| 27 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস চলচ্চিত্র নারী বিনোদন

গল্প কে হার মানায় যে নারীর জীবন

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

মানুষটার হাজারো রূপ। কখনো তিনি স্রেফ একজন পতিতা। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে ভারতের অন্যতম বৃহৎ এক পতিতালয়ের সর্দারনী। আবার মুম্বাই পুলিশ তাঁকে চেনে অন্যভাবে। তিনি নৃশংস এক গ্যাঙস্টার। ডি-কোম্পানির শীর্ষস্থানীয়রা তার ঘরে আসতো, ফলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কোনো খবরই তাঁর কাছে অজানা থাকতো না।

আবার মুম্বাইয়ের নিম্নবৃত্ত নারীদের জন্য তিনি একজন আদর্শ। যে দেহ বেঁচে পেট চালায় – তাঁরও যে একটা সাধারণ-স্বাভাবিক জীবনের অধিকার আছে সে বিষয়ে তিনিই প্রথম সোচ্চার হয়েছিলেন। আর পতিতাদের কাছে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নারীর প্রতীক।

গাঙ্গুবাই কোঠেওয়ালির জীবনের গল্পটা যেন সিনেমাকেও হার মানায়! কিশোরী বয়সে জোর করে তাঁকে পাঠানো হয় পতিতাবৃত্তিতে। সেখান থেকে ষাটের দশকে পতিতা হওয়ার পরও মুম্বাইয়ের রাস্তায় তিনি কালো বেন্টলিতে করে ঘুরে বেড়াতেন। এমনই বর্ণাঢ্য ছিল তাঁর জীবন।

গাঙ্গুবাইকে ৫০০ টাকায় পতিতালয়ে বেচে দিয়েছিলো তার প্রেমিক ও স্বামী। তবে, সে যাই হোক পতিতাবৃত্তিতে আসাটা গাঙ্গুর নিজের ইচ্ছায় হয়নি। আর এই ঘটনাটাই তাঁকে মানসিক ভাবে খুব দৃঢ় করে তুলেছিল। আর সেই দৃঢ়তায় তাঁকে ভাবতে শেখায় যে, হয়তো পেটের দাঁয়ে বা অন্য কোনো চাপে পড়ে তিনি পতিতাবৃত্তিতে এসেছেন, কিন্তু সেটা তার মনোবলকে তার মানসিক সম্মানকে কোনোভাবেই আঘাত করতে পারবে না।



গাঙ্গুবাইয়ের ঠিকানা ছিল কামাথিপুরা। মুম্বাইয়ের এই জায়গাটা খুবই বিখ্যাত, কারণ এটা ভারতেবর্ষের ইতিহাসেরই অন্যতম বড় যৌনপল্লী গুলোর একটি। ইদানিং বেশ কমে গেলেও, বোম্বে মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের (বিএমসি) হিসাব মতে এখানে ১৯৯২ সালেও ছিল ৫০ হাজার যৌনকর্মী।

ষাট কিংবা সত্তর দশকে এই সংখ্যাটা নিশ্চয়ই আরো বেশি ছিল।  সেই প্রায় লক্ষাধিক যৌনকর্মীর মন জয় করে নিয়েছিলেন গাঙ্গুবাই। তিনি ছিলেন কামাথিপুরার মা। অন্তত, যৌনকর্মীদের কাছে তো বটেই। আজো নাকি কামাথিপুরার অনেক দেওয়ালে দেওয়ালে গাঙ্গুবাইয়ের ছবি-সহ পোস্টার টাঙানো আছে।

শুধু মন দিয়ে সহ-কর্মীদের মন জয়ই নয়, রূপ দিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের মনও জয় করেছিলেন গাঙ্গু। নিন্দুকেরা বলেন, তিনি বেশ প্রভাবশালী একজন দালাল ছিলেন। খদ্দের হিসেবে তিনি পেয়েছেন নৃশংস সব গ্যাঙস্টারদের, যার ফলে অপরাধ জগতের খবর তাঁর কাছে আসাই কেবল নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বা আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ারও সুযোগ থাকতো গাঙ্গুর।

গাঙ্গুবাইয়ের সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যাপার ছিল তাঁর অবস্থান। পতিতা পল্লী বলেই কি না, এই জায়গাটায় হাত দিতে সরকারের এক রকম সংকোচ ছিল। পুলিশের পক্ষে সেখানে গিয়ে অভিযান চালানোও ছিল মুশকিল। ফলে, কালক্রমে জায়গাটা গ্যাঙস্টারদের অভয়ারন্য কিংবা পালিয়ে বাঁচার জায়গা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। অনেকে গাঙ্গুর ভরসায় অস্ত্র ও গোলাবারুদও এখানে মজুদ করে লাগতো। আর এর সুবাদে গাঙ্গুবাইও গ্যাঙ সম্রাজ্ঞীর মর্যাদা ভোগ করতেন।

পতিতাদের সর্দারনী হওয়ার পরও গাঙ্গু রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগেরও সুযোগ পান। তিনি একবার দেখা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সাথে। সেখানে তিনি যৌনকর্মীদের সমস্যাদের কথা তুলে ধরেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্বে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও মুগ্ধ ছিলেন।

গাঙ্গুবাইয়ের বায়োপিক নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নির্মাতা স্বয়ং সঞ্জয় লীলা বানসালী। 

নতুন সিনেমা গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াডি’তে গ্যাংস্টারের চরিত্রে আলিয়া ভাটের লুক নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সঞ্জয় লীলা বানসালির এই সিনেমায় আলিয়ার লুক কেমন হবে তা নিয়ে জল্পনা চলেছেন কয়েকদিন। অবশেষে জল্পনার অবসান হলো। প্রকাশ পেয়েছে গাঙ্গুবাই আলিয়ার ফার্স্ট লুক।

ইন্সটাগ্রামে আলিয়া নিজেই প্রকাশ করেছেন দুটি ছবি। একটি ছবিতে দেখা যায় কিশোরী আলিয়াকে। আরেকটি ছবিতে বোঝা যায় পরিণত আলিয়া তখন পতিতালয়ের সর্দারনী। দুটি ছবি প্রকাশ করে সঙ্গে আলিয়া লিখেছেন, ‘এই যে তিনি, গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াডি।’

জানা যায়, এই ছবিতে প্রায়ই আলিয়াকে ‘ম্যাডাম কামাথিপুরা’ বলে সম্বোধন করা হবে।

Irabotee.com,শৌনক দত্ত,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,iraboti,irabotee.com in

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত