| 27 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

মাকিদ হায়দারের কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

পথে পথে

ছাদে এখন মেঘ আসে না, চাঁদ আসে না

ঝগড়া প্রিয় বায়স পাখি সেও আসে না।

নরম গরম ঝড়ের রাতে ঝড় বয়ে যায়

পাশের বাড়ির

ছাদের উপর

সেও আসে না আমার ছাদে।

বোশেখ মাসের উনিশ রোদে, রোদ নেচেছে

সকাল দুপুর তাহার বাড়ির একটি কোঠায়

ছেঁড়া শাড়ির আঁচল খুকু

মাথায় দিয়ে দুপুর রোদে।

শাড়ি এবং আঁচল যখন সুখে ছিলো তখন

ওরা আসতো যেতো আমার ছাদে।

থাকতো বসে আমার পাশে।

আঁচল শাড়ি কেউ আসে না

আমার বাড়ির তেঁতুল তলায়,

এখন ওরা কোথায় গেছে

কেউ জানে না, জানতো শুধু

মেঘ বালিকা, বায়স পাখি।

শাড়ির আঁচল হারিয়ে যাবার

অনেক পরে, শুনেছিলেম

আর যাবো না চিলে কোঠায়

থাকুক পথিক পথে পথে

বাসনা ভিলা

বিরহ আমার, থাকে না আমার ঘরে

এপাড়া, ওপাড়া

সে পাড়া ঘুরে সে যায়

নদীর ওপাড়।

সেখানে কে যেন দিয়েছে শুকোতে

শাড়ির আঁচল।

বোবা শাড়ি, একা থাকে চোখের আড়ালে,

তার নিচে বসে থাকে বিরহ আমার।

যদি কেউ তাকে ডেকে নিয়ে যায়

সেই আশায় কেটেছে তার

বাইশ বছর।

অথচ ডাকে না বাসনা ভিলার কেউ

চেনা জানা মুখ।

আমি তাকে খুঁজে ফিরি এপাড়া সেপাড়া

সাড়া নেই, তবু ডাকি কোথা আছে,

বিরহ আমার সে থাকে নীরবে।

যেমন, নীবরে থেকেছে বাসনা ভিলার।

উনিশ বছর

কাঁকড় বিছানো পথে যেতে আমার ভালো লাগে

বিশেষত খালি পায়ে।

কাঁকড়গুলো যখন দু’হাতে চিমটি কাটে

তখন আমার মনে হয়

হারানোদের হয়তোবা কেউ না কেউ,

তাহাদের মাঝে সেই তুমি।

যে কিনা কারণে, অকারণে এমনকি বিনা কারণেই

চিমটি কেটে জানিয়ে দিতো

প্রেম জেগে আছে।

তার প্রেম জেগে থাকলেও

আমি মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে যেতাম,

অলস দুপুরে ছড়িয়ে দু’পা, তখুনি

মনে হতো,

কেন ঘুম এলো না পরশু রাতে।

দিন কয়েক আগে আশা ছিলো, এখন

তাকিয়ে দেখি, কোথাও কাউকে দেখা

যায় কিনা,

বিনা মেঘে বৃষ্টি হয়েছে

বিনা বজ্রপাতে, বৃক্ষ

কেঁদেছে আমার কাছে।

যার ছায়াতলে ছিলো এক প্রিয় মুখ

উনিশ বছর।

বিবি হীরামন

[কবি ইসলাম রফিক, প্রীতিভাজনেষু]

কম বেশি সকলেই চেনে-জানে আমাকে

সালাম আদাব নিয়মিত দেন

পৌঢ়, পৌঢ়াসহ

উঠতি বয়সের হাসি খুশি, ওরা সকলেই।

সেই সব হাসি খুশিদের কেউ, কেউ

সময় যাপন করে

পার্কের  শেষ বেঞ্চের ঝোপের আড়ালে

যদি কখনও আমাকে দেখে ফেলে

তখুনি জানতে চায়

লালু ভাই,

ভালো আছেন নিশ্চয়ই!

সেদিন উত্তরার পার্কের একটি বেঞ্চে

সবেমাত্র পা তুলে বসেছি, তখুনি

একজোড়া হাসি খুশি, মোবাইল হাতে

জানালো আমাকে,

আপনাকে আজ দারুণ দেখলাম,

প্রিন্টের শার্ট, সানগ্লাসে মানিয়েছে খুব

হাতে জবাফুল।

দারুণ সরল কথা লিখেছেন ফেসবুকে।

যদি না চাই, অথবা বান্ধবী

হোক সে অন্ধ-অথবা খঞ্জ,

তিনি যেন শুধু সইতে পারেন

রবিঠাকুরের বিরহের গান।

হাসি খুশি আরও জানালো,

আজ সারাদিন ভেবেছি  আপনার উদারতার কথা

সেই সঙ্গে আপনার ইচ্ছেটাকে সম্মান দিতে

এসেছি আমরা

উত্তরার এই নির্জন পার্কে

এমনও শুনেছি,

আপনি সময় কাটিয়েছিলেন

সাতাশ, আটাশ বছর, এই পার্কের বেঞ্চে,

ঘাসে, শুয়ে বসে।

অথচ আপনাকে চিনলো না কেউ

জানলো না আপনার গোপন প্রতিভা,

গত রাতে শুনলাম আপনি নাকি একজন গদ্যপদ্য লেখক,

খুব নামকরা কবি,

আরও জানলাম

সাতান্ন, আটান্ন পেরিয়ে নাকি পড়েছেন উনষাটে আজ,

আপনাকে জানাতে এসেছি

জন্মদিনের শুভেচ্ছা, স্বাগতম।

লালু ভাই আর কেউ নয়- এই গদ্যপদ্য লেখকের নাম।

হাসি আর খুশির কথা শুনে রেগে গেলাম

দারুণভাবে, দুষ্টু মোবাইল কোম্পানির উপর,

হারামজাদারা আবারও পারলো না-

লালুর বয়স যখন ছিল আঠারো উনিশ

তখন কেন ঐ

দুষ্ট কোম্পানিগুলো বানালো না

লাল, নীল, দামি মোবাইল,

তবু আমি কিনতাম

দাম যদি হতো কয়েকশ কোটি।

সেই দিন রাগে অভিমানে নিজেই ঢেলেছি

নিজের কানের ভেতর গরম সরষের তেল,

সেই দিন থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে হয়েছি বধির।

কেউ যেন কোনোদিন আমাকে এসে বলতে না পারে,

বিবি হীরামন

আজও কাঁদে আপনার শোকে।

যে আমাকে প্রেম শেখালো

যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে

সে যেন আজ রানীর মত
ব্যক্তিগত রাজ্যপাটে
পা ছড়িয়ে সবার কাছে
বসতে পারে
বলতে পারে মনের কথা
চোখের তারায়
হাত ইশারায়

ঐ যে দেখ দুঃখি প্রেমিক
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর
ভিক্ষে দিলে ভিক্ষে নেবে
ছিন্ন বাসে শীর্ন দেহে
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর

কিন্তু শোন প্রজাবৃন্দ
দুঃসময়ে সেই তো ছিলো
বুকের কাছে হৃদয় মাঝে
আজকে তারে দেখলে শুধু
ইচ্ছে করে
চোখের পাতায় অধর রাখি
 
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে চিনিয়েছিলো
দুষ্টু গ্রহ অরুন্ধতী
বৃষ্টি ভেজা চতুর্দশী
জোৎস্না রাতের উজ্জ্বলতা
ভোরের বকুল শুভ্র মালা
নগর নাগর ভদ্র ইতর
রাজার বাড়ি
সেই তো আবার বুঝিয়েছিলো

যাওগো চলে আমায় ছেড়ে

যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে

নিজের দেহে আগুন জ্বেলে
ভেবেছিলাম
নিখাদ সোনা হবোই আমি
শীত বিকেলের টুকরো স্মৃতি
রাখবো ধরে সবার মত
হৃদয় বীণার মোহন তারে
ভুলেই গেলাম
যখন তুমি আমায় ডেকে
বললে শুধু

পথের এখন অনেক বাকি
যাও গো শোভন
যাও গো চলে বহুদুরে
কণ্ঠে আমার অনেক তৃষা
যাও গো চলে আপন পথে

এই না বলেই
হাসলে শুধু করুন ঠোঁটে
বাজলো দুরে শঙ্খ নিনাদ
কাঁদলো আমার বুকের পাথর
কাঁদলো দুরে হাজার তারা
একলা থাকার গভীর রাতে
একলা জাগার তিন প্রহরে

তাইতো বলি সবার কাছে
যে আমাকে দুঃখ দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে বুকের মাঝে
অনল দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে

সুখেই থাকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত