এক যে ছিলো রাজকন্যা

Reading Time: 2 minutes

আজ ২৯ জুলাই রাজমাতা গায়েত্রী দেবীর প্রয়াণ দিবস। ইরাবতী স্মরণ করছে ভারতের অন্যতম সেরা কেতাদুরস্ত সুন্দরী এই রাজকন্যা তথা রাজমাতাকে।যিনি রূপকথার রাজকাহিনী লিখেছিলেন নিজের হাতে।


ফ্যাশন থেকে রাজনীতি।সর্বত্র ছিল তাঁর অনায়াস গতি।অবাধ পদচারণা।তাঁর নামের আগে মহারানি কথাটা চলে আসত সহজাত সম্ভ্রম আর আভিজাত্যে।

১৯১৯ সালের ২৩ মে গায়ত্রীর জন্ম হয়েছিল যেন রানি হওয়ার জন্যেই।ছোট থেকেই রাজ-আবহে বড় হয়ে ওঠা। কোচ রাজবংশী পরিবারে প্রিন্স জিতেন্দ্র নারায়ণের কন্যা।মা ছিলেন ইন্দিরা রাজে। বরোদার মারাঠা রাজকুমারি।মহারাজা তৃতীয় সয়াজিরাও গায়কোয়াড়ের একমাত্র কন্যা। মায়ের থেকেই রূপ আর আভিজাত্য উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন গায়ত্রী।

তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুর এবং ঠাকুরমা সুনীতি দেবী।

(সুনীতি দেবী ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা তথা সমাজ সংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের মেয়ে।) গায়েত্রী দেবীর শিক্ষা শুরু লন্ডনে। শিশুপাঠের পরে শান্তিনিকেতনের পাঠভবন। তারপর সোজা সুইজারল্যান্ড পাড়ি। শেষে ফের লন্ডনে ফিরে আসা।দেশ বিদেশের সেরা সেরা প্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ হয় গায়ত্রীর পড়াশোনার পাঠ।

শুধু পড়াশোনাই নয়। একইসঙ্গে শেখা হল অশ্বারোহণ এবং পোলো খেলা।সেইসঙ্গে বন্দুকবাজি ও শিকারাভিযানে যাওয়া ছিল মহারানি গায়ত্রী দেবীর অন্যতম পছন্দের শখ। আর ছিল গাড়ির শখ দেশি বিদেশি। তিনি প্রথম ভারতে আনেন 500 SEL পরে সেটি মালয়েশিয়ায় চলে যায়।

সম্পর্কে তিনি মুনমুন সেনের মাসিশ্বাশুড়ি। গায়ত্রীদেবীর দিদি ইলাদেবীর পুত্রবধূ আমাদের সুচিত্রাকন্যা।গায়ত্রীদেবীর রূপগুণমুগ্ধ তিনি আজীবন বারবার স্বীকার করেছেন, মুনমুন।

রাজ পরিবারের সহবত্‍-আচার শেখার মধ্যেই নতুন জীবনে প্রবেশ ১৯৪০ সালে,২১ বছর বয়সে গায়ত্রীর বিয়ে হল এক রাজার দ্বিতীয় সোয়াই মান সিং-এর সঙ্গে এটা ছিল প্রেমের বিয়ে।গায়ত্রী দেবী ছিলেন তাঁর স্বামীর তৃতীয়া স্ত্রী তবে দুই রাজস্থানি রাজকন্যা সতীনের মতো মোটেও পর্দানসীন ছিলেন না। ক্রমে জয়পুরের মহারানি বা রাজমাতা পদমর্যাদায় আসীন হয়েছিলেন গায়ত্রী দেবী। তাঁদের একমাত্র সন্তান জগতের জন্ম হয় ১৯৪৯-এর ১৫ অক্টোবর।পরবর্তী কালে থাইল্যান্ডের রাজকুমারীর সঙ্গে বিয়ে হয় জগত্‍ সিং-এর।

স্বাধীনতার পরে লোপ পায় রাজতন্ত্র, হাতছাড়া হয়ে যায় অনেক প্রিন্সলি স্টেট মহারানি গায়ত্রী দেবীর এবার হাতেখড়ি হয় স্বাধীন ভারতের ‘রাজ’নীতিতে।রাজা গোপালাচারীর স্বতন্ত্র পার্টির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কংগ্রেসের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল এই রাজনৈতিক দল।

১৯৬২ সালে লোকসভা নির্বাচনে তিনি রেকর্ড ব্যবধানে জিতেছিলেন। বৈধ ২ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৬ টি ভোটের মধ্যে গায়ত্রী দেবী পান ১ লাখ ৯২ হাজার ৯০৯ টি ভোট।গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এর হিসেবে এটা রেকর্ড ব্যবধান।

তবে আলোর পাশাপাশি আছে অন্ধকারও ১৯৭১ সালে কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য গায়ত্রী দেবীকে ৫ মাস তিহাড় জেলে কাটাতে হয়।

বর্ণময় গায়ত্রী দেবীর জীবন সবসময় আগ্রহের তুঙ্গে। রাজনীতি থেকে সরে আসার পরে প্রকাশিত হয় গায়ত্রী দেবীর আত্মজীবনী A Princess Remembers পরে তাঁকে সামনে রেখেই তৈরি হয় Memoirs of a Hindu Princess ফ্রাসোয়াঁ লেভির পরিচালনায়।

শেষ বয়সে গ্যাস্ট্রিক ডিজ-অর্ডারে আক্রান্ত গায়ত্রী দেবী চিকিত্‍সার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে। ভর্তি হন কিং এডওয়ার্ড হাসপাতালে।কিন্তু সেখান থেকে জয়পুরে ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করেন ৯০ বছরের গায়ত্রী দেবী।

সেইমতো এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে জয়পুরে উড়িয়ে আনা হয় রাজমাতাকে। জয়পুরের হাসপাতালে ২০০৯-এর ২৯ জুলাই প্রয়াত হন তিনি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>