| 6 ফেব্রুয়ারি 2025
Categories
গল্প সাহিত্য

দশটি অণুগল্প

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

 

বুদ্ধিজীবী

এক বুদ্ধিজীবীকে দেখি কাফনের কাপড় পরে ঘোরে। তার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। তিনি জানেন তিনি মারা গেছেন। তিনি তাই প্রস্তুত হয়েই আছেন।
আমরা সাধারণ লোক এবং যথাবিহিত বেকুব। তাই মৃত লোকটা চারপাশে ঘুরছে জেনেও তার দাফনের ব্যবস্থা করি নাই।
আসলে মৃত আর জীবিতের পার্থক্য কেবল বুদ্ধিজীবীরা জানেন, আমরা জানি না।

সময়জ্ঞান

চায়নার এই মিটিংটা সফল হলে কয়েক কোটি টাকার ফায়দা হবে। মা বেঁচে থাকলে এই সাফল্যটা দেখে যেতে পারত। মার জন্য কষ্ট হচ্ছে আয়নালের। মা আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলেই হতো।
তবু ভালো তিনদিন আগে মা মারা গেছে। আজ মারা গেলে কিংবা সে চায়নায় থাকা অবস্থায় মারা গেলে কী ঝামেলাই না হতো।

উত্তরাধিকার

যা কিছু দাও একদম তরল বানিয়ে নাকে লাগানো নল দিয়ে ঢালতে হতো। এইভাবে তরল খেয়ে ৬৭ দিন পর নানু মরল, অন্যদেরও বাঁচালেন। নানুর মৃত্যুতে সবচেয়ে উপকার হলো মাইশার। তাকে খাওয়ানো, দেখাশোনার দায়িত্বের ঝামেলা রইল না। সেই সাথে এতদিনে নিজের একটা ঘর পেল সে। অথচ বোকা মেয়েটা শূন্য ঘরে কেঁদেই যাচ্ছে।

পরামর্শ

মেন্যু কার্ড দেখা মানে অনেকটা খাওয়ার আনন্দ। রেস্তোরাঁয় বসে ঘ্রাণ পাচ্ছই, সাথে মিউজিক এবং সর্বোপরি মেন্যু কার্ড।
রেঁস্তোরায় যাবে। দামি রেস্তোরাঁয়। তোমার জন্যই এত আয়োজন। এমনকি ওদের টয়লেটগুলোও কী সুন্দর! ঝকঝকে শুকনো মেঝে।
পকেটে টাকা না-থাকলেও রেস্তোরাঁয় যাবে। কানে সুর, চোখে মেন্যু কার্ড আর বুকে খাবারের গন্ধ নিয়ে ফিরে আসবে।

জমিদার বাড়ি

পুরনো জমিদার বাড়ির সামনে দাঁড়ালে জীবনটা অর্থহীন মনে হয়। যে বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে মানুষ পায়ে জুতো পড়ত না, মাথায় ছাতা দিত না, সে বাড়ির ইট খসে খসে পড়ছে!
ইশ, জলসাঘরও বন্ধ হয়, সাধের হাতি-ঘোড়াও থাকে না!
সারাদিন হিশাব নিকাশ করে যোগফল তবে শূন্য!
আহা, কী নিয়ে তবে অহংকারটা করি!

শান্তি

আজ একটু শান্তি লাগছে।
সেই ২০১৩ সালে আমার মৃত্যু হয়েছিল।
তারপর থেকে আমি ঝুলে আছি। এইখানে খামাখাই ঝুলে আছি। কী করার আছে কেউ যদি আমার শেষকৃত্য না করে। মৃত্যুর পর তো মানুষ আর নিজে নিজে কিছু করতে পারে না।
অবশেষে ২০১৫-এর ২৭ মার্চ আমাকে ও কবরে শুইয়ে দিল।
এতদিনে আমি একটু শান্তি পেলাম।

ফুলের ছাতি

প্যানপ্যানে ঝ্যানঝ্যানে বৃষ্টি শেষ হলো। রোদ উঠেছে অনেক দিন পর। রাস্তায় জমে থাকা পানিও নেমে গেছে । সবার মধ্যেই একটা উৎসব-আমেজের ভাব। আর ছাতা, বর্ষাতি ফেলে সবাই কাজে বেরিয়েছে আজ।
আমার কাজ নেই। ঘরে বসে ভাবছি, এই রোদের তেজ ফুলগুলো সইতে পারবে তো?
ফুলেদের জন্য ছাতি বানাতে বসে গেলাম আমি।

আশা

নিজেকে ভ্লাদিমির কিংবা এস্ত্রাগন মনে হয় জহিরের। যাই মনে হোক, তাকে অপেক্ষা করতেই হবে। আশা আসি আসি করে তাকে অনেক অপেক্ষা করিয়েছে। তবু আশার প্রতীক্ষায় তাকে অপেক্ষা করতেই হবে। একবার আশা এ ঘরে এলেই হলো। ছলে, বলে, কৌশলে আশাকে চেটে-পুটে খাবে সে। তারপর, আশা কী করবে সেটাই দেখতে চায় জহির।

হারিয়ে যাওয়া বই

কে লিখলো, কে ছাপলো—এসব প্রাসঙ্গিক কথা নয়। আসল কথা হলো আমি একটি হারিয়ে যাওয়া বই। ছোট্ট বালকের হাতে ছিলাম। সে আমার রঙিন শরীরে হাত বুলাত, আধো আধো বুলিতে আমাকে পড়ত। তারপর পার্কের বেঞ্চিতে আমাকে ফেলে চলে গেল। সেই থেকে আমি একটি হারিয়ে যাওয়া বই। ছোট্ট পাঠকটিকে খুঁজে ফিরছি।

জামরুলের স্বপ্ন

স্বপ্নে দেখি, একটা জামরুল গাছে জন্মেছি আমি। লাল, সাদা, সবুজ—একই গাছে তিন রকম জামরুল। কিশোরীর হাতে তিন রঙের তিনটা জামরুল। ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমার সেলফোনে স্বপ্নে দেখা জামরুল গাছ, ঝাকা ভর্তি তিন রঙের জামরুল আর কিশোরীর হাতে জামরুলের ছবি। বুঝতে পারছি না, স্বপ্নের ছবি আমার সেলফোনে কে তুলল!

 

 

 

 

 

কৃতজ্ঞতা: পরস্পর

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত