একগুচ্ছ কবিতা
প্রেমিকার মুখ
প্রেমিকার মুখ মনে এলে—
হৃদয় থেকে মৃত্যু পালিয়ে যায়
পাটখড়িতে বাঁধা বেড়ার পেছনে,
এপাশে কোন ছলনাহীন
আমি পুড়ে খাক হই অলীক আগুনে।
সাবানের গন্ধ
শ্রাবণের আকাশে শীতল হাওয়ায় ত্রিনয়নের প্রেম
আদি কবিতার মত ঝরঝর ঝরছে অবিরাম
অনাদি আমি যেন দেখেও দেখিনি
কখন ডুবে গেছে একফালি বৈকুণ্ঠের চাঁদ।
.
উঠান জুড়ে নিশীথকাল অন্ধকারের মত চুল
উর্বশী পিঠে লেপটে আছে লাল গামছার জ্যোৎস্না।
.
কেউ হয়তো সাবান মেখে এমন উদযাপন করে
স্নানঘরের প্রতীকময় জোনাকির জ্যোৎস্নায়।
.
মাছরাঙার ঠোঁটের মত বিছানার চাদর শুঁকে দেখি
আমার ঘর ভেসে যাচ্ছে ভেজা চুলের ঝাঁপটায়
পিঠ থেকে ধুয়ে ফেলা সাবানের গন্ধে।
কিছু সন্ধি খোঁজে হৃদয়
ইদানীং একাকী কিছু নিঃসঙ্গতার পাঁজর গুনে
শঙ্খময় হেঁটে যাওয়া দৃশ্যমান হয়ছে কেবল।
বেদান্ত বৃষ্টিতে ভিজেছে তোমার নিপুন অধর,
মায়াবৃক্ষ তলে বসে সে অধর সিক্ত সন্ধ্যার
আলপনা আমাকে কেবল টেনে নিচ্ছে সূর্যে।
.
আমিতো প্রার্থনা করিনি এ নিদারুণ তীব্র উত্তাপ
তবু কেন নূপুর-ধ্বনি শাঁখ হয়ে বাজে আমার কানে?
বিদ্যুৎ¯পৃষ্ট তালগাছ হয়ে একা আমি দাঁড়িয়ে থাকি,
তোমার হাসির ধ্বনি এসে কিছু শিহরণ তুলে যায়
এই মামুলী শরীরের নিঃসঙ্গ শীতল খাঁজগুলিতে।
.
বস্তুনিষ্ঠ তুমি তবু কেন এক অবাস্তব ছায়া?
আমাকে তুমি চুম্বন করো; যেন আমি খুব
বিশ্বাস করতে পারি তুমি বড় কাছের বাস্তব।
আমাকে তুমি দংশন করো; যেন নীল বিষের
যন্ত্রণা আমার অবিশ্বাসকে মুছে ফেলে নিমেষে।
.
বিকেল জুড়ে মেঘের পালক গুনে কেটেছে কিছু কাল
বড় নিঃসঙ্গ সন্ধ্যার আগে তাই কিছুটাতো প্রেম চাই,
পাই বা না পাই; প্রার্থনাগত কিছু দৈব মন্ত্র জপ শেষে
এখন তুমিই বল কী স্তবে জাগবে তবে হৃদয়ের জীবন?
গান্ধর্ব
বৃষ্টির দিন মেঘ ছিটানো আলো
তোমার রাঙা ঠোঁট অবেলায় ডেকে আনে সন্ধ্যা।
পুঁথি খুলে বসি কুপি জ্বালানো উঠানে
সুর তুলে আমি পড়ি- মানুষের প্রাচীন পুঁথি।
কুপির দৈব-আলো জুড়ে মেঘ- মেঘের ওপারে স্বর্গ।
.
আম্রকাননে খুব নৃত্য হয়
পাতায় পাতায় নূপুরের ধ্বনি
আমি নিজের ছায়ার বদলে দেখি গান্ধর্ব উৎসব।
অতঃপর মৌসুমি বায়ুতে আমরা সিক্ত হলে
কেউ একজন শঙ্খধ্বনিতে বরণ করে আমাদের উৎসব।

কবি, গল্পকার ও প্রকাশক।