| 26 এপ্রিল 2024
Categories
ক্রিকেট খেলাধুলা

ক্রিকেটারদের বিচিত্র সব কুসংস্কার

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

বিশ্বাস আর অভ্যাসের প্রয়োগগুলোয় আপাতদৃষ্টিতে হয়ে ওঠে কুসংস্কার। এগুলো যেমন অন্ধ বিশ্বাস, ঠিক তেমনি অযৌক্তিকও। তবে মাঝে মাঝে এসব অযৌক্তিকতাই হয়ে ওঠে দারুণ সব সফলতার কারণ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কুসংস্কার মেনে চলেন বিশ্ববিখ্যাত খেলোয়াড়রাও।

ফুটবলারদের কুসংস্কার নিয়ে হরহামেশাই শোনা যায়, ক্রিকেটাররাও এর বাইরে নন। সেই তালিকায় স্টিভ ওয়াহ থেকে শুরু করে শচীন টেন্ডুলকার, কুসংস্কার বিশ্বাস করেছেন তারাও।

জার্সি নাম্বার ‘৭৫’:
টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের রয়েছে সংখ্যা নিয়ে অদ্ভুত বিশ্বাস। আর তা হলো সাকিবের জার্সি নাম্বার ‘৭৫’। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে ঘরোয়া, এমনকি আইপিএল ও বিগ ব্যাশেও ৭৫ নাম্বারের জার্সি পরেই খেলেন সাকিব। আর এই বিশেষ সংখ্যা ব্যবহারের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। বিকেএসপির তার ক্যাডেট নম্বর ছিল ‘২৭৫’। সেখান থেকে ‘৭৫’ নম্বরটির প্রতি তার দুর্বলতা আর শুভযোগের সূচনা।

লাল রুমাল:
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্টিভ ওয়াহ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের তালিকায় থাকবেন নিঃসন্দেহে। তিনি অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন ১৯৯৯ এর বিশ্বকাপ। টেস্ট অধিনায়ক খ্যাত ওয়াহ বিশ্বাস করতেন লাল রুমালে! মাঠে নামার সময় অস্ট্রেলিয়ান এই কিংবদন্তি পকেটে সব সময় একটি লাল রুমাল রাখতেন। আর এ রুমালটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন তার দাদু। তার মতে, এই রুমালই সৌভাগ্যের প্রসূতি। একই সাথে ম্যাচের আগে তিনি কবিতা লিখে সতীর্থদেরও পাঠাতেন।

‘৭’ নম্বর জার্সি:
২০০৯ সালে ক্রিকেটের বাইবেল নামে পরিচিত উইজডেনের স্বপ্নের টেস্ট একাদশ দলের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষিত হন এবং ফোর্বস ম্যাগাজিন কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী ১০ ক্রিকেটারের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হিসেবে মনোনীত হন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দীর্ঘ খরা কাটিয়ে ভারতকে ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক এ অধিনায়ক মনে করেন, তার ক্যারিয়ারের সফলতার পেছনে রয়েছে সংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা! নিজের ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দলের হয়ে ৭ নম্বর জার্সি পরে খেলছেন তিনি। জন্মতারিখও ৭ জুলাই। তাইতো ভারতীয় এ ক্রিকেটারের মতে ৭ সংখ্যাটা তার জন্য ‘লাকি সেভেন’।

বা পায়ের প্যাডটি আগে পরা:
ক্রিকেটের ‘ঈশ্বর’ খ্যাত শচীন টেন্ডুলকারও কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। ব্যাটিংয়ে নামার আগে ভারতীয় এ কিংবদন্তি বা পায়ের প্যাডটি আগে পরতেন। তার ধারণা ছিল, বা প্যাড আগে পরাটা তার ভাগ্যের জন্য সহায়ক। প্যাডের পাশাপাশি ব্যাটের ক্ষেত্রেও ভারতীয় এ ওপেনার অনেক কিছুতে বিশ্বাস করতেন। তাইতো ২০১১ বিশ্বকাপের আগে নিজের ‘লাকি’ ব্যাটটি ঠিক করে তারপর মাঠে খেলতে নেমেছিলেন।

স্পিকারে জোরে গান শোনা:
এক সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সফল অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক নিজেই জানিয়েছেন, ম্যাচ শুরুর আগে তিনি গান শুনতে শুনতে মাঠে যেতেন। অনেকের কাছে ব্যাপারটা নিছক কুসংস্কার মনে হলেও তাকে নাকি এটা খেলায় মনোযোগী হতে সাহায্য করত। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সফল অধিনায়কদের তালিকা করলে মাইকেল ক্লার্কের নাম উঠে আসবেই। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ। তবে তার কাছে সবসময়ই ভালো পারফরম্যান্সের জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে ছিল স্পিকারে জোরে গান শোনা।

ব্যাটে চুমু খাওয়া:

শ্রীলঙ্কান সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে বিশ্বাস করতেন যে, ব্যাটে চুমু খেলেই ভালো ব্যাটিং করা যায়! অবশ্য লঙ্কান ক্রিকেটে শুধু জয়াবর্ধনে নন, সাবেক ওপেনার আভিষ্কা গুণাবর্ধনেও ব্যাটে চুমু খেয়ে স্ট্যান্স নিতেন।

বলের আগে হেলমেট, গ্লাভস, প্যাড, পকেট দেখা:
দ্রুততম অর্ধশতক তোলার তালিকায় এখনো দুইয়েই আছেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সনাথ জয়াসুরিয়া। শুধু অর্ধশতকই না, ৪৮ বলে ১০০ করারও রেকর্ড রয়েছে এই ব্যাটসম্যানের। শ্রীলঙ্কান এই ওপেনার প্রতি বলের আগেই নিজের হেলমেট, গ্লাভস, প্যাড, পকেট একবার দেখে নিতেন। মাঝেমধ্যে দেখা গেছে, বোলার রান আপ শুরু করবেন এমন সময় তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে জয়াসুরিয়া সবকিছু ঠিক আছে কি না, তাও একবার করে দেখে নিচ্ছেন!

হাঁসের মাংস না খাওয়া:
ক্রিকেটে কোনো ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হলে তার নামের পাশে ‘DUCK’ (হাঁস) চিহ্ন দেখানো হয়। ফলে অনেক ক্রিকেটারই হাঁসকে অশুভ ভাবেন। আর সেখান থেকেই অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ক্যারিয়ারের শুরুতে ম্যাচের আগে হাঁসের মাংস খেতেন না।

 

জুতোর ফিতে ঢেকে রাখা:

স্টিভেন স্মিথ ব্যাট করার সময় তাঁর জুতোর ফিতেগুলোকে একটি টেপ দিয়ে আটকে রাখেন। যাতে সেটা কিছুতেই দেখা না যায়! মানে, জুতোর ফিতেটা থাকবে তাঁর প্যাডের নিচে! কেন এমন? খোলসা করেছেন স্টিভ স্বয়ং। স্মিথ বলেছেন, ‘আসলে ব্যাট করার সময় আমি আমার জুতোর ফিতে দেখতে পেলে খুবই খারাপ লাগতো। গতবছর আইপিএলের সময় আমাদের প্যান্টগুলো এত ছোট ছিল যে, জুতোর ফিতেগুলো খুব সমস্যায় ফেলতো।আমি তখন আমাদের ফিজিওকে ডেকে নিই। বলি যে, একটা কিছু দিয়ে আমার জুতোর ফিতেগুলোকে আটকে প্যাড বা মোজার ভিতর ঢুকিয়ে দিতে। মজার ব্যাপার যে, আমি সেঞ্চুরিও পেয়ে গেলাম। সেই শুরু। তারপর থেকে আমি ওটা করতে শুরু করেছি। আসলে আমার মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছে যে, এটা করলে আমি ঠিক রান পাবো।’

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত