| 10 অক্টোবর 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা ১৪৩১

উৎসব সংখ্যা গদ্য: স্টোন ফরেস্ট এবং । ঈশিতা ভাদুড়ী

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

বিশ্বে কত ভাস্কর্য এবং কত শত গল্পকথার সৃষ্টি সেই সব ভাস্কর্যকে ঘিরে ভাবলে অবাক হতে হয়। দেশে দেশে ঘুরে সেই সব বিচিত্র কাহিনী সেই সব অতুলনীয় ভাস্কর্যের মুখোমুখোমুখি হয়েছি আমরা অনেকবার।

চিনের অন্যতম দ্রষ্টব্য ‘স্টোন ফরেস্ট’, পাথরের জঙ্গল। কুনমিঙ শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ৮৩ কিলোমিটার দূরে স্টোন ফরেস্টে আমরা ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। আশি হেক্টর জায়গা জুড়ে পাথরের এই জঙ্গল যথার্থই বিচিত্র। চুনাপাথরের (লাইমস্টোন) পাহাড়চূড়া আর শিলাস্তূপ গাছেদের মতো দাঁড়িয়ে, ১৬ থেকে ৯৮ ফুট লম্বা সেই সব স্তম্ভগুলো লেকের জল থেকে ক্ষয়ের কারণেই তৈরী। প্রায় ২৭০ মিলিয়ন বছর আগে একটি অগভীর সমুদ্র ছিল। এই অঞ্চলের উথ্বান ডিপোজিশনের পরে ঘটেছিল। পরে হাওয়া-বাতাস এবং প্রবহমান জলের সংস্পর্শে এই চুনাপাথরের স্তম্ভগুলি আকৃতি পায়। এই গঠনগুলি যতদূর দৃষ্টি যায়, দেখতে একটি বিশাল পাথরের ননের মতো, তাই নাম ‘দ্য স্টোন ফরেস্ট’। ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট হিসেবে উল্লিখিত এই স্টোন ফরেস্ট।

তিন হাজার নশো সাঁইত্রিশ ফুট লম্বা আঁকাবাঁকা গোলকধাঁধাঁর মতো রাস্তায় আশ্চর্য সব আকারে পাথর। আমাদের গাইড ঐ বাঁকাচোরা সরু খাড়াই এলোমেলো পথে যত বেশী অভ্যস্ত, আমরা তত বেশী অনভ্যস্ত পায়ে গাইডের কথা শুনতে শুনতে স্টোন ফরেস্ট আবিষ্কার করতে থাকলাম। কোথাও কচ্ছপ, কোথাও হাতি, কোথাও মানুষ, কোথাও প্যাগোডার মতো পাথরগুলো কী অদ্ভুত বিস্ময়কর! যথার্থই মায়াময়, মোহময়।


forest-of-china-shilin-dgtl


কিংবদন্তী অনুসারে অবশ্য স্টোন ফরেস্টের এই অঞ্চল (শিলিন) হলো চীনের ইয়ি গোষ্ঠীর সুন্দরী কন্যা আশিমার জন্মস্থান। সেই আশিমা যখন প্রেমে পড়ে, তখন বাধার সৃষ্টি হয়, তাকে তার ভালোবাসার মানুষকে বিবাহ করতে দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে তাকে ওই স্টোন ফরেস্টে একটি পাথরে পরিণত করা হয়, যেখানে এখনো তার নাম উজ্জ্বল। প্রত্যেক বছর ষষ্ঠ চান্দ্রমাসের ২৪তম দিনে ইয়ি গোষ্ঠির মানুষজন উৎসব করে। লোকনৃত্য, কুস্তী-প্রতিযোগিতা ইত্যাদি বিভিন্নরকম উৎসব হয়।

 এরকম অনেক অদ্ভূত অদ্ভূত গল্প সারা চিন জুড়ে ছড়িয়ে আছে। কুনমিঙ খুবই ঝকঝকে তকতকে শহর, নব্বই দশকে সব পুরোনো বাড়িগুলো ধূলিস্মাৎ করে নতুন নতুন উঁচু উঁচু ঝকঝকে সব বাড়িতে নতুন করে কুনমিঙকে সাজানো হয়েছে। দিয়াঞ্চি (Dianchi) লেকের পাশে পাশে গাড়ী চলতে লাগলো। শহরের দক্ষিণ-পূর্বে তিনশো তিরিশ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই লেক চিনের ষষ্ঠ বৃহত্তম মিষ্টিজলের লেক। চাঁদের ফালির মতো দেখতে এই লেকের পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ চারদিকেই পাহাড়। লেকের ধারে খুবই সুন্দর আবহাওয়া, এখানে নাকি উচ্চবিত্তদের বসবাস। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে এই ওয়েস্টার্ন মাউন্টেন্‌স, সমুদ্রের ওপর উনিশশো থেকে দু’ হাজার তিনশো পঞ্চাশ মিটার উঁচুতে, চারটি শৃঙ্গের এই ওয়েস্টার্ন মাউন্টেন্‌সকে ‘বুদ্ধিষ্ট হিল’ও বলা হয়, বুদ্ধদেবের একটি মুর্তি এখানে শায়িত আছে। কথিত আছে এক দুঃখী রাজকুমারীর অশ্রুজলেই নাকি কুনমিঙ লেক তৈরী হয়, আর তার শরীর ওয়েস্ট হিলে রুপান্তরিত হয় ।

ঊ গর্জের বারোটা চূড়ার নাম-ই খুব কাব্যিক। চৈনিক মানুষেরা প্রাকৃতিক বিষয়ের ওপর গল্প বুনতে ভালোবাসে, এই গর্জ এবং পাহাড়গুলো তাদের খুবই পছন্দের বিষয়। সবচেয়ে বিখ্যাত চূড়া হল ‘গডেস পিক’, মনে হয় যেন একটি স্তম্ভের সামনে তরুণী হাঁটু গেড়ে বসে আছে। কথিত আছে, সেই অল্পবয়সী দেবী এক পশ্চিমের রানীর মেয়ে, তিনি এই নির্জন জায়গার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বসবাস শুরু করেছেন। ঊ গর্জের শেষপ্রান্তে badong শহরকে আবার নতুন করে তৈরী করা হচ্ছে, পুরোনো শহরটি জলে ডুবে গেছে, আমরা লঞ্চে করে সেই ডুবে যাওয়া শহরের ওপর দিয়ে যেতে যেতে গাইডের কথা শুনতে থাকলাম। শুনতে শুনতে মন কেঁদে উঠল, জলের নিচে কত প্রাণ কত হাহাকার, আজ ভ্রমণার্থীরা সেখানে নৌবিহারে বিলাস করছে!

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত