সাপ্তাহিক গীতরঙ্গ: ইতিহাস কথা বলে । তপশ্রী পাল

Reading Time: 5 minutes

আজ গীতরঙ্গের বিষয় “পুরোনো বাড়ির ইতিকথা”। আমাদের এই বঙ্গে ঐতিহাসিক বা প্রাচীন বাড়ির অভাব নেই। কারণ বঙ্গের ইতিহাস সুদূরপ্রসারীএই বাংলা দেখেছে হিন্দু রাজাদের উত্থানসুলতানী ও মুঘল আমলে মুসলিম শাসণ। আবার বাংলাই দীর্ঘদিন ছিলো ব্রিটিশ ভারতের রাজধানীব্রিটিশদের অধীনে জমিদার বা করদ রাজাদের বাসভূমি। প্রতিটি সময়ই তার দাগ রেখে গেছে বাংলার বুকে। হিন্দু রাজারা অর্থাৎ পাল বংশসেন বংশশশাঙ্ক কিংবা হর্ষবর্ধনের সময়ের গৌরবঙ্গের প্রায় সব প্রাচীন চিহ্ণই এখন মাটির নীচে। মুঘল শাসণকালের বেশীরভাগ ইমারতও তাই। মুর্শিদাবাদে বর্তমানে টিকে আছে সিরাজউদদৌল্লা বা তার পরবর্তী শাসণকালের কিছু ইমারতযেমন হাজারদুয়ারী প্রাসাদ ইত্যাদিকিন্তু তার ইতিহাস বহুশ্রুত। অনেকেই বেড়িয়ে এসেছেন সেখান থেকে। তাই আজ বরং বলি ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদের তৈরী কিংবা করদ রাজা জমিদার বা বিখ্যাত ব্যবসায়ীদের তৈরী দু একটি বিখ্যাত বাড়ির কথাযেগুলি আজও কালের সাক্ষ্য বহন করে দাঁড়িয়ে আছে এবং যার প্রতিটি ইঁটে আজও ইতিহাস কথা বলেকিন্তু আমরা অনেকেই জানি না তাদের কথা। কালের করাল গ্রাসে তারা আজ বিস্মৃতির অন্ধকারে। তেমন কয়েকটি বাড়ির সঙ্গে আবার সঙ্গীতও জড়িয়ে আছে। আর গীতরঙ্গ মানেই তো বাঙ্গালীর নানা ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গীতের মেলবন্ধনতাই আর দেরী না করে বলে ফেলা যাক এমন একটি বাড়ির কথা।

প্রথমেই চলে যাই মুর্শিদাবাদে। মুরশিদাবাদ জেলার শামশেরগঞ্জ ব্লকে “নিমতিতা রাজবাড়ী”। ১৯২ কাঠা জমির ওপরে তৈরী এই বিশাল ইমারতের জরাজীর্ণ কাঠামোটি আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। আগাছা পূর্ন সিঁড়িশ্যাওলা ধরা দেওয়াল এবং প্রতিটি ইঁট আজ অবহেলায় ম্লান। পাশেই বয়ে চলেছে ভাগীরথী নদীতার কুলকুল বয়ে যাওয়া জলের শব্দে যেন শোনা যায় এই প্রাসাদের ইতিহাস। ১৭৯৩ সালে বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত” প্রচলন করে। এর ফলে এক শ্রেণীর ভূমি মালিক জমিদার নামে পরিচিত হন। তাঁরা ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের প্রতিভূ। তেমনই দু ভাই গৌরসুন্দর চৌধুরী এবং দ্বারকানাথ চৌধুরী নিমতিতা এস্টেট প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রাসাদের গঠনশৈলী ইতালিয়ান ধাঁচের। বহুকক্ষবিশিষ্ট প্রাসাদটিতে চারটি উঠোনবিরাট নাটমহল ও মন্দির। পরবর্তী প্রজন্মে গৌরসুন্দরের ছেলেরা বাবুয়ানী করে কাটালেওদ্বারকানাথের জ্যেষ্ঠপুত্র মহেন্দ্রনারায়ণ নিমতিতাকে বাংলার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছিলেন। তিনি বিশিষ্ট নাট্যমোদী ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বাংলা থিয়েটারের যখন জন্ম হয়তখন তিনি একজন মঞ্চ অভিনেতা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। নিমতিতার নাটমহলে সেই আমলে বিখ্যাত সব নাট্য ব্যক্তিত্বের আগমন হয় ও প্রচুর নাটক অভিনীত হয়। বিখ্যাত নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ এই নিমতিতাতে বসেই তাঁর বিখ্যাত নাটক “আলিবাবা” রচনা করেন ও এই বাড়ির রঙ্গমঞ্চেই তা প্রথম অভিনীত হয়। নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ীও এখানে অভিনয় করেন। এখানে এসেছেন কাজী নজরুল ইসলামসাহিত্যিক অন্নদাশংকর রায়দাদা ঠাকুর প্রভৃতি বরেণ্য মানুষ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বিভিন্ন সিনেমার শুটিং উপলক্ষে দীর্ঘদিন থেকেছেন এই বাড়িতে। ১৯৬৯ সালে ইন্দো পাক চুক্তির সময় এই বাড়িতেই কমিশন বসে। অপর্ণা সেনের “মনসুন ইন ইন্ডিয়ার” ফটো শুটিংও এখানেই হয়।

কিন্তু নিমতিতা রাজবাড়ী সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত হয়ে আছে সত্যজিত রায়ের তিনটি কালজয়ী সিনেমার জন্য। সেগুলি হলো “জলসাঘর”, “সমাপ্তি” এবং দেবী। কে ভুলতে পারে ১৯৫৭ সালে তৈরী জলসাঘরের সেই অমর দৃশ্যগুলি – যেখানে ছবি বিশ্বাস প্রায় কপর্দকশূণ্য এক জমিদারের ভূমিকায় অভিনয় করেনঅসম্ভব সঙ্গীতপ্রেমী জমিদার ভুলতে পারেন না তাঁর অতীত গৌরবের কথাতাঁর প্রাসাদের নাচঘরে মার্গসঙ্গীতের আসরবিখ্যাত বাঈজী ও নৃত্যাঙ্গনাদের নূপুরের সুরতিনি হেরে যেতে পারেন না তাঁর সমসাময়িক সদ্য বড়োলোক হওয়া প্রতিদ্বন্দীর কাছে। তাই শেষ সম্বলটুকুও বিক্রয় করে তিনি আয়োজন করেন তাঁর শেষ আসরশেষবারের মতো জ্বলে ওঠে বিশাল ঝাড়লন্ঠনকতো ইয়ার বন্ধুমুখে সুগন্ধী তামাকের নলতাকিয়ায় হেলান দিয়ে ছবি বিশ্বাস শুনছেন বেগম আখতারের সেই বিখ্যাত গজলতাঁর চোখে যে সঙ্গীতসুধা পানের আনন্দঐতিহ্যের গৌরব ফুটে ওঠে তা অনবদ্যআসুন শুনে নেওয়া যাক বেগম আখতারের সেই বিখ্যাত ঠুংরীর একটি অংশ –

এবার বলবো ১ নম্বর গার্স্টিন প্লেসের কথা। কলকাতায় রেডিও সম্প্রচারের ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১ নম্বর গার্স্টিন প্লেস থেকে। আগস্ট ২৬১৯২৭ সালে। এই সম্প্রচার সরকারী ছিলো না । একটি প্রাইভেট কম্পানী যার নাম ছিলো ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনতাঁরা প্রথম ব্রডকাস্টিং স্টুডিও তৈরী করেন মুম্বইতে এবং তারপরেই কলকাতায়এই ঠিকানায় । তখন প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘন্টা সম্প্রচার হতো বিভিন্ন ইউরোপীয়ান ও ইন্ডিয়ান গানের অনুষ্ঠান ও টক শো। প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন বিবিসির সি সি ওয়াল্লিকনৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন ভারতীয় সম্প্রচারের অধিকর্তা তখন থেকেই যুক্ত ছিলেন সঙ্গীত বিভাগে রাইচাঁদ বড়াল ও নাটকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । এখানে থাকাকালীনই প্রথম বানীকুমারের কথা ও পঙ্কজ মল্লিকের সুরে মহিষাসুর মর্দিনী সম্প্রচার হয় । এটি সাড়া ফেলে দেয় সমগ্র কলকাতায় । শুরু হয় বেলা দে’র মহিলা মহলগল্পদাদুর আসরঅনুরোধের আসর ও ইন্দিরা দেবীর শিশুমহল ইত্যাদি অনেক বিখ্যাত অনুষ্ঠান । স্বাধীনতার পর জহরলাল নেহেরুর কন্ঠে প্রথম বক্তৃতাও এখান থেকেই শোনা যায় । এখানে থাকাকালীন প্রকাশিত হয় বিখ্যাত বেতার জগত পত্রিকা ।

এই সময় রেডিওর সঙ্গীত বিভাগে যুক্ত হন অন্ধ শিল্পী কৃষ্ণচন্দ্র দে এবং স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম । গান পাগল কবি রেডিও স্টেশনে বসেই লিখে ফেলতেন একাধিক গান এবং তারপর তা তুলিয়ে দিতেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদেরযারা পরে বিখ্যাত শিল্পী হন । কবির কাছে গান তুলে সরাসরি গাইতেন এই সময়ের বিখ্যাত গায়িকা আঙুরবালা দেবীইন্দুবালা দেবী । তেমনি একটি নজরুলগীতি “বরষা ঐ এলো বরষা” যা বিখ্যাত হয়ে আছে আঙুরবালার কন্ঠে । আসুন শুনে নিই সেই গান –

ভূতের গল্প কার না ভালো লাগেএবার তেমনি একটি বাড়ির কথাযার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক গল্পকথা ও ভূতের ভয় । শোভাবাজার জেটির কাছে হরচন্দ্র মল্লিক লেনে বেশ কয়েক বিঘা জমি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এই পুতুল বাড়ি । কলকাতার পুরানো বাড়িগুলির মধ্যে অসাধারণ স্থাপত্য এই বাড়িটির । ছাদের প্যারাপেটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পরপর বেশ কটি পুতুল যা বাড়িটিকে এক বিশেষত্ব দান করেছে । ইংরাজ আমলে যখন হুগলী নদীকে পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হতে লাগলোতখন শোভাবাজার জেটিতে এসে দাঁড়াতো বিদেশ থেকে আসা অনেক পণ্যবাহী জাহাজ সিল্কপাটমশলা নিয়ে। সেই পণ্যজাহাজ থেকে নামিয়ে গাদা করে রাখা হত এই পুতুল বাড়িতেঅর্থাৎ একে ব্যবহার করা হতো গুদাম হিসাবে । কিন্তু এতো বড়ো ও সুন্দর একটি বাড়ি কি কখনো গুদাম বানানোর জন্য তৈরী হতে পারে?

অতএব চলে যেতে হবে আরো পূর্বের ইতিহাসে । জানা যায় বাইরে থেকে কলকাতায় এসে কোন এক জমিদারবাড়িটি তৈরী করেছিলেন তাঁর মেয়ের জন্য । মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসতেন আর মেয়ে ভালোবাসতো পুতুল । তাই তো বাড়ির ছাদে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে পুতুল । মেয়ের শখ পূর্ণ করতেই জমিদার মেয়েকে এনে দিতেন ছোট বড় নানা মাপের সুন্দর সব পুতুল । মেয়ের হাসিতে ভরে থাকতো বাড়ি । তারপর একদিন সব আলো নিভে গেলো । হঠাত মারা গেলো মেয়েটি । জমিদার মনের দুঃখে বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে গেলেন ।

কথিত আছে পুরানো কলকাতার এক বাবু বাড়িটি কিনে নিয়ে সেটিকে বাগান বাড়ি হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করেন । এক দীর্ঘ সময় জুড়ে বাড়িটিতে আসতেন সেই আমলের বিখ্যাত সব বাঈজীরাশোনা যায় এখানে এসেছিলেন গহরজানও। সন্ধ্যা হলেই ঠুংরী টপ্পা দাদরা আর তার তালে তালে ঘুঙ্গুরের আওয়াজে ভরে যেতো এই বাড়ি । একদিন এই বাড়িতে নিয়ে আসা এক বাঈজীকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করেন সেই বাবু । তাঁর সাজা হয় । এরপর থেকে বাড়িটি অব্যবহার্য হয়ে পড়ে থাকে দীর্ঘ দিন ও ভূতের বাড়ি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে । রাত্রে কখনো বাড়ির সব পুতুলগুলি জেগে উঠে নাচ করেকখনো শোনা যায় ঘুঙ্গুরের আওয়াজ বা বাঈজীর গান ।

স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ব্রিটিশের হাত থেকে লুকোনোর জন্য ব্যবহার করতো এই বাড়ি । বিংশ শতাব্দীতে গুদামে পরিণত হয় এই ভূতুড়ে বাড়িটিকারণ কেউ এটিতে বেশীদিন বসবাস করতে পারতো না । বর্তমানে “হন্টেড হাউস – এন্ট্রি নট অ্যালাউড” বোর্ড লাগানো আছে বাড়ির সামনে।

আজও যেন বাড়িটিতে কান পাতলে যেন শোনা যায় বাঈজীর ঠুংরির সুর । শুনে নিন তেমনই একটি বিখ্যাত ঠুংরির অংশ আমার স্বকন্ঠে।

কলকাতায় যে কয়েকটি বাড়ি তাদের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে টাউন হল অন্যতম । আকাশের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এই সাদা বাড়িটিকে দেখলে ভারতবর্ষের পরাধীনতাবিশ্বযুদ্ধজাতীয় আন্দোলন ও অবশেষে স্বাধীনতা প্রাপ্তির ইতিহাস যেন জীবন্ত দেখতে পাচ্ছি মনে হয় । কত শত মহান ব্যক্তি যেমন নেতাজী সুভাষচন্দ্রগান্ধীজিরবীন্দ্রনাথের পা পড়েছে এই টাউন হলে । এখানে দাঁড়িয়েই গাওয়া হয়েছে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নিয়ে কতো গান – অনুষ্ঠিত হয়েছে গুরুদেব রচিত ও অভিনীত গীতিনাট্য ।

১৮১৩ সালে রোমান ডরিক স্টাইলে কলকাতা টাউন হল তৈরী করেন মেজর জেনারেল জন গার্স্টিন । লটারী করে সাত লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বাড়িটি তৈরী হয় কলকাতায় বসবাসকারী ইংরেজদের ও ইউরোপিয়দের সামাজিক মেলামেশার স্থান হিসাবে ।

১৮৭১ সালে যখন কলকাতা হাই কোর্ট তৈরী হয় তার আগে কিছুদিন বিচার ব্যবস্থা চালানোর জন্য ব্যবহার করা হতো এই বাড়িটি । ১৯১৯ থেকে ১৯৩১ পর্যন্ত টাউন হলকে বাংলার লেজিস্লেটিভ কাউন্সিল হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।

ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির সময় পর্যন্ত বহুবার জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন হয় এখানে ।

কংগ্রেসের দ্বিতীয় জাতীয় অধিবেশন বসে টাউন হলে ১৮৮৬ সালে । সঙ্গে ছিলো ব্রিটিশ স্টাইলে ডিনার পার্টি । সেখানে সাহেবী পোশাক পরার কড়া নির্দেশ ছিলো। এর প্রতিবাদে নিমন্ত্রিত রবীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ দেশীয় পোশাক অর্থাৎ ধুতি চাদর পরে গিয়েছিলেন এই ডিনার পার্টিতে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই উপলক্ষ্যে একটি গান রচনা করেন ও টাউন হলে সেই গানটি পরিবেশন করেন । এই গানে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ প্রকাশ পেয়েছে এবং আমাদের দেশীয় সমাজেরবিদেশীদের নকল করা ও তাদের তাঁবেদারি করা যে তিনি কতো ঘৃণা করতেন তাও পরিষ্কার ভাবে ফুটে ওঠে এই প্রতিবাদ সংগীতে ।

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>