গুচ্ছকবিতা
মানুষের কেজি কতো হলো?
ঝরে যায় কুয়াশার মতো মৃত্যু টুপটাপ
মানুষের কেজি কতো হলো?
আকাশ সুনীল হলো আরো
জল স্বচ্ছ, বিশুদ্ধ বাতাস
আর অরণ্যে নির্ভয় সবুজ
মানুষের কেজি কতো হলো?
কতো লেফট রাইট
রাষ্ট্র রাষ্ট্র তারকাঁটা
ধর্ম অধর্মের ভেদ
বলো এই অসুখের দিনে
কতো আরো মানবিক হলো
তোমাদের পারমানবিক
ওয়ান বেল্ট-রোড হয়ে কতোদূর এগোবে মানুষ
কূট-কৌশল করে আর কতো আকাশ দখল
কতো আর খনিজ লোপাট
শিশুর মায়ের বুক দুধশুন্য করে
তোমাদের বেড়েছে বাজার
তবু এই অসুখের দিনে তোমার আমার প্রাণ
কেমন সমান হয়ে গেলো
কেমন সহজ হয়ে গেল।

একা
এই বুকে না রাখিয়ো বুক
বুকে রাখা অসীম অসুখ
না দিয়ো দখিন হাত হাতে
হাত ভেজা করুণ প্রপাতে।
ঘিরে থাকা আঁধার দেয়াল
বলে গেছে একা থাকা ভালো
একা চাঁদ, সূর্য-ঈশ্বর একা
একা আমার মা।
এই মনে না রাখিয়ো মন
মনে নীল নীরব দহন
না রাখিয়ো চোখ এই চোখে
চোখ শেষ প্রজন্মের শোকে।
হাতে হাত রেখেছিল যারা
তারা জানে এই সমগ্র কেমন একা
তোমাকে সমগ্র ভেবে ছুঁই
মাঝরাতে একা ফুল ফোটে
অবশেষ ভুলে যাই নরম পলির মতো হাত
মায়ার নগর।

জীবনেই থেকো
মেঘ ভেঙে উড়ে যায় পাখি
খুলে যায় জড়োর কপাট।
জলের ভাঙন লাগে এপারে ওপারে
জেগে ওঠে পতিত নগর
মুক্তির সরগাম বেজে ওঠে আঙুলে আঙুলে।
পরিচিত এই জনপদে
বাহারি দালান বাড়ে সমানে সমান
পাঠঘর পাড় হয়ে ছুটছে মানুষ অবিরাম
কিছু আরো সামান্য সফল সঞ্চয়ে
কোন কোন প্রেমিক আছে পুরুষ আছে
গোপনে কুড়িয়ে রাখে অজস্র বকুল এখনো
প্রেমিকারা জল ধরে চোখে।
এই যে পাখির সংসার
দিন দিন ঋণ করে কতোবার ভেঙেছে গড়েছে
এইখানে মায়া জমে আছে
যেখানেই যাও
যেখানে যেখানে
জীবনেই থেকো বন্ধু
একবার হারালে পাবে না প্রিয় পাখিদের এই সংসার
এই প্রিয় পাহাড়ের দেখা
ঝোপের অন্ধকারে জ্যোৎস্নার সাদা সাদা ফুল
এই যে রোদের লাল মেখে
যে কৃষাণ ফসলে ধরেছে তার প্রাণ
তার গান ওড়ে আজ হাওয়ায় হাওয়ায়
এই কূট কুয়াশার বিপরীতে
যে কৃষাণ একা দাঁড়িয়েছে
ভালোবেসে ফিরে যাবে না সে।

একদিন
একদিন ছুটি হয়ে যাবে ইস্কুল। পাঠ নেই। শিউলী ঝরাতে চেয়ে থামবে না কুসুমপুরের ভোর রাত। সারারাত নেটে জেগে ফুরাবে কিশোর। আমাদের আলো ছায়া-গ্রাম নেই, নদী নেই। বৃক্ষে সবুজ নেই। তিতির পাখির মতো আর সব পাখি ইতিহাস হবে। কারো হাতের অপেক্ষায় নেই হাত । বেশ কিছু ঋণ করে মেনে নেব নির্জন পথ। একদিন সারাদিন সারারাত বৃষ্টি।

ত্যাঁদড়
বরং একাই বাঁচি দ্বিগুণ সরবে। এ জীর্ণ পালে তবু না লাগুক দালাল বাতাস।


কবি। জন্ম ১৯৮৫, খুলনা। পড়াশোনা স্নাতক, কম্পিউটার বিজ্ঞান। কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত জাতীয় মহিলা সংস্থা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সম্পাদক, সাহিত্য পত্রিকা ‘মৃৎ’।