সমুদ্র গুপ্তের একগুচ্ছ কবিতা

Reading Time: 2 minutes

আজ ২৩ জুন কবি সমুদ্র গুপ্তের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধা।


তুমি সুন্দর তাই

না
তোমাকে সুন্দর বলব না আমি
তোমাকে সুন্দর বললে তোমার দুটি ঠোঁট রেগে যাবে
তোমাকে সুন্দর বললে তোমার দুটি চোখ রেগে যাবে
তোমাকে সুন্দর বললে তোমার কালো তিল রেগে যাবে

না
তোমাকে সুন্দর বলব না আমি
তোমাকে সুন্দর বললে তোমার ভুরু রেগে যাবে
তোমাকে সুন্দর বললে তোমার মরাল গ্রীবা রেগে যাবে
তোমাকে সুন্দর বললে তোমার পদযুগল রেগে যাবে
তোমাকে সুন্দর বললে তোমার যুগল শীর্ষ রেগে যাবে
তোমাকে সুন্দর বললে তোমার ক্ষীণ কটি রেগে যাবে

না
তোমাকে সুন্দর বলব না আমি
এতো বেশি সুন্দরের ভিড়ে কাউকে একাকী সুন্দর বলার
ঝুঁকি আমি কীভাবে নেবো বলো
তোমার চাইতে আর কে অধিক জানে
সুন্দরেরা বড়ো বেশি ঈর্ষাপ্রিয় হয়

মানুষের নিয়ম

স্বাধীনতা জিনিসটা অন্যরকম
একেক পরিপ্রেক্ষিতে একেক বিষয়কেন্দ্রে
একেক পরিস্থিতিতে একেক চাহিদাক্ষেত্রে
স্বাধীনতার একেক চেহারা

আজ যা তোমার স্বাধীনতা
একই সাথে অন্যের ক্ষেত্রে বিপরীত
আবার
সহসাই এটির চিত্র ও ভঙ্গি পাল্টে যায়

তোমার জন্য কবিতা

তোমার আকাশ থেকে আমার জন্য
কেবলই লাবণ্য ঝরে না
মেঘ জমে শিশিরের ঘাম হয়ে
শিলা ও পাথর জমে মেঘে
বিষ্টির নাম করে

হাওয়ার চাদর উড়িয়ে তোমার অস্তিত্ব নামে
নেমে আসে
আমার পাতা ও কাণ্ডের ওপর
পাখির পালক হয়ে স্নিগ্ধতা গড়িয়ে পড়ে
কোনো কিছু স্নেহ নয় প্রিয়তা নয়
পাথর গড়িয়ে পড়ে গলে যায়

তোমার আকাশ থেকে আমার ওপরে
কোনোই লাবণ্য ঝরে না
তবু
টিকে থাকি বেঁচে থাকি
বিষ্টির লবণ একদিন লাবণ্য জমাবে

আমাদের জীবন শিকড়ে

বিভ্রম

ছেলেবেলায় একবার এক
সম্পন্ন আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গিয়ে
কারুকার্যময় আলমারির ভিতরে রাখা
সুন্দর পুতুল দেখে হাত বাড়িয়ে ধরতে গিয়ে
আলমারির কাঁচ ভেঙে ফেলেছিলাম
পুতুলের কাছ থেকে ফিরে এসেছিলো
রক্তাক্ত ক্ষুব্ধ আঙুল

যৌবনে-
চমৎকার তিল দেখে
হাত দিয়ে ছুঁতে যেতেই
তোমার লাল গাল থেকে
উড়ে গেলো মাছি

এখন তো
চতুর্দিকে দেখতে শুনতে
চলতে ফিরতে শুধু বিভ্রান্তই হই
খরায় বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
আকাশ দেখতে দেখতে যখন
মেঘ দেখে উৎফুল্ল হই
অকস্মাৎ বুঝে ফেলি
মেঘ নয় আকাশ রেখেছে ঢেকে
আণবিক ধোঁয়া

গমের শিষের মতো কোমল
আমার স্বপ্ন যখন
শিশিরের স্বপ্নে বিভোর
ভোর না হতেই এই
আমাদের প্রশান্ত আকাশে জমে
পরমাণু বিস্ফোরণের ধোঁয়া

ভেজা ঠোঁট দেখে যখন ভাবি
চুম্বনের এই বুঝি উৎকৃষ্ট সময়
ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে যেতেই দেখি
ঘৃণা যেন জমাট চাঁচের মতো
কঠিন জমেছে

পাথর সন্দেহ

অবিশ্বাস সন্দেহ আর ঘৃণার
নড়বড়ে পাথরে পা রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি
ঐ বৃক্ষ পত্রপুস্প
চাঁদের ঘোলা আলো তার ওপারে
অগুনিত পাখিদের ঘুম আমাকে আটকে রাখে কেন

ইস্‌ পাথরের পাখা থাকলে কতো ভালো হতো

দাঁড়াতে দাঁড়াতে পড়ে
পড়তে পড়তে দাঁড়িয়ে
কীসব আজেবাজে পৃথিবী
চিন্তার দাঁতের ময়লা জমে জমে পাথর হয়
এক পাথর থেকে সরে আরেক পাথরে দাঁড়াই

কখনো মনে হয় ফুল আর পাখিদের কথা
প্রজাপতি পুস্পের কথা
সন্দেহ দানা বাঁধে আমি কি পাখি নই
আমার দাঁড়ানোটাও কি পাথরের উপরে নয়

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>