ইডেনে ৭ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন “ক্রিকেটার” স্বামী বিবেকানন্দ
প্রায় ১৩৬ বছর আগের কথা। ইডেন গার্ডেন্সে সেদিন টাউন ক্লাবের মুখোমুখি ইংরেজদের কলকাতা ক্রিকেট ক্লাব। ইডেনের বয়স তখন প্রায় ২০ বছর। সেই ম্যাচে টাউন ক্লাবের হয়ে মাঠে নামেন এক তরুণ অলরাউন্ডার। নেমেই প্রতিভা দেখাতে থাকলেন নিজের। ইংরেজদের সেদিন নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিলেন তিনি। ২০ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। প্রসঙ্গত সেদিন ইংরেজদের ক্লাব মাত্র ২০ রানেই অল আউট হয়ে যায়। সেদিনের সেই অলরাউন্ডারকে আমরা সকলেই চিনি। তিনি ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তখন অবশ্য তিনি স্বামী বিবেকানন্দ হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, নরেন্দ্রনাথ দত্ত হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল, বক্সিং আর ফেন্সিংয়েও দক্ষ ছিলেন তিনি। স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়ার সময়েও বিভিন্ন খেলায় অংশ নিতেন স্বামীজী। নিয়মিত যেতেন ব্যায়ামের আখড়ায়।
সেই সময়ে ইংরেজরা মনোরঞ্জনের জন্য ক্রিকেট খেলতেন। কলকাতায় ইংরেজরা ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করলেন কলকাতা ক্রিকেট ক্লাব। ধীরে ধীরে ভারতীয়দের মধ্যেও জনপ্রিয় হয় ক্রিকেট। কলকাতার বেশ কিছু তরুণ আগ্রহ দেখালেন ক্রিকেটের উপর। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে গণিতবিদ ও উপমহাদেশে ক্রিকেটের অগ্রদূত সারদারঞ্জন রায় প্রতিষ্ঠা করলেন টাউন ক্লাব। সেইসময় কলকাতা ক্রিকেট ক্লাব ও টাউন ক্লাবের ক্রিকেট ম্যাচে জমাট লড়াই হত। সরদরঞ্জন রায় এই ক্লাবটি তৈরি করেছিলেন কারণ তিনি ইংরেজদের তাদেরই পারম্পারিক খেলায় হারাতে চেয়েছিলেন। ব্রিজের একটি রিপোর্টের মোতাবেক ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী হেমচন্দ ঘোষ স্বামী বিবেকানন্দকে ক্রিকেট খেলার কথা বলায় তিনিও রাজি হয়ে যান। এরপর হেমচন্দ্র ঘোষের পথপ্রদর্শনে বিবেকানন্দ দুর্দান্ত বোলার হয়ে ওঠেন। এরপর কলকাতা ক্রিকেট ক্লাব আর টাউন ক্লাবের মধ্যে ইডেন গার্ডেন্সে একটি ম্যাচ খেলা হয়। প্রায় ১৩৬ বছর আগে ইডেন গার্ডেন্সে খেলা ওই ঐতিহাসিক ম্যাচে স্বামী বিবেকানন্দ টাউন ক্লাবের হয়ে কলকাতা ক্রিকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। ম্যাচের আগে হেমচন্দ্র ঘোষ বিবেকানন্দকে বলেছিলেন, “আবেগে ভেসো না আর নিজের বোলিং-এ মনোনিবেশ করো” আর ম্যাচে সেটাই করেছিলেন বিবেকানন্দ।
এরপর অবশ্য আর খুব বেশি খেলেননি স্বামী বিবেকানন্দ। দেশের প্রতি সমর্পণ করেন নিজের জীবন। যদিও সন্ন্যাস নেওয়ার আগে অবধি টাউন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। স্বামী বিবেকানন্দের জীবন আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শ। কিন্তু এরই মাঝে হয়ত হারিয়ে গিয়েছেন “ক্রিকেটার” স্বামী বিবেকানন্দ।
তথ্য : ১৯৭০ সালের কাছাকাছি যুগান্তর পত্রিকায় জয়ন্ত দত্তের লেখা, তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন ক্রিকেট গবেষক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়
এক অজানা ইতিহাস।