| 8 মে 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

পান্ডুলিপির কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ জানালায় বুনোমেঘ’ থেকে গুচ্ছকবিতা


জানালা


উত্তরের জানালা ক’দিন খুলতে পারি না;
তোমার মতো ঠান্ডা বাতাস হুহু করে কানে হিম ছড়িয়ে মারে। 
আজ সাতাশ, এরপর  বাতাস আরো তীব্র হতে হতে উড়িয়ে নেবে প্রিয় বারান্দার কুসিম্বীলতা, প্রিয় হেমন্ত, কুদফুলের সাতটি পাপড়ি
ভেবেছিলাম দক্ষিণমুখী জানালাটা আজ খুলেই দেই-
রোদে পোড়া চোখ মাঝ রাতে আধেক চাঁদে চন্দ্রাহত হোক
উত্তরের হাওয়া আর দক্ষিণ জানালা
পরস্পর  নরপতির মতো আচরণ দেখে মনে হচ্ছে,
আমায় নাগরিকত্ব না দিলে জানালা খুলে দিতে পারি না
বাতাসের কী স্পর্ধা!
বাড়োয়ারি ঋতু আর তোমার মত ঠান্ডা দেবশিশু
আমায় জানালায় আটকে রাখে;
পুড়ে যেতে ভালো লাগে রোদে, শীতের হিম কুয়াশায়;
তবু জানালা খোলা চাই ।

বেহিসেবি প্রেম


হলুদ বসন্ত আর এতশত চৈত্র-বৈশাখ পেরুলে তোমার কাছে ফিরি কী ভাবে?
টের পাই, পার্থিব জীবনে বেহিসেবি প্রেম বুকের গহীনে;
বাইরে সেতারের সুরে সুর ঝর ঝর শব্দে বৃষ্টি নেমেছে।
ইচ্ছে আমার রাস্তায় নেমে খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে ভিজে হই চু্ঁর…আসবে?
এসো, আজ না হয় কাদাজলে ভিজে যাই…
বুনোজল লাগুক দুজনার গায় তাতে কী এসে যায়?
একটা ফিনিক্স পাখি উড়ে যায় দূরে, কোথাও ঠা ঠা রোদ্দুরে
রোদের গরমে খাঁ খাঁ ভিজি চুপচাপ দুজনে। 
পলিমাটি পোয়াতি হলে, সময় উড়ে যায় অতীতের ক্ষয়িষ্ণু মেঘে.. 
ঘুঙুর চোখে হলুদ বসন্ত ডানা ঝাপটায়;
যারা যায় অদম্য বিষণ্ণতায় তারা ফেরে না কখনো,
না ফিরুক; আমি ঠায় দাঁড়িয়েছি, পাখির চোখে স্মৃতির কোলাজে-
তোমার হাস্যমুখ, গভীর চাহনী, অতলপ্রেম ছাড়া
আমার প্রেম বিধ্বস্ত.. 
বড় বেহিসেবি ।

ধুসর প্রজাপতি


বহুদিন আগে যে প্রজাপতিটা ধরে দিয়েছিলে, বাড়িতে এসে তাকে একটা কৌটোয় রেখে দিয়েছিলাম; পাছে উড়ে যায়! এখনো বন্দি সে । প্রজাপতির বয়স তেইশ।  প্রজাপতিটির কথা কখনো তোমায় বলিনি । একটা  ছবিও তুলেছিলে সেদিন; ছবিতে আমার এক হাতে  সাদা রুমাল আর অন্য হাতে প্রজাপতি, ও কেমন তিরতির করে কেঁপে কেঁপে উড়ছে.. উড়ছে আমার এলোমাদল চুলও ।
জানো? সেই  ছবিটায়  গতকাল গভীর রাতে হঠাৎ আগুন লাগল! অগ্নিশিখায় কেমন  তিরতির করে পুড়ছিল ছবিটা!  আহা– গলতে গলতেই হঠাৎ আগুন থেমে গেল! আর আমি দেখলাম, তোমার ঘুমন্ত চোখের পাতা কাঁপল!
ইদানিং তুমি গ্রিক দেবতাদের মত হয়ে যাচ্ছ.. তোমাকে দেখলে দূরের তারার মতন মনে হয়! বহুদূর গ্রহের আদ্যোপান্ত বোঝার জন্য অস্থির আমি, কাছে এলেই সূর্যের  খরতাপে পুড়ে যাই-
বারবার কৌটোর মুখ খুলে দেখি, একখানা ধূসর প্রজাপতি তেইশ বছর ধরে বড় নীরবে কেমন স্থির হয়ে হয়ে আছে !

ও বসন্ত


(উৎসর্গঃ তপুকে) 
তারপর: ক্রমাগত সরে যাচ্ছিল তারার কাফেলা। শুভ্র সাদা মেঘবালিকার দেশ ঘুরে একগোছা অর্কিড নিয়ে ফিরলে ঘরে। আমি আনমনা ডিভানের কোমল মায়ায় নাকি অপেক্ষার অসহ্য ক্লান্তিতে কিছুটা নিদ্রামুখী? 
প্রিয়, অপেক্ষায় উদভ্রান্ত এক ক্লান্তি থাকে, তা কে না জানে! কখন যে পেছনে দাঁড়ালে, বুঝিনি। তখনো ইয়ারফোনে মগ্ন কান গানে। সুরের মদিরায় হঠাৎ তোমাকে দেখি, তোমাকে দেখি কি সুখে লুকিয়েছো মুখ বেগুনি অর্কিডে! চোখ চলে যায়, চোখের কী দোষ? তুমি ঠিক জানো, আমি কি ভালোবাসি! আচ্ছা, আনন্দে কী চোখের পাতা কেঁপে ওঠে? এই যে, এই ক’টা দিন পরে তোমাকে দেখলাম, পাপড়িরা উৎসবে মেলে দিলো চোখ। অথচ কিছুই বলা গেলো না, আমার কী দোষ বলো? অ্যাকুরিয়ামের মাছেরাও কী কম উদ্বেলিত আজ! খুব উৎকন্ঠায় গ্যাছে ক’টা দিন। একটা রাতও ঘুমুতে পারিনি। চোখের বাড়ি ছেড়ে ঘুমেরাও পালিয়েছিলো ফেরারি স্বভাবে। বুকে ছিল ব্যথার মাদল, করুণ সুর। একটা প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় সারাক্ষণ । রঙে রঙে দু’ ডানায় কি ভীষণ উচ্ছ্বল- গাছে গাছে ফুলে ফুলে গুনগুন। 
সিডেটিভ প্রজাপতি প্রতিরাতে দু’চোখে দিয়ে যায় ঘুম;
তুমি এলে, ও আমার বসন্ত ঘুম,  ঘুম ঘুম ঘুম.. ঘু..উ..ম

ছায়া ও মেয়েটি‌


এলেবেলে ছবিটায়
চোখ আটকে গেল
ছবির নীচে অন্য ছায়া 
মেয়েটি চমকালো;
হঠাৎ ছায়া মেয়েটিকে বলল
থাকো কত দূর-
কোথায় তোমার ঘর? 
মেয়েটি কিছু ভেবে..
উত্তর দিল, তারপর-
আমি একা,
তবু কিছু আছে;
হরিৎ বেলা-
মেঘের সাথে ছেলেখেলা
রোদ্দুর এসে ঢেউ ভেঙে দেয়
আমার ঘরের পাশে;
নোঙর করা নৌকো
নোনা সমুদ্রে
শিশুর মত হাসে..
ছায়া আবার মেয়েটিকে বললঃ
এবার খোলো তোমার চুল
তোমার চুলের ভেতর ওড়ে
হাজার রকম ভুল!
ও মেয়ে, পাল তুলে দেই-
দেই দেই টান–?
সারা জীবন তোমার চুলে
নোঙর করে গাইব আমি
হরিৎ বেলার গান  ।।

দৃশ্য-১


জীবন বহতা নদী । ঢেউ গুলো সময় হয়ে ভেসে যায়..
সময়গুলো দৃশ্যের ভেতর ঢুকে পরে। দৃশ্যগুলো চোখের ভেতর ঘুড়ি হয়ে ওড়ে। নাটাইটা তোমার হাতে।
তুমি সুঁতো ছেড়ে দাও..
ঘুড়ি উড়ে উড়ে দূরে গিয়ে ছবি হয়ে যায়। ঘুড়িকে আর ঘুড়ির মত মনে হয় না। দূরের তারার মত, মেঘের মত, নক্ষত্রের মত ছোট হতে হতে অদৃশ্য হয়ে যায়। 
হঠাৎ একদিন সুঁতোয় টান লাগে। 
দূরের ছবিগুলো একটু একটু কাছে আসে। ছবির ভেতরে  দৃশ্য ভেসে ওঠে । কত মুহূর্ত ।
তারার মতন জ্বলতে থাকা একেকটা ছবি মনে করিয়ে দেয়, একদিন ছিলাম খুব! একদিন আকাশে উড়েছিলাম । উড়ে গেছিলাম কোন্ সে দূর..
নিবিড় বসেছি পাহাড়ের উঁচু গিরি পাথরে।
দৌঁড়ে নেমেছি খাঁদে,
অন্ধকারে..
বহতা নদী, কোন্ সমুদ্র তীরে!
‘জানালায় বুনোমেঘ’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত