আড়ম্বরের আলমারিটা
দেউড়ি বসেনি রোদ, আরক্ত গাছেরা। মাথামুড়ে তবু মন রেডিও শুনছে না। আজ মিছিলে খেয়াল, আজ প্রসূনেতে জাগি। সেথো হয়ে চলো আজ লিপিতে হাঁটি।
কেন্তুম, শতম হতে শতমটা নিয়ে আর্য ভাষা আসে কালক্রমে। আর্যরা বেদ নামে ঋষি কথা রচে। তারপর বৈদিক ভাষা প্রক্ষালনে, প্রকাশিত রূপ নেয় সংস্কৃত নামে। বঙ্গদেশে প্রচলিত বোলে, বাংলা হয় নামকরণে। পণ্ডিত কাত্যায়ন, পাণিনি প্রমুখ প্রকর্ষ সাধন করেন এ ভাষার বিশেষ বিশ্লেষণে। বিদ্যাসাগর এসে ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’ তে, ছাঁচে ফেলেন এর আদিরূপ সরলীকরণে। রামমোহন, কেরি, কীথ, রবিন্সও বিশিষ্ট হন ব্যাকরণ প্রয়োগ বিদ্যায় অবদান রেখে।
কিন্তু সরস সম্ভাবনায় শ্যামাচরণের নামটাই আসে, কেননা লৌকিক কথা শুরু হয় তাঁরই হাত ধরে। তারপর আর নয় ইংলিশ অ্যালফাবেটে, হেমন্তকুমার প্রথম ভাষার চর্চা করেন বাংলা মুদ্রণে। সেই থেকে ধ্বনি, রূপ, অর্থ আর পদক্রমে বাংলাটাই শিখছে জাতি- ঘর, ক্লাস আর গোপন বাকছলে।
গণ্ডগ্রামে হোক আর নগরের খোলে, ছেলেদের যত্নে রাখা চাই ‘মা’কে, মোম জামাটায় ভরে। কুঠরিতে কথা রেখে তাঁরা সিপাহী সাজে, হটকারী হটে যাও বোলে নির্ভয়ে। সেই তাঁদের বোলে না কী বাংলা দেবে না! ভেবেছে কি- “দরকাঁচা কিছু পড়ুয়া ছেলে, শয়নে স্বপনে শুধু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে? ওঁরা কি আর সড়কিওয়ালা? লাঠি চিনেছো বাছা ফোর্সতো চেনো না!”
সমাবেশে বোল নেই, এক চার চার; মোটরগাড়ি, লোক না কী জমবে না আর! অপাঙ্গদৃষ্টি দিলাম। ফুলার রোডের পাশে মিছিলটা কার? প্রতিরোধে ঢেউ দিতে ডেকেছেটা কে? কেউ ডাকেনি, ডাকতে হয় না, হাতিশুঁড়, ঢাল, অস্ত্র লাগে না। আগুনটা ছুটে ওই শ্লোগানের সাথে, সমূহ জনতা তাই স্বখাত সলিলে।
দুর্দমনীয় তাই নাও প্রবঞ্চনা! পরাক্রমেতো আর জিত হবে না, তাই গুলি ছুঁড়ে তৃপ্তি নিলো কুটিল প্রহরীরা। চকিতে ছত্রভঙ্গ হয়তো জনতা কিন্তু সেই রুধির গল্পে টোপর পড়লো আমার মাতৃভাষা।
তারপর রক্ত, লাশ আর দম্ভের পাশে হয়তো পথটায় স্বপ্নিল এক চিঠি পড়ে থাকে। প্রাপক মা লিখা সেই চিঠি নিয়ে হরকরা হাঁটতে যদিওবা পারে না। বীর ছেলে যেতে যেতে এক প্রস্ত বর্ণ দিয়ে গেছে, বিচালিতে ধান ভরে মা বাংলায় ঋতু গুনে নেবে। লিখবে দীনতা, বাছুরছানা, বাড়ির গল্প, কত সূচনা, বিশেষ দ্রষ্টব্যে, ঘুম আসে না। প্রযত্নে শহীদ মিনার। আর বোন তাঁর বেতছড়ি দিয়ে বর্ণমালা চেনাবে । যেন কেউ ভাষা নিতে এলে খুকিগুলো পুঁটুলি খুলে অ- তে শেখা অজগর ছেড়ে দিতে পারে।
কুর্নিশে সালাম তোমাকে মিতা। বাহাদুর বাহান্ন, বাহাদুর বরকত। রফিক নিরন্তর, মরতে মরতেও মেডিক্যালে যার দেহ থেকে উড়ছিল বুলেটের ধোঁয়া। আর জঠরে জব্বার ধরেছেন যে মা, হুতুমের সাথে কেঁদে কেঁদে সে মা যদিও বেঁচে নেই আর, তবু শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফফার আর আলতাফ মাহমুদের এই বিদীর্ণতার গান যতদিন বেঁচে রবে, সেই সহান মায়েদের হয়ে কেউ না কেউতো কেঁদে নেবে। একুশে ফেব্রুয়ারি, মর্মপীড়া আর খ্যাতির চশমায় তোমাকে দেখি। আমি কি ভুলতে পারি?
কবি, সমালোচক