শয়ন ঘরে শান্তি
“আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে।”
লালন সাঁইয়ের গানের এই লাইনে বৃহদার্থে না ভেবে সরল করে বলি শান্তি। হ্যাঁ দিনমানের ব্যস্ত সময় শেষে যেখানে আমরা ছুটে যাই শরীর মনের ক্লান্তি জুড়াতে সেটা ঘর আর তা হলো শোবার ঘর। এক ছুটে গিয়ে সযত্নে পেতে রাখা নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শ্রান্তি দূর করি নিজের মত করে। এই শোবার ঘরই দিন শেষে, ছুটির দিন দুপুরে, অবসন্ন বিকাল, সন্ধ্যায় কখনো বা প্রিয়জনের সাথে অন্তরঙ্গ আনন্দ আড্ডায় প্রতিটি মানুষের আপন ঠিকানা। আর যেহেতু শোবার ঘরেই কাটে সব থেকে শান্ত, বিগ্ধ, মধুর সময়গুলো আর তাই প্রয়োজন এই শোবার ঘর একটু বিশেষ যত্নে সাজানোর তবেই দিন শেষে এই ঘরটিতে ঢুকেই মনটা জুড়িয়ে যাবে। অবসন্নতা কেটে গিয়ে মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠবে।
এ কারনে শোবার ঘরটা একটু বড় পরিসরের, নান্দনিক ছোঁয়ায়, মনের মত করে সাজানো উচিত। শোবার ঘর সাজাতে প্রথমেই যে সব বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া উচিত তা হলো ঘরের দেয়ালের রং, আলোর ব্যবহার, বিছানা, বিছানার চাদর, আসবাব, দরজা-জানালার পর্দা, আর কিছু শখের জিনিসের প্রতি এবং খেয়াল রাখতে হবে ঘরের ভেতরটা যেন জিনিসপত্রে ঘিঞ্জি না হয়। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসের বাইরে বাড়তি জিনিস শোবার ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলে।
শোবার ঘরের প্রশান্তি আনতে ঘরের আসবাবপত্রের রঙের দিকেও একটু নজর দেয়া উচিত। কারন কোন প্রশান্তির ক্ষেত্রে রঙ অত্যন্ত গুরুত¦পূর্ণ একটি বিষয়। ঘরের আসবাবপত্র যদি হয় তেঁতুল বীচি রঙের তাহলে দেখতে বেশ ভালো লাগে আর চোখেও বেশ আরাম এনে দেবে।।
শোবার জন্য সাধারন অথচ নান্দনিক নকশার খাট ব্যবহার করাই ভালো। খাটটি এমন ভাবে সেট করতে হবে যেন অন্যান্য আসবাব থেকে খানিকটা দূরত্ব থাকে। খাট থেকে নামতে গিয়ে বা চলতে ফিরতে যেন কোন কিছুর সাথে ধাক্কা না লাগে বা কোন প্রকার অসুবিধা যেন না হয়। বিছানার চাদরের রঙ নির্বাচন দেয়ালের রঙ এবং পর্দার রঙের সাথে মিলিয়ে করতে পারলে ভালো হয়। তাহলে ঘরের ভেতর একটা রঙের মায়া খেলা করবে সারাক্ষন। বিছানার চাদরটা যেন হয় নরম সুতি কাপড়ের আরামদায়ক এবং হালকা রঙের। দেয়ালের রঙ যদি থাকে হালকা সে ক্ষেত্রে পর্দা এবং বিছানার চাদরের রঙ একটু গাঢ় হলেই ভাল লাগবে। শোবার ঘরের জানালার পর্দার ব্যবহার দু থেকে তিন রকম রাখলে ভাল হয়। একটা একটু পাতলা কাপড়ের পর্দা, বাঁশের চিক, আরেকটা একটু ভারী কাপড়ের। সকাল বেলায় ঘুম ভেঙে যখন আপনার মন চাইবে ঘরের ভেতর একটু ভোরের আলো নেচে বেড়াক তখন আপনি ভারী পর্দা সরিয়ে রেখে কেবল হালকা পর্দাটা টেনে দিলেন আবার যখন দিনের অবসরে একটু বিশ্রাম নেবেন তখন বাইরের রোদ বা আলো ভাল লাগবে না তখন ভারী পর্দা টেনে ঘরটা আবছায়া বা অন্ধকার করে দিলেন। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী বর্ষাকাল না এলেও বৃষ্টি নামছে হরহামেশাই সেহেতু জানালায় সিনথেটিক পর্দা লাগালে বেশ ভালো লাগবে। যাতে করে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে দ্রæত শুকিয়ে যায়। এবং মেঝেতে ভিজে বা স্যাঁতস্যাতে ভাব থাকলে বেডসাইড ম্যাটও ব্যবহার করা যেতে পারে।
দেয়ালে টানিয়ে নিতে পারেন আপনার প্রিয়জনের সাথে প্রিয় মুহূর্তের কোন ছবি বা সুন্দর কোন পেইন্টিং। জানালার পাশে রাখতে পারেন মাঝারি আকারের জীবন্ত গাছ বা পছন্দের কোন পাতা বাহার। ভোরের আলোয় পাতার নাচন বা পড়ন্ত বিকেলে সবুজের ¯িœগ্ধতা আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখবে ইট কাঠের এই শহরে। বিছানার ওপর বালিশের সাথেই পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখুন কয়েকটি ছোট বড় কুশন। মেঝেয় পেতে দিন সুন্দর নকশার শতরঞ্জি। পরিপাটি করে সাজানো সুন্দর শোবার ঘর যে কারো মন ভালো করে দেবে এক নিমেষেই।
ঘরের ভেতর কয়েক রকমের আলোর ব্যবহার রাখলে আরো সুন্দর দেখাবে শোবার ঘরটি। প্রয়োজনে মনের মত করে একেক সময় একটি আলো জ্বেলে নিতে পারবেন তাহলে। কোন আলো হয়তো ছাঁদেও সাথে লাগানো কোন ওর্য়াম কালার,আবার কোনটা নীল সেটা আবার দেয়ালের গায়ে। আবার কোনটা হয়তো জানালার পর্দার সাথে ঝুলবে সবুজের মায়া নিয়ে।
বেডের পাশে ছোট কোন পাত্রে প্রতিদিনই রাখতে পারেন কিছু সুগন্ধযুক্ত ফুল যেমন, বেলী, বকুল, কাঁঠালচাপা। ফুলের সুবাস আপনাকে ভরিয়ে দেবে কানায় কানায়। ভরা বর্ষায় ঘরের ভেতর গুমোট স্যাঁতসেতে ভাব হলে ফুলের সুগন্ধ বা সুগন্ধি মোমের ব্যবহার তা দূর করে দেবে।
আর আপনি যদি গান শুনতে পছন্দ করেন সন্ধ্যায় বা রাতের বেলায় তবে ঘরের ভেতর রাখতে পারেন নানা রকম মোমবাতি। ঘরের সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে জ্বেলে দিন মোমবাতি জানালায় বসে শুনতে থাকুন আপনার পছন্দের গান আজ জোসনা রাতে সবাই গেছে বনে। এক জোসনাময় আবহে প্রশান্তিতে ভরে উঠুক আপনার মন।
