চশমা
ছোটবেলা থেকেই চশমার প্রতি আমার দুর্বলতা এবং যারা চশমা পড়েন তাদের প্রতিও একটা বিশেষ টান … আমার মনে হয় চশমা এক প্রকার বিশেষ কুয়াশা যা শীত গ্রীষ্ম বর্ষা প্রতিটি ঋতুতে মানুষকে একটা অন্য রকমের বন্য সৌন্দর্য দ্যায় ।
ছুঁতে চাই অথচ ছুঁতে পাই না … এরকম এমন একটা শিরশিরে গুলমোহরের নাম চশমা .।। বাই দ ওয়ে , এই মুহূর্তে একটি প্রশ্ন আমার মাথায় এলো … আচ্ছা , আপ্নারা বলুন তো … ,চশমার ভেতরের চোখ এবং বাইরের চোখটি কি একই রঙের কথা বলে ? নাকি একটির রঙ সাদা আর অন্যটি লাল … অথবা ধরুন , যারা চশমা পড়েন না তাদের চোখ কেমন করে কথা বলে ? … চশমা ছাড়া চোখ কথা বলে কি আদউ ? না ,আমার প্রশ্নগুলির উত্তর দেবে এমন চোখই আমি খুঁজে পেলুম না … যাদের চশ্মা আছে আর চোখ নেই … তাদের মনে বুঝি মাইওপিয়া নেই ? ভাবুন তো তাদের বৃষ্টিহীনতা কতখানি … না । থাক এ সব আলোচনা । বড় জটিল , বড্ডো জটিল … চোখ , চশমা এবং আমার চিন্তাভাবনার এই মাইটোপিকবৃত্ত …
আমার কথাই ভাবুন … ভাবুন । চল্লিশের পরে প্রেম আর চশমা আজকাল এমন গুলিয়ে গেছে যে এখন আর দুটোকে আলাদা করতে পারি না । শ্রেষ্ঠ প্রেমিকের দলে ভিড়ে গেছে নানা মিনারের ফ্রেম । নানা রঙের কল্পনা । প্রেম তো আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না । ছুটোছুটি করে । চশমার পাওয়ারের মতো … কর্মব্যস্ত যোগী কখনও । ভিখিরি রাজপ্রাসাদ … কখনো বাইফোকালের ময়ূরবিহারী …পাখা তুলে নাচ দেখাচ্ছে … দূর থেকে যাকে দেখছি সে স্পষ্ট অথচ জেই সে কাছে আসছে , দেখি একগোছা হরিণ চোবানো ট্র্যাজেডি … আরেক্তু কাছে ।। মাই গুডনেস … এ যে কমেডির পায়রা ।।ধরতে না ধরতেই উড়ে যাচ্ছে …
নিজের চোখ থেকে চোখ হারাইনি বললে মিথ্যে বলা হবে … আর মন ? আহা ! সে কি নতুন করে হারাবার জিনিস গো ? সেতো হারিয়েই আছে … দুয়ারটুকু শুধু খোলার অপেক্ষা । খুলে দি তবে স্বপ্ন ভাঙার ভয় … ভয় খোলার ভয় … চশমা কি হারায়না ? হারায় তো ! নাকি শুধু স্মৃতি হারিয়ে যায় কাচ থেকে , বুক থেকে , ভালোবাসার পকেট থেকে … রিমঝিমের পলক …
না দেখার ঘুমে ভাবতে থাকি , আহা ! ঘুণপোকার বাড়ি অব্দি আমার যদি একটা চশমা থাকতো …..সাজানো গোছানো … একদিন তো জেগে জেগে স্বপ্নই ফেল্লুম ।অবশেষে আমার চোখ খারাপ হয়েছে অবশেষে , সবাইকে দেখছি অথচ কাউকে দেখছি না । যাদের দেখতে পাচ্ছি তাদের পাচ্ছি না খুঁজে .. আর যাদের খুঁজে পাচ্ছি তাদের দেখতে চাইছি না মোটেও … অভিমানের কুলুপে বসে আছি ডাক্তারের সামনে …
দেখুন , ক্লিয়ারলি দেখতে পাচ্ছেন এখন মিসেস ঘোষ ? কিছু করতে হবে না … আপনি শুধু পড়ে যান ….. দেওয়ালে টানানো চশমাক’টি .পড়ুন ঠিক করে । ক্লিক করে দেখুন তো একবার । ভিবজিওরের মাউজটি , আর তার সেন্ট্রাল লোকেশনের রামধনুটি স্পর্শ করতে পারছেন তো চোখ দিয়ে ?
ডাক্তারবাবুর চোখ আর আমার চোখ । মাঝখানে দুলছে নতুন একটি চশ্মা । স্কাই–ব্লু ফ্রেম । ঝকঝকে ক্লিয়ারসিল আকাশ । দেখতে পাচ্ছি সব স্পষ্ট । পড়ে ফেলছি নিপুণ বর্ণমালা … অ আ … ক খ … খ তে খেলা নয় ? তাই তো পড়েছিলুম … তাহলে পড়াশুনো কিছুই নয় … এতকাল খেলাই ছিল সব … খেলাঘরের চশমাটি আমার শিশুকাল কুড়নো … অজস্র শিউলিফুল , মাটি–মাটি গন্ধ সেই কবে থেকে আমার পিছুই ছাড়ছে না ..
.
… সব দেখতে পাচ্ছি সমুদ্রের আকারে এমনকি ঢেউয়ের শব্দও দেখতে পাচ্ছি অথচ ডাক্তারকে বলছি … কিছু দেখতে পারছি না ডাক্তারবাবু …এমনকি চোখ দিয়ে কাউকে স্পর্শও দিতে পারছি না … প্লীজ হেল্প …
ওকে ওকে … আশ্বাস দিচ্ছেন ডাক্তারবাবু … নতুন শিশিরের অশ্বশক্তি দিচ্ছি আপনাকে … এবার দেখুন তো … ইজ ইট ক্লিয়ার নাউ ? …
না তো । ঝাপসা এখনো … স্পষ্ট হচ্ছে না কিছুতেই … ধোঁয়া ধোঁয়া … হাল্কা রঙিন আর হতাশা রঙের কালো মিশে কেমন একটা ছন্নছাড়া রঙ … চশমা চাই আমার ডাক্তারবাবু … চশমা পড়তেই হবে … পড়তেই হবে … প্লীজ ডু সামথিং …
ডাক্তারবাবু হাসছেন … জানেন তো ? দেখা – না – দেখাটাই আসলে এক প্রকার খেলা …আমার , আপনার … আমাদের প্রত্যেকের এই খেলারোগ আছে। চশমা দিয়ে যাকে দেখি বা যতটুকুই দেখি তা দেখা নয় আসলে । দেখার ভান মাত্র । অনেকখানি ফাঁক থেকে যায় এই সব দেখা আর না–দেখায় … আর বেশ কিছুটা ফাঁকির ফায়ারপ্লেস ..
আর একটা কথা মনে রাখবেন , চশমা যতখানি রোদ তার তিন ডাবল মেঘলা … আপনার খুব চশমার শখ বুঝি ? …
…আপনি শান্ত হয়ে একটু বসুন তো … এই তো দেখুন কত কত চশমা ! আপনার দৃষ্টির সামনে , দৃষ্টির আড়ালে । গ্লোবের মার্জিনে , গ্লোবিউলে …… অচেনা আখরোটের সোনালি পেস্তায় … … কত রকমের গালিব কত ডজনের মীর্জা … দেখুন কোন চশমাটি আপনার সাথে গজলের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছে সাবধানে …
মিসেস ঘোষ , দেখুন চশমারা সবাই আপনার চোখের মহল্লায় ভ্রু ভাঙছে … এখন শুধু আপনার নিজস্ব চোখটি পছন্দ করা শুধু বাকি ..