| 5 মে 2024
Categories
গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য

চোরাকাঁটা (পর্ব-৬)

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

অনিক একটু আনমনা হলো যেন। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,

‘বাবা আগে এরকম ছিল না। ইদানিং কেন যেন অন্যরকম হয়ে গেছে। আগে কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই মাথা গরম করতো না। কিন্তু যত বয়স বাড়ছে ততই যেন…! তবে রীতিনীতি মেনে চলার ব্যাপারে বাবা তেমন সনাতনী নয়। শহরে পড়াশুনা করেছেন। তার ছাপ রয়ে গেছে ভালোরকম। কিন্তু জমিদার বাড়ির গিন্নীমা মানে আমার মা’ই একটু বেশি রীতিনীতি মেনে চলা মানুষ। আধুনিক ধারার সাথে এখনো ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পারে না। মা এখনো কাঁসার বাসনকোসন ব্যবহার করেই অভ্যস্ত। সপ্তব্যঞ্জন রান্না না হলে মুখ কালো করে। লোকে যেখানে সময় বাঁচাতে কম রান্নাবান্না করে, আমাদের বাসাতে সেখানে রান্নাবান্না দেখে মনে হয়, বুঝি বিয়েবাড়ির রান্না হচ্ছে! সুমনা এসব দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিল। ভয় পাচ্ছিলো, এসবের সাথে মানিয়ে চলতে পারবে কী না। তখন বাবাই বলেছিল, আমাদের আলাদা থাকাই ভালো। বাবা হয়ত সুমনার মনের ভাবটা বুঝতে পেরেছিল!

দেশের বাড়ির জায়গাজমি বেচে দিয়ে বাবাকে এ্যাপার্টমেন্ট কিনতে বলেছিলাম। মা রাজি হয়নি। অত ছোট বাসাতে নাকি মায়ের দম বন্ধ হয়ে আসবে। উত্তরার ভেতরের দিকে জায়গা কিনে দোতলা বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। অযথা দুনিয়ার পয়সা খরচ! কে বোঝাবে বলুন?’ 

‘ওহ্‌…তাই নাকি? তাহলে তো কিছু বলারই নেই! তা উনাদের দেখাশুনার জন্য কেউ আছে তো?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ তা আছে। গ্রামের বাড়ি থেকে আসার সময়ে প্রায় গণ্ডাখানেক কাজের লোক সাথে করে নিয়ে এসেছে।’

‘তোমার বাসায় কাজের লোক নেই?’

‘জ্বি আছে। কিন্তু বাধা লোক নেই। ছুটা কাজের লোক আছে। সুমনা বাধা লোক রাখতে চায় না। আসলে ওর অসুস্থ বোনকে নিয়ে সুমনা খুব ইনসিকিউরিটিতে ভোগে। ও মনে করে, বাঁধা লোক রাখলেই তারা বাসার কথা বাইরে বলে বেড়াবে!’

‘সেটা তো ছুটা কাজের লোকেরা আরো বেশি বলে বেড়ায়! আমার বাসাতেই তো এই নিয়ে আমার বউয়ের সাথে কাজের লোকের নিত্য গন্ডগোল লেগেই আছে। সে নাকি আমার বাসার খুঁটিনাটি খবরাখবর বাইরে পাচার করে। আমার বউয়ের ধারণা, কেউ কাজের লোককে ইনফর্মার হিসেবে ব্যবহার করে পুলিশের বাসার হাঁড়ির খবর বের করে আনছে। পরে নাকি আমাকে বিপদে ফেলার প্ল্যান আঁটবে! বুঝো অবস্থাটা! আমি বউকে বলেছি, একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে সিরিয়াল নিয়ে রাখতে।’

অনিক মুখ নীচু করে হাসে। কিছু বলে না। আনিসুল হক আবার জিজ্ঞেস করেন,

‘আচ্ছা একটা খুব প্রাইভেট কথা জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছি। যদি কিছু মনে না করো

অনিক সাগ্রহেই বলে,

‘না না কিছু মনে করবো না। প্লিজ বলুন।’

‘ইয়ে…মানে, শুনেছিলাম তোমার শ্বশুর নাকি খুব সাধারণ চাকরি করতেন। মানে তোমার বাবার কাছ থেকেই শুনেছি আর কী! উনার সাথে এখনো মাঝে মাঝে ফোনে কথাবার্তা হয় আমার। তোমাদের কিছু জমিজমা ঘটিত ব্যাপারে উনি আমার সাথে আলাপ করেন। তা… তুমি তো জমিদারের বংশধর। উঁচু বংশ। গ্রামের বাড়িতে এখনো তোমাদের অনেক প্রভাব প্রতিপত্তি। লোকজন একটা অন্যরকম সম্মানের চোখে দেখে তোমাদের। তুমি এত বড় বংশের ছেলে হয়ে এমন সাধারণ পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করলে কেন?’

অনিক কিছুটা বিপদে পড়ে। কিছুক্ষণ উত্তর দিতে পারে নাআনিসুল হক বুঝতে পারেন, খুব বেশি ব্যক্তিগত কথা জিজ্ঞেস করে ফেলেছেন। তদন্তের সার্থে হয়ত অনেক কিছুই সামনে চলে আসবে। তবু এভাবে সরাসরি জিজ্ঞেস করাটা হয়ত একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। হাজার হোক, এই ছেলেটা তো আর দশজন সাধারণ পরিবারের ছেলের মতো নয়। তাছাড়া এর বাবার সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক আছে যেখানে। রোজ তো কত লোকই পুলিশ স্টেশনে আসে যায়! সবার সাথে নিশ্চয়ই একইভাবে ডিল করলে চলে না!

আনিসুল হক বিব্রত ভঙ্গিতে বললেন,

‘আমি দুঃখিত অনিক। আসলে এই পুলিশের চাকরি করতে গিয়ে না মুখটাই এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেছে! কোথায় যে কী বলে ফেলি! প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না। জাস্ট কৌতুহল থেকেই জিজ্ঞেস করে ফেলেছি! ইচ্ছে না হলে উত্তর দিতে হবে না।’

অনিক দ্রুত নিজেকে সামলে নেয়। বলে,

‘না না আমি কিছু মনে করিনি। বাবার হয়ত আমার বিয়ে নিয়ে অন্যরকম কিছু ভাবনাচিন্তা ছিল। সুমনাকে দেখে আমিই পছন্দ করে ফেলি। বাবা আর আমার পছন্দে খুব বেশি বাগড়া দিতে যায়নি।

আর আমার শ্বশুরের এই বিষয়টা নিয়ে আমার স্ত্রীকেই বেশি কথা শুনতে হয়। আমার বন্ধু বান্ধবরা বাসায় এলে কেউ কেউ হুট করে বলেও ফেলে। সুমনার বাবা খুব সাধারণ সরকারী চাকুরে ছিলেন। সাদামাটা পরিবারে বেড়ে উঠেছে সুমনা। তবে আপনি জানেন কী না, সুমনার নানা কিন্তু ওদের গ্রামের বেশ প্রভাবশালী ধনী মানুষ। বেশ অবস্থাপন্ন পরিবার। এক নামেই তাকে আশেপাশের গ্রামের মানুষজন চেনে। উনার মেয়ে মানে আমার শাশুড়ি নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। এটা নিয়ে নিজের জামাইয়ের সাথে আমার নানা শ্বশুরের বেশ দ্বন্দ্বও ছিল। এসব আমার জানার কথা নয়। কিন্তু বিয়ের সময় আমার নানাশ্বশুর নিজে এসব কথা আমাকে বলেছেন। আর তাছাড়া…বংশ গৌরব, পিতার আর্থিক অবস্থা এসব নিয়ে আমি কোনোদিনও তেমন একটা মাথা ঘামাতাম না। আমার কাছে মনুষ্যত্বই সবচেয়ে বড় পরিচয়।’

আনিসুল হক বললেন,

‘খুব ভালো কথা। সত্যিই অনেক ভালো লাগলো শুনে। প্রতিটি যুবক যদি তোমার মতো করে চিন্তা করতো, তাহলে সমাজের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আটকানো যেত। আচ্ছা ভালো কথা, তোমার বন্ধুদের কথা বলছিলে। তোমার বন্ধুরা কি তোমার বাসায় আসতো নাকি? মানে যাতায়াত ছিল? তোমার ইউনিভার্সিটির বন্ধুবান্ধব ওরা?

অনিক উসখুস করে। এতক্ষণে আসল জায়গায় টান পড়েছে। এই আনিসুল হক আংকেলের ব্যাপারে অনিকের বাবা তার কাছে আগেই গল্প করেছেন। গল্পচ্ছলে ঘটনার মূলে প্রবেশ করতে জানেন ইনিকাজেই আসল ঘটনার সন্ধান উনাকে না দিলেও উনি ঠিকই তা বের করে ছাড়বেন। অনিক বললো,

‘জি ওরা…মানে আমার বন্ধুবান্ধবরা প্রায়ই আমার বাসায় আসতো। ওরা বেশিরভাগই আমার ক্যাডেট কলেজের বন্ধুবান্ধব। এদের মধ্যে কারো কারো সাথে ইউনিভার্সিটিতেও পড়েছি। তবে কমনলি সবাই ক্যাডেট কলেজেরই বন্ধু। ওদের সাথেই নিয়মিত যোগাযোগটা আছে।’

‘প্রায় আসতো মানে…লাস্ট কবে এসেছিল?’

অনিক প্রায় ফিসফিসিয়ে বলে,

‘দু’মাস আগে একটা গেট টুগেদার ছিল আমাদের বাসায়।’

‘তোমার শ্যালিকার প্রেগন্যান্সির বয়সও দুই মাস! মাই গড! তাহলে? কিছু বুঝতে পারছো না?’

অনিক মাথা নীচু করে বসে থাকে। কিছুই যেন বলার নেই তার। আনিসুল হকই আবার প্রশ্ন করেন,

‘কাউকে সন্দেহ হয়?’

অনিক দিকভ্রান্ত পথিকের মতো বলে,

‘কাকে সন্দেহ করবো বলুন তো আংকেল? ওরা প্রত্যেকেই আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড। একসাথে কত আড্ডা দিয়েছি! আনন্দ করেছি! ওদের কেউ এই কাজ করতে পারে এটা আমি কীভাবে ভাববো?’

‘হুউম…মানতে না চাইলেও অনেক কিছু মানতে হয় অনিক। বুঝতেই পারছো, বন্ধুদের কেউ তোমার বিশ্বাস নষ্ট করেছে। মারাত্মক একটা কাজ করেছে। কিন্তু একটা কথা। তোমাদের উপস্থিতিতে এমন কাজ কিভাবে করলো? তোমার শ্যালিকা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলেও মুখ দিয়ে আওয়াজ তো করতে পারে! সে চেঁচামেচি করলো না কেন? এমনটা কীভাবে হতে পারে? আর তাছাড়া তোমার শ্যালিকার ঘর আলাদা হলেও ঘরে কেউ ঢুকলে কি তোমরা জানতে পারবে না? ঢাকা শহরে একটা ভাড়াবাসা এত প্রাসাদপম তো আর হতে পারে না!’

‘আমি আর আমার স্ত্রী সুমনাও এই কথাটা ভেবেছি আংকেল। অনেক ভেবেচিন্তে একটা সম্ভাবনার কথা আমাদের মাথায় এসেছে। আমাদের গেট টুগেদারের দিন আমরা কিছু সময়ের জন্য ছাদে গিয়েছিলাম। তখন রুমানা আমাদের সাথে থাকলেও অল্প সময় পরে সে নীচে চলে যায়।’

‘ওয়েল…গুড অবজারভেশন। কিন্তু রুমানা নীচে চলে গেলেও বাসা তো ফাঁকাই ছিল তাই না? বন্ধুরা তো তখন ওপরেই ছিল।’

‘জি, সবাই ওপরেই ছিল!’ অনিককে চিন্তিত দেখায়। অংকটা কিছুতেই মিলছে না। বেশ অনেকটা সময় দুজনেই চুপ করে থাকে। তারপর হঠাৎ অনিকই আবার বলে ওঠে,

‘ইয়ে…আংকেল, আরেকটা ব্যাপার। গেট টুগেদারের জাস্ট এক সপ্তাহ আগেই আমার দুজন বন্ধু বাসায় বেড়াতে এসেছিল। মাঝে মাঝে এরকম দু’একজন আসে আমাদের বাসায়সবাই যে সবসময় জোট বেঁধেই আসে তা নয়।’

‘আচ্ছা! ওরা কি বেশ অনেকক্ষণ ছিল সেদিন?’

‘জ্বি তা ছিল। ওদের মধ্যে একজনকে নিয়ে আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম… কিছুক্ষণের জন্য। সিগারেট ছিল না। আর সুমনা রান্না করছিল। টুকিটাকি এটা সেটা ফুরিয়ে গিয়েছিল। সেগুলোও কিনে এনেছিলাম। আরেকজন বন্ধু বাসাতেই ছিল।’

‘কতক্ষণের জন্য বাইরে ছিলে তোমরা?’

‘উমম…প্রায় আধাঘণ্টা তো হবেই! বেশিও হতে পারে।’

‘লং টাইম এনাফ। কিন্তু তোমার স্ত্রী সুমনা তো তখন বাসায় ছিল। তার মানে তোমার সেই অপর বন্ধু তোমার শ্যালিকার সাথে একা ছিল না সেই সময়ে। তাহলে কিছু ঘটানো তো দারুণ চ্যালেঞ্জিং বিষয়! এতটা সাহসী কি তোমার সেই বন্ধুটি হবে? ভেবে দেখ!’

‘আমি জানি না। আসলে আমার ভাবতেও খুব খারাপ লাগছে। আমার সেই বন্ধুটিকে নিয়ে এমন কিছু ভাবছি, এটা চিন্তা করেও নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি যদি সবকিছু খুলে না বলি, তাহলে তো আপনারা অনেক বিষয় জানতে পারবেন না!’

‘পুলিশের কাজ হচ্ছে জানার উপায় খুঁজে নেওয়া, অনিক। তুমি নিজে থেকেই আমাকে অনেককিছু জানাচ্ছো, এতে আমি উপকৃত হচ্ছি। কৃতজ্ঞতা সেজন্য। বলতে ইচ্ছে না করলেও বলে যাও। মনের মধ্যে যতরকম কনফিউশন আছে, সব একেবারে খুলে বল। হতে পারে, এসবের ভেতরেই ক্লু লুকিয়ে আছে। অপরাধীকে বের করতে হলে এসব ক্লুই তো জোড়া লাগাতে হবে!’ 

‘সুমনা তখন রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিল। হুট করে ওরা চলে আসাতে ওকে অনেককিছু রান্না করতে হয়েছিল। আমরা দুজন থাকি। তেমন একটা রান্নাবান্না থাকে না বাসায়। রুমানার খাওয়া তো সামান্যসেটাই অনেকখানি সময় নিয়ে খায়তাই সেদিন আমার বন্ধুরা আসার পরে বেশ ঝামেলাতেই পড়তে হয়েছিল। ওরা আবার রাতের বেলাতেই এসেছিল। না খাইয়ে তো আর বিদায় করে দেওয়া যায় না। এদিকে ফ্রিজে ছিল একটা মোটে রান্না করা তরকারি। কাছেই অবশ্য কাঁচাবাজার ছিল। সেটা বেশ রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। সেখানে গিয়ে চট করে বাজার করে এনেছিলাম। সুমনা এই ফাঁকে ভাত ডাল এসব চড়িয়ে দিয়েছিল। মশলা রেডি করছিল। মানে…রান্নাঘরে ওকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল।’ 

‘আচ্ছা, সুমনা মন মানসিকতায় কতটা আধুনিক?’ আচমকাই প্রসঙ্গ পাল্টে ফেললেন আনিসুল হক।

‘মানে?’

‘মানে…এই যে তুমি তোমার বন্ধুকে বাসায় রেখে বেরিয়ে পড়লে। ও একা একা সেই বন্ধুর সামনে হেজিটেশন ফিল করছিল না? আর সেই বন্ধুটিকেই বা কেন বাসায় রেখে গিয়েছিলে? ওকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলে না কেন?’

‘ও বলছিল, টিভিতে নাকি কী একটা প্রোগ্রাম দেখাবে। ওর জব রিলেটেড। সেটা মিস করতে চায় না। আমরা গেলে ও বসে বসে টিভি দেখবে।’

‘এটা শুনে তোমার অন্যরকম লাগেনি? মানে খারাপ লাগেনি?’

‘নাহ…আসলে আমি অন্যরকম কিছু ভাবিইনি! আর সুমনাও আমার বন্ধুদের সামনে অনেকটা ফ্রি এখন। সেও কোনো আপত্তি করেনি!’

‘আচ্ছা…তাহলে সুমনাকে মন মানসিকতার দিক দিয়ে আধুনিকই বলতে হবে।’

অনিক কিছু বললো না। নীরব সম্মতিই জানালো। আনিসুল হক কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন,

‘বেশ! আপাতত এতটুকুই। আমি শিগগিরই তদন্তের জন্য একজনকে পাঠাবো। তুমি চিন্তা কর না। এখানে সন্দেহ তালিকা ছোট। অপরাধীকে খুঁজে আনতে দিনের পর দিন লেগে যাওয়ার কারণ নেই। আপাতত বন্ধুদেরকে কিছু বুঝতে দিও নাওরা যেমনভাবে বাসায় আসছে আসতে দাও। তুমি অহেতুক রাগ বা অন্যরকম আচরণ দেখালে অপরাধী কিন্তু সতর্ক হয়ে যাবে। বিষয়টা তোমার স্ত্রীকেও জানিয়ে দিও। সেও যাতে এই ব্যাপারটাতে সচেতন থাকে। আর ভালো কথা, সেই দুই বন্ধুর নাম আমাকে লিখে দিয়ে যাও। যে বন্ধুটি বাসায় থেকে গিয়েছিল তার নামটাতে একটা মার্কিং করে দাও। নামটা মাথায় গেঁথে রাখি।’

আনিসুল হকের কথামত দু’বন্ধুর নাম কাগজে লিখে দিল অনিক। সেই সাথে আরেকজনের নামও লিখে দিল। এটা কেন লিখলো সে ব্যাপারে খুব বেশি ভাবনাচিন্তা করতে গেল না। জাস্ট মাথায় এলো আর কাগজে লিখে দিল। সেদিন বিকেলে আসা দু’বন্ধুর মধ্যে একজনের নাম বিশেষভাবে চিহ্নিত করে দিল। আসার আগে বললো,

‘আংকেল, অন্য কাউকে না পাঠিয়ে আপনি নিজে যদি একটু কষ্ট করে দেখতেন…আমি খুব কৃতজ্ঞ থাকতাম।’

আনিসুল হক হাসলেন। স্নেহসুলভ আশ্বাস দিয়ে বললেন,

‘আরে! তুমি একদম চিন্তা করো না! যাকে পাঠাবো তাকে আমার ডান হাতই বলতে পারো। আর আমি নিজেও এই তদন্তের সাথে আগাগোড়া থাকবো। কাজের সবার্থে অনেক জায়গায় যেতে হয়। অনেক প্রটোকল মেইনটেইন করতে হয়। তাই সব কাজে আমি সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারি না। কিন্তু যাকে পাঠাবো, সে আমাকে জিজ্ঞেস না করে এক পাও এগুবে না। এই ব্যাপারে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো অনিক। আমাদের ফজলুল আহমেদ ভাইয়ের ছেলে তুমি। এত বড় বিপদে পড়ে এসেছো। আমার কাছ থেকে তুমি শতভাগ সহায়তা পাবে!’

আনিসুল হকের কাছ থেকে নিশ্চিন্তমনেই বিদায় নিল অনিক। পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ালো। মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কতরকম চিন্তা! বিয়ের দুটো বছরও পার হয়নি এখনো! আর এর মধ্যেই কী বিশ্রী একটা ঘটনায় জড়িয়ে যেতে বসেছে সবাই! বন্ধুদের সাথে কত স্মৃতি! কত আনন্দময় দিন একসাথে কাটিয়েছে ওরা! ওদের মধ্যেই কাউকে দোষী হিসেবে কল্পনা করতেও অদ্ভুত লাগছে। কিন্তু বাস্তবতা এখন সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। এই ছিঁড়ে যাওয়া সম্পর্ককে কি আর জোড়াতালি লাগিয়ে ঠিক করা যাবে?

অপরাধীকে একসময় বের করতে পারলেও অন্য বন্ধুরা সবাই আস্তে আস্তে দূরে সরে যাবে। মনটা খারাপ হয়ে গেল অনিকের। বন্ধু যদি হয় গোপন শত্রু, তাহলে তার মতো ভয়াবহ আর কিছুই হতে পারে না। এই গোপন শত্রুকে তো খুঁজে বের করতেই হবে! 

বাসার কাছাকাছি এসেই একটা ফোন পেলো অনিক। শান্ত ফোন করেছে।

‘হ্যালো অনিক…তুই কি বাইরে?’

‘হ্যাঁ বাইরেই আছি। তবে বাসায় ফিরছি এখন। কেন কী হয়েছে?’

‘একটু দেখা করতে চাচ্ছি তোর সাথে। বাসায় যাবো না। তোর সাথে প্রাইভেটে কথাগুলো বলা দরকার। কোথায় দেখা করতে পারবি?’

অনিক বেশিক্ষণ চিন্তা করলো না। বাসা থেকে কাছাকাছি এক কফি শপের নাম বলে দিলো‘আধাঘন্টার মধ্যে আসছি’ বলেই শান্ত ফোনটা কেটে দেয়

অনিক একটু অবাক হয়েই রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা ঘোরাতে বলে। কফি শপটা ওর বাসার বিপরীত পথে।

 

(ক্রমশ)

 

 

 

 

আগের পর্ব ও লেখকের অন্যসব লেখা পড়তে ক্লিক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত