর তার সাথেই কী না সুমনার দিনরাত্রির কাব্য রচনা হয়ে চলেছে। 

যাকে নিজের মেয়ের মতো করে ছোটবেলা থেকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে সুমনা, সেই প্রিয়বোন রুমানার প্রেগন্যান্সির জন্যও তাহলে তার স্বামী অনিকই দায়ী? হায় সর্বনাশ!

নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে নিয়েই নিচে নেমেছিল সুমনা। 

কোনো কথা নয়, কোনো প্রশ্ন নয়…নিজেকে অবরুদ্ধ করে নিয়েছিল নিজের মধ্যে। এখন কথা বলার সময় নয়। অনিককে এখন কিছুই বলা যাবে না। এভাবে অনিককে পাকড়াও করা কিছুতেই সম্ভব নয় সুমনার পক্ষে। বরং সময় সুযোগমত সব প্রশ্নের উত্তর একে একে জানতে হবে। কেন এভাবে তাকে ঠকালো অনিক? অনিকের বাবা-মা কেন একবারের জন্যও বাপ মা হারা দুটি মেয়ের কথা ভাবলো না? তাদের ছেলে যে স্বভাবগতভাবে এতটা নিম্ন মানসিকতার, এটা কি তারা বাবা-মা হয়েও বুঝতে পারেননি? এটা তো মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়! অবশ্য তাদের আর কী দোষ? অনিকের সাথে সুমনার এই বিয়ে তো তার নানাজানের অতি আগ্রহেরই ফসল। নাতনিকে জমিদারবাড়ির বউ বানিয়ে মানুষের কাছে বড় মুখ করে গল্প করবে। দশ গাঁয়ের মানুষের কাছে গর্বে দশ হাত উঁচু হবে তার নানাজানের মাথা। কেউ যদি নাতনীকে নিজের স্বপ্ন সওয়ারী বানায়, তাতে অন্যদের কীই বা বলার আছে?

সেদিন নীচে নামার কিছুক্ষণ পরেই অনিক রেডি হয়ে নিতে বলেছিল। পুলিশস্টেশনে নাকি যেতে হবে। আনিসুল হক যেতে বলেছেন। সুমনা খুশিই হয়েছিল কথাটা শুনে। যা কিছু হওয়ার আজকেই তবে হয়ে যাক। এতকিছু জেনে যাওয়ার পর আর এখানে এক মুহূর্তও নয়। একজন বিকৃতমস্তিষ্কের মানুষের সাথে হাসিমুখে বাস করা, তার সাথে কথা বলে যাওয়া, তার জন্য প্রতিদিন রান্নাবান্না করা কিছুই আর সুমনার পক্ষে সম্ভব নয়।

আনিসুল হক বলেছিলেন, তিনি না জানানো পর্যন্ত সুমনা যাতে নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। তার নির্দেশের জন্য যেন অপেক্ষা করে। সেটা কী হতে পারে, তখন বুঝতে না পারলেও পরে বুঝেছিল সুমনা। আনিসুল হক আরো আগেই আসল কালপ্রিটকে ধরে ফেলেছিলেন। শুধু অপেক্ষা করছিলেন, উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের।

অনিকের কথা শুনে তাই পুলিশস্টেশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেরি করেনি সুমনা। অথচ ঠিক তার আগেই এলো অনিকের বাবার ফোন। অনিকের মা নাকি অসুস্থ। দেখতে চেয়েছেন একমাত্র সন্তানকে।

ক্যাচ করে হ্যাঁচকা টান লাগতেই সুমনার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায়।

ওরা পৌঁছে গেছে। ভাড়া মিটিয়ে নামতে নামতে শান্ত বলে,

‘এরপর থেকে উবার নিব। আর রিক্সায় আসবো না। এই দস্যুটার জন্য তোমার কষ্ট হলো বলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ 

শেষের কথাগুলো বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে শান্ত। সুমনা দপ করে হেসে ফেলে। শান্তর ওপরে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যায় না। মনে মনে ভয় পায় সুমনা। জীবনের এই হঠাৎ পাওয়া সুখটুকু সইবে তো ওর পোড়া কপালে? এটুকু আবার হারিয়ে যাবে না তো!

সুমনাকে হেসে ফেলতে দেখে শান্ত আশ্বস্ত হয়। মনে মনে ও অনেক প্রতিজ্ঞা করে। সুমনাকে আর কখনো কষ্ট পেতে দেবে না। বেচারী এমনিতেই অনেক সয়েছে। তবু মানুষের স্বভাব বলে কথা! একটা কথায় নিজের অজান্তেই দশ কথা উঠে আসে। কথায় কথা বাড়ে। তা থেকে মন পোড়ে। মনে মনে হাসে শান্ত। সুমনাকে বলে,

‘কিন্তু একটা বিষয় বুঝলাম না। আনিস আংকেল আজ হঠাৎ এতদিন পরে কেন এভাবে ডেকে পাঠালেন? কিছু বলার থাকলে ফোনেই তো বলা যেত!’

সুমনা অনিশ্চিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। সে নিজেও মনে মনে এই কথাই ভাবছে। সবকিছু মিটে যাওয়ার পরে আবার কেন এই হঠাৎ তলব? নতুন কোনো খবরের খোঁজ দিতে ডেকেছেন ওদের? আর কোনো খোঁজ পাওয়ার ইচ্ছে নেই সুমনার। শান্ত নদীতে আবার জোয়ারের ঢেউ আছড়ে পড়ুক, এটা আর মোটেও চায় না সুমনা। কবিতার মতো আওড়ে চলে জীবনের বীজমন্ত্র। আর না এইবার বাঁচতে চাই…বাঁচতে চাই। এক হৃদয় আর শত সহস্রবার খুঁড়তে চাই না আমি।

‘অবজ্ঞা আর অপমানে ঋজু হতে হতে

নাগালে পেয়েছি আমি প্রশান্ত আকাশ।

অবহেলা অনাদরে ঠান্ডা হতে হতে

ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে সব সন্ধি বিচ্ছেদ-

ভুল জীবনের নষ্ট ব্যাকরণ থেকে।

মুঠোয় যদিও ধরে আছি পৃথিবীর অবিনাশী শক্তি যত

তবুও দন্ডে দন্ডে বিনাশী দংশন-

বিষে-বিষে নীল হয় সুরক্ষিত লখিন্দর।’

অনিকের সেদিন দেখে আসা হয়নি তার মাকে। 

সেই আপত্তিকর ছবিগুলো আবিষ্কার করার পর সারারাত অনড় বসে থেকে নির্ঘুম একটা রাত পার করেছিল সুমনা। রুমানা কিছুক্ষণ ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করে নিজের ঘরে গিয়ে একা একাই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। মাঝরাতের দিকে কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পরে মনে হয়েছিল, অনিক ফোন করতে চেয়েছিল। করেনি কেন সেটা জানা হয়নি। একবার কি ফোন দিবে অনিককে? ওর শাশুড়ির শরীরটা কি বেশি খারাপ করেছে? সুমনার কি একবার খোঁজ নেওয়া উচিত?

মোবাইলটা হাতে নিয়েই আবার অসার হয়ে গিয়েছিল হাত দুটো। কেন এত খবর নেওয়ার গরজ সুমনার? কী হবে এই মিথ্যে আদিখ্যেতা দেখিয়ে? আজ রাতটুকু পেরুলেই তো বাসা থেকে বের হয়ে যাবে সে। এই বাসায় অনিকের সাথে আর এক মুহূর্তও নয়। কিন্তু কোনো কৈফিয়ত চাইবে না সুমনা। অনিকের কাছে কিছুই জানার নেই তার। একজন ভণ্ড, বিকৃত রুচির মানুষের কাছে কিছুই জানতে চায় না সে। কী-ই বা উত্তর দেওয়ার আছে অনিকের? নিজের ঐসব জঘণ্য কার্যকলাপের ফিরিস্তি সে কোন মুখে বলবে?

পরমুহূর্তেই বাস্তবতা এসে পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছিল।

যেতে তো চাইছে…কিন্তু যাবে কোথায়? সুমনা আর রুমানার কি আদৌ কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে? বাবা-মা হারা এতিম দুটি বোন, যাদের মাথার ওপরে একটুকরো ছাদেরও কোনো অস্তিত্ব নেই। তারা কই যাবে? রুমানার দেখাশুনায় বিঘ্ন ঘটবে বলে কখনো চাকরি-বাকরি করার কথাও ভাবতে পারেনি সুমনা। অথচ আজ সবকিছুর আগে  নিজের পায়ের নীচের ভিতটারই খোঁজ পড়লো। কষ্ট ভরা মন নিয়ে অনুভব করলো সুমনা, কোথাও কোনো ভিত নেই। গড়েই ওঠেনি কখনো।

 

ক্রমশ

 

 

আগের পর্ব ও লেখকের অন্যসব লেখা পড়তে ক্লিক করুন।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত