আজ ২৭ সেপ্টেম্বর কবি ও গল্পকার চয়নিকা যশের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
দৃষ্টিকোণ
ভাঙনের থেকে নিরাপদ দূরত্বে
দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ জানে না,
মিনিটে কতটা করে জমি সরলে
কাউকে অসহায় ঘোষণা করা যায়।
যার মাথার উপরে
ত্রিস্তরীয় ছাদের বন্দোবস্ত আছে,
তাকে দুর্যোগের খবর রাখতে
হয়নি কখনো।
যাকে ঘিরে মানুষ জমে,
ভোরের ঘন কুয়াশার মতো,
তার কাছে একা থাকাটা
নিতান্তই বিলাসিতা।
তোমায় দেখবো বলে
প্রতি রাতে আমি
তোমার ঘুমিয়ে যাওয়া অব্দি
অপেক্ষা করি।
ঘুমন্ত মুখটা অন্ধকারে স্বচ্ছতোয়া নদীর মতো টলটল করে,
আমি স্পষ্ট দেখতে পাই।
একটা নিষ্পাপ, ভাঁজহীন মুখ।
জেগে থাকলে মানুষ বড় নিজের কথা ভাবে,
বড্ড স্বার্থপর হয়ে যায়।
আমি তাই ঘুমন্ত তুমিকে রাত জেগে
স্বার্থপরের মতো একা একা দেখি।
তুমি তখন আকাশ হয়ে যাও,
আর আমি সামান্য চাতক।
সময় পেরোলে
একটা সময়ের পরে
রাগ অভিমান এগুলো ফুরিয়ে আসে।
যেমন এক নাগাড়ে জ্বলতে থাকা
প্রদীপ কিংবা বাতি,
শেষ হওয়ার আগে দাউদাউ আগুন হয়ে,
একটা সময় হঠাৎই ঝুপ করে নিভে যায়।
আসলে যে অনুভূতি যত প্রবল,
যত দুর্নিবার,
যার তীব্রতা যত বেশি,
সে হয়তো ততই ক্ষণস্থায়ী।
তাই একটা সময় পরে
সব নিভে যায়,
প্রদীপ, ঘৃণা অথবা ভালোবাসা।
ভালোবাসার দিব্যি
আমি তোমায় মিথ্যে বলেছি।
সেই শুরু থেকে মিথ্যে বলে গেছি।
এই যে বারবার বলেছি,
তুমি যেতে চাইলে চলে যেও,
আটকাবো না কখনো,
এ যে কি সাংঘাতিক মিথ্যে জানো!
প্রতিটা মুহূর্তে আমি ভেবেছি,
তোমায় কী করে আটকে রাখা যায়,
বেঁধে রাখা যায়।
কতবার বলেছি, অন্য কাউকে ভালোবাসলে আমায় বলো।
মনে মনে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি
গোটা পৃথিবীর থেকে তোমায় লুকিয়ে রাখার।
বারবার বলেছি তুমি দূরে গেলে
আমি দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো।
কিন্তু আকুল হয়ে কাছে থাকার
প্রতিটা সম্ভাবনাকে হাতড়ে গেছি নিঃশব্দে।
আরও কত টুকরো টুকরো মিথ্যে দিয়ে
ভালোবাসার তাসের ঘরটা বানিয়েছি।
যেখানে ভালোবাসা বাদে
বাকি সবটা মিথ্যে, প্রবল মিথ্যে।