আজ ১১ আগষ্ট কবি অরবিন্দ চক্রবর্তীর জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
ব্যান্ডদল
গ্রামের কৈ রেওয়াজ করে আকাশ পড়ে। সীতানাথ বসাক বুকে নিয়ে কাটাকুটি খেলে দুপুরের মেঘ।
জগতের ছেলেরা খুলেছে লিরিক্যাল…। ভরসা পাই। এবার ওরা টিনের চালে নামিয়ে আনবে দমাদম মাস্ত কালান্দার। নিশ্চয়ই ফোটাতে পারবে খোঁপার কদম। মেয়ে, সু-যোগে এবার নেমে পড়ো জলনাট্যমে।
কোথাও করতালি হচ্ছে। বলা যাক সম্ভাবনা। আমি তো খুশিতে আটখান রাজা। শব্দ ফোটাচ্ছে জল। বলি, বেশ তো, হল্লা করো। যতখুশি বাজাও তালিয়া। আষাঢ়ে ক্ষিধে মিটবে এবার। ঝিরিঝিরি লিরিক তুলতে ঘেমে উঠুক রোদপ্রার্থী গিটারিস্ট।
ও গণকঠাকুর, আমি তো আহামরিয়া… তোমারে সাধু সাধু করি, অথচ বুঝি না কোন নহবতশিল্প থেকে আসে এমন শ্রাবণঘন মর্সিয়া!
যে গল্প বীরত্বে
ফুলচে স্বভাবের কয়েকজন গোল্ডফিশ
সবার কাঁধে তুলে দেয় কল্পনাপ্রবণ হাসি।
ফলে তোমার মতো একজন পুরুষের হাতে
ক্যামেরা ধরিয়ে দিয়ে
মাগরিবের কমলা-আকাশ রিপোর্ট করতে বলে।
আর তুমি কি না, সেলুলয়েড বিষয়ক কুৎসা ছড়িয়ে
রাত্রিকরের নাভিচক্রে একটার পর একটা রচনা করো স্বপ্নের বাঘাডুলি।
কান্না ধুয়ে দেবে সাবান
ছেলেটি জুপার্কে যেতে পছন্দ করে
উঁচু শপিং মলে কেনাকাটায় যেয়ে এনজয় করে সদ্য বিয়েপ্রার্থী মেয়েটি
লেকের ধারের কাপলগুলো ছাতিম গাছের নিচে আলোকাটাকাটি খেলে
প্রাগৈতিহাসিক বয়সের এক জোয়ান সান্ধ্যপায়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ছাতা মেলে ধরে
বকুলব্যবসায়ী কেন যে প্রার্থনা করে দেশের জাদুঘরগুলো রোয়ানোর মুখে পড়ে তো পড়ুক
হ্রদটা যেন ডেভলপারের দখলে না যায় সে ব্যাপারে জনসচেতনতার দিকে সাবান ছুড়ে দেয় খুব
অবদমন পরিবারের সদস্য হয়ে একটা পাঁঠা বর্ষীয়ান গাছের পাতা মুড়ে খাওয়ার প্রলোভনে মনোজ্ঞ দৃশ্য রচনা করে।
জুয়া অথবা হাতঘড়ি
দাঁড়িয়ে পড়বার পর মনে হতে পারে বাম হাতে তিল নয়, ফুঁ ছিল। ভেঁপুর বিপরীতে ছিল প্রজাপতি অথবা রংধনুর মতো কিছু অবদমনের পূর্বাভাস।
জানো তো? ইতিহাস রাখে হাড়ের বেদনা, আমরা অহেতুক পত্রবাহককে আকাশজরিপে ব্যস্ত রাখি। আবহাওয়াবিদগণও জানেন না আয়ু ঝরে গেলে সেবিকার আঙুল কখনো কাঁপে না। অথচ সমুদ্রের মৃদুদোল কবলিত আকাশকে নয় ডিগ্রি রিখটার স্কেলে ভাবায়।
আমার ভেতর থেকে গজিয়ে উঠা দস্যু নদী, শোনো, আমি কিন্তু পেরেকের পায়ে বিশ্বাস রাখি—মিহিপিনকেও দিই পবিত্র খুনের মর্যাদা।
আসছে দিন নিশ্চয়ই কোনো কালে পতনের শীর্ষ ছোঁবে। আগুনকে সভামঞ্চ করে বানর ও জাদুজীবী ভাই ভাই নাচবে। রাত এগোতে থাকবে ডান করতলের বনস্পতি সড়কে। পথ চলবে গিরিআশ্রমে, রাজকথা ছড়াবে রেখায় রেখায়—জলআলু ঢাকা শস্য আকাশে জুয়া খেলবে আমাদের যত আমিষ।
সিস্টেম
চুরমার আয়নার ঘটনা টিভিস্ক্রিনে দেখে, অনেকে একে সংবাদ বলছেন।
আমি কেন বলব?
হাতির শত্রু নেই
অথচ এই পাতা মরমরিয়ের মিনমিনে চোখে রক্তবিন্দু…
কলোনির মেয়ে, তোমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হল
মুছে দিল আইনদপ্তর… টের পেলে কি?
কেউ জানেন না দেশলাই লুকিয়ে ঘুরছে আয়নাবিক্রেতা
পাথর জ্বলবে
নির্মাণাধীন পৃথিবীর জটিলতা নিয়ে ভুগবেন আমাদের সন্তান।
সমুদ্র সংস্করণ
সমুদ্রে শুয়ে থাকা আজব কিছু নয়—মা শিখিয়েছেন।
কৈবর্ত পরিবারের সন্তান না হলেও
আমাদের নদীপাড়ে বাস, কুমারপুত্র আমি
অদৃষ্টের অথইয়ে জাল ফেলে
বাবা অতল থেকে তুলে আনেন
প্রচুর রহস্য, দৈনিক খুদকুড়ো
সবারই রয়েছে জিতে যাওয়ার বিজ্ঞতা
আমরা হেরে যেতে পারি জেনে
আমার পিতা নিয়ত উজানে বৈঠা চালান
চোখও যে সমুদ্রের সর্বশেষ সংস্করণ
মায়ের মুখে তাকিয়েই পেয়েছি এর সরল অনুবাদ।
গাছেদের পারিবারিক টয়লেট থেকে
হিংসাই চরম ধর্ম। গাছেদের পারিবারিক টয়লেটে গেছ কি?
কোরতা গায়ে পাশের গাছটি জিপার খুলে কী যেন হেসে দেয়!
আরেকবার বলেছে সে, আমি অন্ধ। তালগাছ সাক্ষী—বনবিথি সাক্ষী,
সাক্ষী সত্যুক তারা।
নক্ষত্র যেদিন আমাকে চোখটিপে জেলাসি শেখাল
সে থেকেই আমি গাছখালু। স্ক্রিপ্টে লিখে নিই সপ্তাহ শেষের বাজার।
সুযোগে আমি মাড়োয়ারি-মাড়োয়ান-লাঠিয়ালও।
মিত্রতাবশত চুরি করে খাই চোখের আলো।
আর মার্শাল আর্ট শেখাতে শেখাতে হ্যাট তুলে হুইসেল করি, মার্শাল ল’।
পূর্বজ বৃক্ষরা আমাকে ধরমু ধরমু করে। আমি বলি, ‘এই তো ধর্ম’।
বৃন্দাবন
যা কানে আসে, সবই তার মনে মনে। এবং ভাবাও যায়, বাঁশি বাজে। ভেতর থেকে ছিঁড়েখুঁড়ে বেরিয়ে আসে সাপের কাহালি। তোমারই পোষা অন্যমনস্ক বৃন্দাবন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এ বাঁচা একার নয়, পাপের-কুৎসার। লীলা, নিশ্চয় তুমি বিবাগী নও! তাহলে এবার কুষ্ঠ রোগীর পাশে উন্মোচন কর আদমসুর। দেখবে, কেউ কেউ ‘তুমি ধ্যানী তুমি ধ্যানী’ বলে পালাচ্ছে হৃদয়ম থেকে। পাকাচ্ছে জিলাপি। জিকির থেকে ফেলে দিচ্ছে জীবনের জল। খুলে ফেলছে নাচের মহিমা। ‘মেনকা মেনকা’ বলে ময়ূরী যখনই দেবে ডাক। দেখবে, চারপাশ থেকে খসে পড়ছে যুধিষ্ঠিরের মুখোশ।
কবি,সম্পাদক