বন্ধুত্ব
-কিরে গাট্টু কেমন আছিস?
গাট্টু লেজ নাড়াতে নড়াতে গম্ভীর মুখে বলে উঠল- ভালো নেই রে মাট্টু।
– কেন, কি হলো? মাট্টু বিজ্ঞের মতো বলে উঠল।
গাট্টু একটা ময়লা ফেলার নোংরা ড্রাম চাটতে চাটতে বলে উঠল- করোনা এসেছে শহরে শুনেছিস তো?
মাট্টু দোতলার বারান্দা থেকে ঘাড় নাড়িয়ে বলল- হ্যাঁ, তাই তো শুনলাম। সাহেব আমার সেজন্যই বাইরে নিয়ে যাচ্ছে না। সারাদিন বাড়িতে থেকে থেকে বোর হচ্ছি রে।
– তুই তো শুধু বোর হচ্ছিস মাট্টু। আমি যে ক্ষিদের জ্বালায় মরে গেলাম।
– কেন রাস্তায় খাবার পাচ্ছিস না?
গাট্টু লেজ নাড়িয়ে বলল- না রে, করোনা হবার পর মানুষ খাবার নষ্ট করছে কম। এই দেখনা। প্রতিদিন সকালের নাস্তা তোর এখানে এসেই করি। আজ ময়লার ড্রামটায় শুধুই হাড়গোড়। দুটো ভাত নেই। হাড়ে একটু মাংসো নেই। খাবার মতো কিছুই নেই রে। পনের দিন ধরে এভাবে খেয়ে না খেয়েই কাটাতে হচ্ছে রে মাট্টু।
মাট্টু কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর বেলকনির গ্রিল দিয়ে সুচাল মুখ বের করে- দাড়া গাট্টু, মালিক আমার জন্য সকালে অনেক বিস্কুট দিয়েছিল। আমার দেশ থেকে আনা। তোরা যাকে বলিস বিলেতি। বলে মাট্টু একটু গোঁফে হাসল। তারপর আবার বলল- আমি আর কত খাব বল! দৌড়াদৌড়ি বন্ধ। সেসব রয়ে গেছে, তোকে ছুঁড়ে দিচ্ছি, তুই বসে বসে খা।
মাট্টুর কথা শুনে গাট্টুর চোখে জল চলে এল। এই না হলে মহত্ত্ব! নিজে না খেয়ে পথের ভিখিরিকে খাওয়াচ্ছে।
গাট্টু নিজেকে ভিখিরি মনে করলেও, মাট্টু সেটা করে না। মাট্টু গাট্টুকে নিজের বন্ধু মনে করে নিজের খাবার ছুঁড়ে দিল।
অনেকদিন পর সকালে পেট পুরে খেয়ে গাট্টু একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল।
কিছুক্ষণ পরে ওখানে রন্টা উড়ে এসে বসল। কা কা করে ডেকে নিজের উপস্থিতি জানান দিল। পাশের বাসার বেলকনিতে ঝুলছিল একটা খাঁচা। তার মধ্যে কন্টা বসে মনের সুখে কুহু কুহু করে গান গাচ্ছিল।
কন্টার গান শুনে রন্টার রাগ হলো। তারাস্বরে কা কা করে বলে উঠল- আমি না খেতে পেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছি। আর তুই কুহু কুহু করে গান গেয়ে যাচ্ছিস। হতচ্ছাড়া পাঁজি কোথাকার!
কন্টা কুহু কুহু গান থামাল। তারপর গলা উঁচু করে বলল- রাগ করিস নে বন্ধু। তুই আমার বেলকনিতে উড়ে এসে বোস। আমি খাঁচা থেকে খাবার ফেলে দিচ্ছি। আমার তো কত খাবারই নষ্ট হয়। খাঁচার মধ্যে উড়া যায় না, কোন পরিশ্রম হয় না। কত খাব বল?
কন্টার কথা শুনে রন্টার রাগ পড়ে গেল। সে উড়ে এসে বেলকনির মেঝেয় এসে দাঁড়াল। কন্টার ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে উদার পূর্তি করল। তারপর মনের সুখে কা কা করে ডেকে উঠল।
এবার কন্টা হেঁসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল- কী বন্ধু, এখনতো দেখছি তুমিও গান গাচ্ছ। পেট ঠান্ডা হয়েছে তো?
রন্টা, কন্টার কথা শুনে লজ্জায় লাল হতে গেল। তার কালো মুখের মধ্য থেকে সে দৃশ্য স্পষ্ট দেখতে পারল কন্টা।

১৯৮৪ সালের ২৫ অক্টোবর ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে জন্ম। বাবা অমল কুমার কুণ্ডু, মা দীপ্তি রাণী কুণ্ডু। বিদ্যুৎ প্রকৌশলী হিসাবে একটি সরকারি দপ্তরে কর্মরত আছেন। তার লেখার জগতের প্রায় সবটুকু শিশু-কিশোরদের জন্য। প্রকাশিত কিশোর প্রবন্ধ ‘বিশ্বজয়ী হও’ ও ‘উপাসনা’। ছড়া কবিতার বই ‘অয়ন্তিকা’, ‘জননী আমার স্বদেশ আমার’, ‘ছন্দে ছন্দে নৈতিকতা’ ও ‘ বঙ্গবন্ধু অবিনাশী অক্ষয়’। ছোটদের গল্পের বই ‘সততার পুরস্কার’, ‘লাস্ট বেঞ্চের ছাত্র’, ‘ গল্প কথায় বর্ণমালা’ ও ‘ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্র’। বড়দের গল্পের বই ‘শুধু তোমারই জন্য’। সম্পাদনা করেছেন ‘আবাহন’, ‘হাতেখড়ি’ ও ‘মহেশপুর সাহিত্য পত্রিকা’। তাঁর ‘নিতির গল্প’ নামে একটি উপন্যাস, বর্তমানে ধারাবাহিক ভাবে প্রচারিত হচ্ছে।