পৌরাণিক কাহিনীতে বন্ধু

Reading Time: 3 minutes

কথাতেই আছে ‘হরিহর আত্মা’। বন্ধুত্বের দৃঢ়তা বোঝাতে, গভীরতা বোঝাতে এই শব্দটি বহুল প্রচলিত। অর্থ হল এক-কে অন্যের থেকে আলাদা করা যায় না। তেমন বন্ধুত্বের নিদর্শন যে আজকের দুনিয়ায় নেই তা বলা চলবে না। তবে এমন নির্দশন পৌরাণিক ভারতে অনেক ছিল। এমনও দেখা গিয়েছে বন্ধুত্ব ধর্ম পালন করতে, কথা রাখতে অন্যায়ের সঙ্গও দিয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু বন্ধুকে ত্যাগ করেননি।

কৃষ্ণ-সুদামা

বন্ধুত্বের মাঝে জাত ধর্ম আর্থিক ক্ষমতা যে কিছুই নয় তার প্রমাণ কৃষ্ণ-সুদামা। একজন রাজা অন্য জন দরিদ্র। তবুও বন্ধুকে তার যোগ্য সম্মান কী ভাবে দিতে হয় তা শেখা যায় কৃষ্ণ-সুদামার সম্পর্ক থেকে। এক বার কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে দ্বারকায় এসেছিলেন সুদামা। উদ্দেশ্য ছিল নিজের দারিদ্র্যের কথা বলে সাহায্য প্রার্থনা। তখন তিনি খুব অর্থিক ও খাদ্য সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। নিজের সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না তাঁর। তবু তিনি সঙ্গে করে চার মুঠো চিড়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বন্ধু কৃষ্ণের জন্য। সেই চিড়ে ছিল কৃষ্ণের কাছে বন্ধুত্বের স্মৃতি সম্মান। সুদামা দ্বারকায় পৌঁছনোর পর কৃষ্ণ নিজে হাতে তাঁর পা ধুইয়ে দেন। চরণামৃত গ্রহণ করেন। স্ত্রী রুক্মিণী নিজে তাঁকে বাতাস করেন। তার পর কিছু দিন সেখানেই থাকেন সুদামা। কিন্তু নিজের সমস্যার কথা বলতে পারেন না। কিন্তু বাড়ি ফিরে তিনি অবাক হয়ে যান। কোনো কিছু না চাইতেই কৃষ্ণ সব দিয়েছেন তাঁকে। বাড়ির অবস্থা ও তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি সবই বদলে গিয়েছে তত দিনে।

কর্ণ-দুর্যোধন

কর্ণের সঙ্গে দুর্যোধনের বন্ধুত্ব কলঙ্কিত হলেও তা বন্ধুত্বের পরিভাষায় মহৎ। কৃপাচার্যের কাছে কর্ণের মান রাখতে মুহূর্তের মধ্যে কর্ণকে অঙ্গদের রাজা ঘোষণা করেছিলেন দুর্যোধন। এর পেছনে নিজের স্বার্থ থাকলেও পরবর্তী কালে এই কৃতজ্ঞতা পাশে আটকে যান কর্ণ। অবশেষে দুর্যোধনের বন্ধুত্বের খাতিরে ধর্ম যুদ্ধে নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেও পিছ পা হননি তিনি।

কৃষ্ণ-অর্জুন

কৃষ্ণ অর্জুনের বন্ধুত্বের কথা কে না জানে। কৃষ্ণ ছিলেন অর্জুনের সখা, দিক দ্রষ্টা,  নিয়ন্ত্রণ কর্তা, পরামর্শদাতা। অর্জুনের প্রতি কৃষ্ণের উচ্চারিত পরামর্শ গীতায় সংকলিত।

সীতা-ত্রিজাতা

সীতা যখন রাবণের কাছে বন্দি ছিলেন তখন রাবণের কর্মচারী ত্রিজাতার ওপর দায়িত্ব ছিল সীতার দেখাশোনা ও নজর রাখার। ত্রিজাতাই বাইরের যাবতীয় খবর সীতাকে এনে দিয়ে সাহায্য করতেন। এমন কি তাঁর এই আনুগত্যের জন্য রাবণ বধের পর রামসীতা তাঁকে পুরস্কৃতও করে। এখনও  উজ্জ্বয়িনী  ও বারানসীতে স্থানীয় দেবী হিসাবে পূজিত হন ত্রিজাতা।

দ্রৌপদী-কৃষ্ণ

মহাভারতে আরও একটি বন্ধুত্বের কথা জানা যায়, তা হল দ্রৌপদীর সঙ্গে কৃষ্ণের বন্ধুত্ব। কৃষ্ণ ছিলেন দ্রৌপদীর সখা আর তিনি সখী। এই বন্ধুত্ব আধ্যাত্মিক গভীরতায় পূর্ণ। ভরা সভার মাঝে যখন চরম আপমানিত হতে বসেছিলেন দ্রৌপদী, কেউ ছিল না সেই লাঞ্ছনা থেকে তাঁকে মুক্তি দাতা। তিনি প্রাণ ভরে সখাকে স্মরণ করেছিলেন। তখন সখীর লজ্জা নিবারণের জন্য ত্রাতা হয়ে দেখা দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। শিশুপাল বধের সময় নিজের সুদর্শনের আঘাতেই আঙুল কেটে গিয়েছিল কৃষ্ণের। সেই ক্ষত আঙুলে নিজের শাড়ি ছিঁড়ে বেঁধে দিয়েছিলেন কৃষ্ণা অর্থাৎ দ্রৌপদী। সময় আসতে তারই প্রতিদান দিয়েছেন তিনি।

মহাভারত রামায়ণ পৌরানিক কাহিনীতে এমন আরও অনেক বন্ধুত্বের উদাহরণ পাওয়া যায়। তবে এই সব তো গেল পৌরানিক কাহিনীর কথা। আপনার বন্ধুর সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা কতটা গভীর এই ফেন্ডশিপ ডে-তে একবার যাচাই করে নেবেন নাকি?

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>