শিউলি মেঘ
ধরা যাক মেঘ, সাদা সাদা, শরৎ কিংবা হেমন্তে, উড়ে যায় কেবল, যেমন বক পাখিরা দল বেঁধে ছুটে চলে, পাখিদের তবু আছে ডানার শব্দ, কিন্তু মেঘেরা নৈঃশব্দে ধ্যানী পদ্মফুলের মতো ক্রমে পাপড়ি মেলে, ঝরে না- স্নাত হয় না, তবু তার সৌন্দর্য বহু দূর থেকেও মানুষের অবসর সময় শিল্পীত করে তোলে;
মেঘ, তোমার বাড়ি কি হিম শুভ্র উপত্যকায়?
ধরা যাক সবুজ শ্যামল উপত্যকা, মাঝখান দিয়ে সদা বয় এক ঝরনা, তীরে তীরে বাহারি ফলের বৃক্ষ শোভা পায়, চির হরিৎ গন্ধপর্বত, ভারে নত হয়না কোনো শাখা, চির দণ্ডায়মান, যদিবা বজ্র আসে এ উপত্যকা তারে আদরে ভুলিয়ে দেয়, মৃদুমন্দ বায়ু পাতায় পাতায় বাজায় মোহন সুর, যেনবা নবীনা বালিকা প্রথম কোনো ভিন তরুণের চোখে চোখ রেখে পুলকিত হয়, ফড়িং আর প্রজাপতির দল রঙিন পোষাক পড়ে নৃত্যের আসর বসায়,
উপত্যকা, ঝরনার জল কতদূর গরালে তুমি তাকে মুক্তি দেবে?
ধরা যাক সদা প্রবহমান ঝরনা, পাহাড়ের গোপন বেদনা অন্ধকার সুরঙ্গে জমা হয়ে হয়ে কেবলি মূর্ছা যায়, যেন শত শত বছর ধরে অভিশাপে কাটছে এক কান্নার জীবন, তার কোনো আনন্দ নেই- সান্তনা নেই, অভিমানে না ঘুমিয়ে চোখ লাল হলে কেউ তার কপালে রাখে না তো হাত, তবু এই ঝরনা অনন্ত কাল ধরে বয়ে বয়ে কী এক গান হয়ে বেঁচে থাকে, তার বুকে সদা সাঁতার কাটে হরেক রঙের মাছেরা;
কান্না, সাত সমুদ্রের জল যদি চোখে অশ্রু হয় তবে কি দুঃখ শেষ হবে?
ধরা যাক চোখের কোনে রংধনু, ঘুমের মতো যেন সে আড়ালে একাকি ছড়িয়ে দেয় তার মায়া, যে-বেদনা অসহ পরম মমতায় তাই হয় মুক্তাসম, আর সে মেঘ পেলে ময়ূরের মতো মেলে দেয় পেখম, কেকা কেকা রবে ডাকে আর বৃষ্টির ছন্দে শরীর দোলায়, বহু বহু দিন আগে এক ফুলের বাগানে দেখা কিশোরীর মতো, শিউলি ফুলের মালা বাঁধা ছিল হাতে, আর তার চুল থেকে যে ঘ্রাণ পেয়েছিলাম- তা আমার রোগের যন্ত্রণায় আজও একমাত্র উপশম;
শিউলি, ঝরে পড়ার আগে তোমার বুকে মৃত্যু-রাগ বাজে কেন?
জন্ম ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬; মুকুন্দগাঁতী, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ।
কবি