ফাইনালে চোখ বাংলার মেয়েদের

Reading Time: 3 minutes

ক্রীড়া প্রতিবেদক ॥

যেকোন খেলাতেই ফেভারিট দল মানেই যে তারা সবসময় জিতবে বা সফল হবে, এমনটা নয়। যদি তাই হতো, তাহলে সব খেলাই হয়ে যেত একঘেঁয়ে, পানসে, বিরক্তিকর। সেটা হয় না বলেই মাঝে মধ্যেই দুর্বল দলের কাছে হারের তেতো স্বাদ গ্রহণ করে সবল দল।
এতে করে খেলাটির আকর্ষণ, গুরুত্ব ও রোমাঞ্চ বেড়ে যায় বহুগুণে। বুধবার বাংলার বাঘিনীদের জন্য হতে পারে তেমনই একটি দিন। আন্ডারডগ হয়ে তাদের হারাতে হবে ফেভারিট ভারতকে। কোন সন্দেহ নেই, তাদের এই লক্ষ্যপূরণ ভীষণ কষ্টসাধ্য, কিন্তু একেবারেই অসম্ভব নয়। যদি তাদের এই প্রচেষ্টা সফলতায় রূপ নেয়, তাহলে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারানোর ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি তারা নাম লেখাতে পারবে ‘সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর প্রথম আসরের ড্রিম ফাইনালে। নেপালের বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সেমিফাইনাল মহারণ। এর আগে একই ভেন্যুতে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে প্রথম সেমিতে তিনবারের রানার্সআপ ও স্বাগতিক নেপালকে মোকাবেলা করবে শ্রীলঙ্কা।
পরিকল্পনা ছিল দুটি। একটি সফল হয়েছে, আরেকটি হয়নি। একটি হারে আংশিক সফলতা এসেছে। তবে ওই হার ভুলে এখন সেমিতে চোখ রাখছে বাংলার বাঘিনীরা। এজন্য জোর অনুশীলন করেছে তারা। দলের জন্য সুখবর কৃষ্ণা রানী সরকারকে সেমির ম্যাচে পাবেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। অনুশীলনে চোট পাওয়ায় গ্রুপের দুই ম্যাচেই খেলতে পারেননি এই নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড। সেমিতে যদি জিততে পারে, তাহলে টানা দু’বার সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নাম লেখাতে পারবে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। আগের ফাইনালে (২০১৬ সালে) এই ভারতের কাছেই ৩-১ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল সাবিনাদের।
পরিসংখ্যানই বলছে  প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত বেশ কঠিন দলই বাংলাদেশের জন্য। কেননা সিনিয়র পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে এর আগে কখনই ভারতকে হারাতে পারেনি তারা। এ পর্যন্ত ৮ বারের মোকাবেলায় ৭টিতেই হেরেছে লাল-সবুজরা। ড্র করেছে ১টি ম্যাচে। অভিজ্ঞতা, ফিটনেস, বয়স, গতি, ক্ষিপ্রতা … সবকিছুতেই ভারত এগিয়ে। তবে বাংলাদেশের মেয়েরাও গত কয়েক বছরের মধ্যে আরও উন্নতি করেছে। এখন কেমন উন্নতি করেছে সেটাই দেখার।
‘এ’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক নেপালের কাছে হার মানে ৩-০ গোলে। গ্রুপ রানার্সআপ হয় তারা। পক্ষান্তরে ভারত ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৬-০ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৫-০ গোলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে ওঠে। গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপপর্ব ও ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বে গোলশূন্য ড্র করলেও শিরোপা লড়াইয়ে ৩-১ ব্যবধানে হেরেছিল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে গ্রুপের সেরা হওয়ার লক্ষ্য ছিল বাংলার মেয়েদের। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রথমে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ার পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেননি সাবিনা-মারিয়ারা।
ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভাল। বুধবারের সেমিফাইনাল ম্যাচ অন্যরকম ম্যাচ। এটা হলো নকআউট ম্যাচ। ভারত চারবারের চ্যাম্পিয়ন, তাদের অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে আমাদের ভাবার অবকাশ নেই। সেমিফাইনালে জয়ের জন্যই মাঠে নামব। মেয়েরা সর্বোচ্চ দিয়েই খেলবে।’ লাল-সবুজের কোচ আভাস দিয়েছেন ফরোয়ার্ড লাইনআপ কেমন হতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি খেলাতে পারেন চার ফরোয়ার্ড সাবিনা, স্বপ্না, কৃষ্ণা ও সানজিদাকে। শামসুন্নাহার লেফটব্যাক, রাইটব্যাক শিউলি আজিম, আঁখি, মাসুরা, মারিয়া ও মনিকা। ৪-২-৪ ফর্মেশনে খেলবে। ডিফেন্ডিংয়ের সময় ৪-৪-২। এ্যাটাকিংয়ের সময় ৪-৪-২ এবং ডিফেন্ডিংয়ের সময়ও তাই। তখন সানজিদা এবং কৃষ্ণা নেমে এসে শিউলি এবং শামসুন্নাহারের সঙ্গে খেলবে।


ভারতের কাছে হারলেই মিশন শেষ। তবে এ নিয়ে চিন্তিত নন ছোটন, ‘একজন কোচ হিসেবে আমি অবশ্যই এটাকে শেষ ম্যাচ হিসেবে ভাবতে চাই না। সেমিতে যেকোনো কিছুই হতে পারে। এরকম অনেক ঘটনা পৃথিবীতে ঘটছে যে আন্ডারডগরাই জিতেছে, এই ম্যাচেও এমন কিছু ঘটতে পারে। আমাদের মেয়েরা বিগত দিনে অনেককিছু শিখেছে।’

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>