মাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অনেক ছবি। সেসব ছবি সাড়াও জাগিয়েছে বিশ্বজুড়ে। আজ মা দিবসে তেমন কয়টি সিনেমা চাইলে দেখে নিতে পারেন মা কে নিয়ে।
মাদার : এ ছবিকে ‘হারানো ছবি’ হিসেবে ধরা হয়। আমেরিকান নির্বাক স্বল্পদৈর্ঘ্য নাট্য চলচ্চিত্র। এটি প্রযোজনা করেছে থানহাউসার কোম্পানি। এটি একটি আবেগপ্রধান চলচ্চিত্র, যেখানে উইল অ্যালেন নামের একটি ছেলে তার সৎ বাবার ভয়ানক অত্যাচারের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। আর তার মা একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে তার ফিরে আসার প্রতীক্ষায়। কুড়ি বছর পর উইল বাড়ি ফিরে আসে একজন প্রখ্যাত উকিল হয়ে। কিন্তু সে তার বাবা-মাকে আর খুঁজে পায় না। পরবর্তীতে উইল একজন মহিলার হয়ে মামলা লড়ে। যার বিপক্ষে ছিল একটি খরিদ্দার প্রতিষ্ঠান। সেই মহিলাকে উইল মা হিসেবে চিনতে পারে এবং এভাবে তাদের পুনঃমিলন হয়। এ ছবির মূল অভিনয়ে ছিলেন আনা রোসমন্ড, ফ্রাঙ্ক এইচ ক্রেন ও ক্যারি এল. হ্যাসিং। ‘মাদার’ ছবিটি ১৯১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়। এ ছবি বিশ্বজুড়ে এখনও বেশ জনপ্রিয়।
টু উইমেন : আলবার্তো মোরাভিয়ার লেখা ‘টু উইমেন’ উপন্যাসকে বেছে নিয়ে ইতালীয় নির্মাতা ভিত্তোরিও ডি সিকা নির্মাণ করেন মা নিয়ে ‘টু উইমেন’ নামের ছবি। যা মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় কুঁকড়ে যাওয়া মানবতার করুণ গাঁথা সবচেয়ে ভালোভাবে উঠে এসেছে এ ছবিতে। যুদ্ধের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাওয়া এক মা-মেয়ের করুণ গল্প বলা হয়েছে এতে। নাৎসিবাহিনীর আক্রমণে দিশাহারা হয়ে অন্যান্য রোমবাসীর সঙ্গে লাতসিওতে পালিয়ে আসে সেসিরা ও তার ১২ বছর বয়সী মেয়ে রোসেত্তা। একদিকে প্রাণ হারানোর ভয়, অন্যদিকে শত্রুশিবিরের লালসা থেকে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে মায়ের সংগ্রামের সবকিছুই ‘টু উইমেন’-এ উঠিয়ে আনেন ডি সিকা। এ ছবিতে মা সেসিরার ভূমিকায় অভিনয় করেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন। এই চরিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয় তাকে এনে দিয়েছিল অস্কারসহ মোট ২২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
টার্মস অফ এনডিয়ারমেন্ট : জেমস এল. ব্রুকসের পরিচালনায় ‘টার্মস অফ এনডিয়ারমেন্ট’ জয় করেছিল অস্কার। মা-মেয়ের ত্রিশ বছরের গল্প নিয়েই ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। পিতৃহীন একমাত্র মেয়ে এমাকে আগলে রেখে মা অরোরা খুঁজে ফেরে সত্যিকারের ভালোবাসা। এদিকে এমাও বড় হয়ে জড়িয়ে পড়ে জটিল এক সম্পর্কে, নিজেও অর্জন করে মাতৃত্বের স্বাদ। তাদের চারপাশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলেও একান্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মা-মেয়ে দুজনেই এগিয়ে আসে একে অপরের সাহায্যে। এ ছবিতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে শার্লি ম্যাকলেই সে সময় জিতে নেন সেরা অভিনেত্রীর অস্কার।
আকিলাহ অ্যান্ড দ্য বি : আকিলাহর জাতীয় পর্যায়ে বানান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং সেই অংশগ্রহণে মেয়েকে বিজয়ী দেখতে মায়ের চেষ্টা নিয়ে ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘আকিলাহ অ্যান্ড দ্য বি’। এটি পরিচালনা করেন টিডুগ অ্যাটকিসন। সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে মায়েদের পরিশ্রমের কথাই উঠে এসেছে এ ছবিতে। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এগারো বছর বয়সী বানানের জাদুকর আকিলাহ।
দ্য ব্লাইন্ড সাইড : মার্কিন ফুটবল তারকা মাইকেল ওহার আর তার ‘মা’ লেই অ্যান টুওহির গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘দ্য ব্লাইন্ড সাইড’। ২০০৯ সালে জন লি হ্যানক নির্মিত এ ছবিতে লেই অ্যান এর ভূমিকায় অভিনয় করেন স্যান্ড্রা বুলক। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছিলেন সেরা অভিনেত্রীর অস্কার।
হাজার চৌরাসি কা মাঃ
চারু মজুমদারের ইশতেহারের ডাকে নকশালবাড়ি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল অসংখ্য শিক্ষিত তরুণ। কলকাতায় তখন সময়টা সত্তরের দশক। অন্যান্য অনেক তরুণের মত কলেজপড়ুয়া ব্রতিও গিয়েছিল সে আন্দোলনে। কিন্তু বাড়িতে খবর এলো, সে ফিরেছে লাশ হয়ে। লেখাপড়ায় ভাল, আদরের সন্তান ব্রতী নয় বরং হাজার চুরাশি নাম্বার লাশের দায়িত্ব বুঝে নিতে বলা হয় তার মা, সুজাতাকে।
নকশালবাড়ি আন্দোলনে ছেলে হারানো এক মায়ের মর্মস্পর্শী এই গল্প লিখেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী, তার ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসে। সেই গল্প থেকেই ভারতে ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয় ‘হাজার চৌরাসি কা মা’। প্রায় ১৮ বছর পর সেলুলয়েডের জগতে ফিরে শোকাহত সেই মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জয়া বচ্চন। কলকাতায় ষাট থেকে আশির দশকের মধ্যে বামপন্থী নকশালদের আন্দোলনে পুলিশি অত্যাচার এবং গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছিল এরকম অসংখ্য তরুণ। গুমোট এই পরিস্থিতির বেদনাবহুল প্রেক্ষাপট পরিষ্কারভাবেই ধরা পড়েছিল জয়া বচ্চনের সুজাতা চ্যাটার্জি চরিত্রটিতে। গোভিন্দ নিহালানি নির্মিত ‘হাজার চৌরাশি কা মা’ সেবার পেয়েছিল সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
শক্তি দ্য পাওয়ার : বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ও বিখ্যাত একটি ছবি ‘শক্তি : দ্য পাওয়ার’। এ ছবিটি মূলত মা কেন্দ্রিক। ১৯৯১ সালের হলিউডে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘নট উইদাউট মাই ডটার’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বলিউডে নির্মিত হয় এ ছবি। ২০০২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তি পায়। এতে দেখানো হয়েছে একজন মায়ের লড়াইয়ের গল্প। মায়ের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী কারিশমা কাপুর। ছবিটির জন্য ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন তিনি।
জাজবা : মা নিয়ে বলিউডের একটি অন্যতম ছবি জাজবা। এটি পরিচালনা করেন সঞ্জয় গুপ্তা। এ ছবির গল্পটি এমন যে, মা এমনই একজন মানুষ যিনি সন্তানকে রক্ষা করার জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকেন। এ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন ঐশ্বরিয়ার রায়। এ ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ইরফান খান। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৫ সালের ৯ জুন।
উত্তর ফাল্গুনি : শ্রেণী বৈষম্য এবং সংগ্রামের এক করুণ চালচিত্র হিসেবেই নির্মাতা অসিত রায় বানিয়েছিলেন ‘উত্তর ফাল্গুনি’ ছবিটি। নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে এ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। এ ছবিতে তিনি ছিলেন একজন মা, আবার একই সঙ্গে সেই মায়ের সন্তানও। দারিদ্র্য, নিপীড়িনের হাত থেকে শুধু মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন মদ্যপ স্বামীর আশ্রয় থেকে। হয়ে যান পর পুরুষের বিনোদনের খোরাক। ষাটের দশকে কলকাতার প্রেক্ষাপটে এমন এক গল্প সাড়া ফেলে দিয়েছিল সর্বত্র। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা বাংলা ছবির সাফল্য অর্জন করেছিল ১৯৬৩ সালে নির্মিত এ ছবি।