উৎসব সংখ্যা: হিন্দোল ভট্টাচার্য’র কবিতা
বন্ধু
এখন তোমার কাছে আমার বলার কিছু নেই
জমি জরিপের মতো হিসেবেই পাড় ভেঙে গেল-
বিদেশি রেললাইন ঢুকে এল ঘরের ভিতর
তুমিও তো এ শহর ছেড়ে যেতে চাও বলেছিলে-
তবুও তোমার ঠোঁট মৃত খাজুরাহ হয়ে আছে
শুধুই কি প্রতিশোধ নেবে বলে জন্ম হয়েছিল?
এখন তোমার কাছে আমার বলার কিছু নেই
পৃথিবীর শেষ ফুল ফুটে গেছে হয়তো কোথাও
তাও দেখো কারা আসে, কারা এসে অপমান করে-
আমাদের কষ্ট পাওয়া ছাড়া কিছু আছে কি বলো তো?
প্রতিশোধ নেবে? না কি জন্ম নেবে একাকী কোথাও?
দেখো জল বয়ে যায়, যতদিন জল প্রবাহিত।
এখন তোমার কাছে আমার বলার কিছু নেই-
যে ডোম পোড়ায়, তারও মৃত্যুভয় থাকে –
যে তোমায় মারে, সেও মরে। এ জীবন মহাজন নয়।
যা কিছু পেয়েছ, তার কিছুই তোমার নয় আজ
যা কিছু পাওনি, তাও কিছুই তোমার নয় বলে।
এখন তোমার কাছে আমার বলার কিছু নেই-
তাই পাশাপাশি থাকি, কাছে যাই, বলি, আমি আছি।
ক্ষয়
যত ভাঙি, বুঝি, তত ভেঙে যাই রোজ
এতটা ভাঙার কথা ছিল?
ভেঙে যাওয়া হাড় থেকে
ধুলো ওড়ে
আকাশে, বাতাসে।
আমি কি পৃথিবী নই বলো?
আমি নই জল বা রোদ্দুর?
তবে কেন এত কাছে এসে
ফিরে যাও? ফেরা কি এতই
অনিবার্য ছিল?
ধুলো ওড়ে ধুলো ওড়ে
শুধু ধুলো অন্তহীন
সমবেত প্রতিধ্বনি কাছে এসে
দূরে চলে যায়।
আমাদের মধ্যে যত বৃষ্টিপাত হয়
তত ধুলো ওড়ে।
যত ভাঙি, তত ধূলো ওড়ে।
এতটা ভাঙার কথা ছিল?
ব্ল্যাকহোল
খিদে যদি এত, তবে খেয়ে ফেলো যেকোনও শরীর।
তোমার নিজেরই মাংস, হাড়।
নিজেকেই খেতে খেতে শূন্য করে ফেলো।
আমিও তো খাই;
আমি খাই গীতা, খাই রামায়ণ, কোরান বাইবেল
মিশেল ফুকোর বই,
প্রুস্ত খাই,- জয়েসের পাশে
আমি খাই, খেয়ে ফেলি বাংলা-জার্মান অভিধান।
রক্তের ভিতরে তবু শুনতে পাই মোপাঁসার জ্বর
দমকে দমকে কাশি উঠে আসে কীটস
নেরুদার মতো আমি প্রেমের কবিতা লিখে
মরে যেতে চাই।
খিদে যদি এত তবে, খাও
যত পারো খাও তবে শোপেনহাওয়ার
চৈতন্য একাই তার চেতনার থেকে
মহাপ্রভু রামপ্রসাদ, কবিতা লেখেন।
নিজেকেই খাও তবে, খাও মহাভারতের প্রতিটি পাতাই
কিছুই থাকবে না এই মহাশূন্যে কলম্বাস
নিজেকে হজম করো
শূন্য হয়ে যাও