| 26 এপ্রিল 2024
Categories
চলচ্চিত্র বিনোদন সিনেমা

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলে সোয়েটার

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

।।আ কা শ মি শ্র।।

টুকু কিচ্ছু পারে না ৷ টুকুর কোনও গুণ নেই ৷ না গান পারে, না নাচ৷ আঁকতেও পারে না টুকু ৷ এমনকী, চা বানাতে গেলেও, সেই চা একেবারে অখাদ্য বানিয়ে ফেলে ! এই না পারাটাকে টুকু মেনে নিয়েছে ৷ এ না পারাটাকে নিয়ে টুকু থমকে গিয়েছে ৷ আর এই এতগুলো না পারার মধ্যে টুকুর একটা গুণ ৷ টুকু ভালোবাসতে পারে ৷ তাই তো বার বার পাবলোর কাছে ছুটে যায় টুকু, ওই একটা ‘পারা’ নিয়েই ৷ কিন্তু টুকু সেখানেও বিফল ৷ তাঁর ভালোবাসতে পারাটা পাবলোর কাছে রোজের কাটলেট আর চায়ের চুমুক! মানে টাইমপাস ! টুকুর জীবন এরকমই, জট লেগে যাওয়া উলের গোল্লা পাকানো বল ৷ যা কিনা রঙিন, নরম হয়েও ভীষণভাবে জটিল ৷ আর তাঁর ঠিক উল্টো টুকুর বোন ! সে উচ্ছ্বল, নানা গুণ নিয়ে সবসময় টুকর পাশে বিপরীত রঙ ৷ ঠিক এমনই সময় টুকুর জট লাগা জীবনে চলে আসে উল কাঁটা ৷ বহুবার পাত্রপক্ষের কাছে অগ্রাহ্য হয়ে অবশেষে টুকুর সামনে চলে আসে বিয়ের মাপকাঠি মানে একটি সোয়েটার ৷ যা বানাতে পারলেই, কেল্লাফতে ৷ টুকু পেয়ে যাবে যোগ্য জীবনসঙ্গী ৷ অন্যদিকে, টুকুর মা-বাবার মন থেকে নামবে পাথর৷ এতো উল কাটা নয়, যেন টুকুর হাতে চলে আসে জাদুরকাঠি !

হাতে উল কাঁটা ৷ অগোছালো জীবন ৷ পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে টুকুর জীবনের নতুন অধ্যায়৷ সোয়েটার বুনতে শেখা ৷ উল কাঁটার অজুহাতে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা ৷ প্রথমে বিয়ের জন্য ৷ পরেরটা একেবারে নিজের জন্য ৷

পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের ‘সোয়েটার ’ ছবির মোদ্দাটা মোটামুটি এটাই ৷ সহজে বলতে গেলে এক মেয়ের নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প ৷ ভারী কথায় ‘উইম্যান এমপাওয়ারমেন্ট’ ৷ তবে এই ভারী কথাকেই রূপকথার মতো করে সামনে এনেছেন পরিচালক ৷ সঙ্গে পাহাড়ের লোকেশনে ছবি জুড়ে অপার স্নিগ্ধতা ৷ আর তাই তো পাহাড়ের ঢিমে তালে চলা দিনযাপনের মতো, টুকুও অল্প অল্প জীবন বুনে ফেলে, বুনে ফেলে সোয়েটার ৷ কখনও তা চোখ বুজে, কখনও তা বেহালার ছড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে৷ টুকুর কাছে সোয়েটার যেন পরশ পাথর ৷ আর বাদ বাকিটা টুকুর বদলে যাওয়ার গল্প৷

ছবির সবচেয়ে স্ট্রং পয়েন্টই হল সঠিক অভিনেতা নির্বাচন ৷ টুকুর চরিত্রে ইশা খুবই বিশ্বাসযোগ্য৷ ইশা প্রত্যেকটি দৃশ্যে টুকু হওয়ার জন্য যে মাপা অভিনয়টা করেছেন, তার জন্য টুকুকে থুড়ি ইশাকে এক্সট্রা নম্বর ৷ টুকুর বোনের চরিত্রে অনুরাধা স্বপ্রতিভ৷ টুকুর বাবার চরিত্রে খরাজ মুখোপাধ্যায় অনবদ্য ৷ অল্প স্ক্রিন টাইমে জুন মালিয়াও বেশ উজ্জ্বল৷

তবে ছবির মোড় ঘুরিয়ে দেন শ্রীলেখা মিত্র ৷ বলা ভালো, শ্রীলেখার স্ক্রিনে আসার পর থেকেই ছবি যেন আরও বেশি রঙিন হয়ে পড়ে ৷ পাবলো চরিত্রে সৌরভ দাস ও সাম্য চরিত্রে ফারহান ইমরোজকে ভালো লাগে ৷ সিধুও অল্প পরিসরে নজর কেড়েছেন ৷

সোয়েটার ছবির আসল হিরো তিনজন৷ ছবির গল্প, সিনেম্যাটোগ্রাফি আর ছবির মিউজিক ৷ রণজয় ভট্টাচার্যের সুর এই ছবির রূপকার বললে ভুল বলা হবে না ৷ বলা ভালো শোয়েটারকে উষ্ণতা ধার দিয়েছেন রণজয় ৷ আর উদয়ের ক্যামেরা সেই উষ্ণতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে, কুয়াশা মাখা পাহাড়ের বাঁকে ৷ যা কিনা মন ভালো করে দেয় ৷

তবে সোয়েটার নিয়ে আক্ষেপও রয়েছে ৷ ঠিক কেন জুন মালিয়া শোয়েটারই বুনতে বললেন, সেই যুক্তিটা আরও একটু পরিষ্কার হতে পারত ৷ শোয়েটারের মধ্যে দিয়ে শুধুমাত্র পুত্রবধূর সঙ্গে কথা বলার বিষয়ের মিল খুঁজতে চাওয়াটা বেশ দুর্বল যুক্তি !

সোয়েটার আসলে এই ছবিতে একটা জীবনকে তুলে ধরার মেটাফোর ৷ উল কাঁটার মধ্যে দিয়ে জট পাকানো অগাছালো জীবনকে বুনে নেওয়ার গল্পই বলে এই ছবি ৷ যেখানে গল্পের সঙ্গে মিশে যায় চেতনা ৷ সঙ্গে দৌঁড়ে চলা জীবনে শোয়েটার কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয় ৷

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত