| 26 এপ্রিল 2024
Categories
ধারাবাহিক সাহিত্য

সবজে রুমাল রহস্য (পর্ব- ৯)

আনুমানিক পঠনকাল: 8 মিনিট

 

অপ্রত্যাশিত প্ল্যান থেকে জন্ম নেয়া একটি নভেলা। তৃষ্ণা বসাকের ভাবনা।
সেদিন কয়েকজন সৃষ্টিশীল মানুষ আড্ডা দিচ্ছিলেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে, আড্ডার শেষে একটি সবুজ রুমালের দেখা মিললো। একটি রুমাল কে বিড়াল করে দেবার জাদু তো প্রবাদের মত। এখানেও হলো তাই হঠাৎ পাওয়া সবুজ রুমাল টি পেয়েই সব ওলটপালট হয়ে গেল একদল সৃষ্টিশীল মানুষের ভাবনায়।জাদুর মতোই কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ফেলে যাওয়া এক টুকরো রুমাল হয়ে গেলো ১২-ইয়ারি নভেলা ‘সবজে রুমাল রহস্য’।

পরপর লিখবেন ১২ জন। প্রথম পর্ব লিখলেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় এবং শেষ করবেন তৃষ্ণা বসাক। মধ্যে থাকবেন ১০ জন যথাক্রমেঃ

সোনালি, তপশ্রী পাল, ব্রততী সেন দাস, নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত, নন্দিনী সেনগুপ্ত, শ্যামলী আচার্য, কৃষ্ণা রায়, ইন্দ্রনীল বক্সী, সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিতাভ দাস। আজ থাকছে ইন্দ্রনীল বক্সী’র লেখা রহস্য নভেলার নবম পর্ব।


 

বসে বসে কোমর ধরে গেল তাপসের। পৃথিবীর সব থানাই বুঝি এরকম!  ৭টা নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা এখানে এসে প্রায় চল্লিশ মিনিট হয়ে গেল বসে আছেন নিউ আলিপুর থানায়। এদিকে অফিসার অভিরূপ সরকারের দেখা নেই !  অথচ ফোন করে উনিই আসতে বলেছেন! বলেছেন কিছু জরুরী কথা বলার আছে ফোনে সম্ভব নয়। পুরনো হেড মাস্টার মশাইয়ের টেবলের মতো একটা টেবল, ইতিউতি গোল গোল চায়ের গ্লাসের দাগ লেগে রয়েছে। ঘরের দেওয়াল ঘেঁষে তিনটে প্রাচীন আলমারি  ফাইলে ঠাসা, একটু টোকা দিলেই হুড়মুড় করে পড়ে যাবে যেন! একটা মান্ধাতা আমলে জাবদা কালো ল্যান্ড লাইন টেলিফোন, তারই মধ্যে এক কোণে একটা কম্পিউটার ও প্রিন্টার। একটু আগে এক হাবিলদার খাতির করে এক ভাঁড় চা দিয়ে যাওয়ায় তবু নিজেকে একটু গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ভালো লাগছে তাপসের। 

আজ একটা বিহিত করেই যাবেন তাপস! না হলে সাংসারিক ভারসাম্য নষ্ট হতে বসেছে যে! সুচন্দ্রা তো প্রায় পাগল হওয়ার জোগাড়!  তাও ওর ওই সব গল্প চক্র ফক্রের ব্যাপারে হুজুগ আছে তাই রক্ষে! আজও ওই রকমই কিসের একটা আসর আছে তার, গেছে সেখানে। ভালো হয়েছে! রোমাল রোমাল করে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন সবার! নিরীহ একটা রোমাল থেকে যে এত কিছু হতে পারে সে তো ভাবনারও অতীত! এদিকে কাল রাতে আবার সেই স্প্যাম কল আর বিজাতীয় ভাষায় একই কথার রিপিটেশান! এবার সুচন্দ্রা ও তাপস দুজনেই একটা মানসিক চাপ অনুভব করছেন কদিন ধরে। 

একটা গাড়ি থানার চৌহুদ্দিতে ঢুকতেই সোজা হয়ে বসলেন তাপস, অভিরূপ এলেন কি!

হ্যাঁ, ঠিক তাই, গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে তিন লাফে সিঁড়ি পেরিয়ে তাপসের সামনে এসে দাঁড়ালেন অভিরূপ সরকার। ছিপ ছিপে গড়ন, চোখে চশমা সাদা রঙের ইউনিফর্মে দেখলে মনে হবে কোনও কলেজের প্রফেসারকে জোর করে পুলিশ অফিসার করা হয়েছে। চশমার পিছনে উজ্জ্বল এক জোড়া চোখ শুধু বলে দিচ্ছে লোকটা বেশ মেধাবী। সব মিলিয়ে সিনেমায় দেখা সুপার কপের ধারনায় কিছুটা ধাক্কাই খাবে। ফোনের রেকর্ডিং দেওয়া নিয়ে এই নিয়ে তৃতীয়বার সাক্ষাত হচ্ছে তাপসের সঙ্গে। কেন জানি তাপসের এখনও এই নিরীহ মুখের ছোকরা অফিসারে বিশেষ ভরসা হচ্ছে না! এর দ্বারা খুনের রহস্যের কিনারা ! না: 

“ অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি বলুন !…সরি”

থানায় বসিয়ের রাখার জন্য পুলিশে সরি বলছে এই অভিজ্ঞতাও নতুন … কাষ্ঠ হেসে একবার ঘড়ির দিকে এক পলক দেখে নিলেন তাপস। 

“ চা খেয়েছেন?” … বলেই হাঁক পাড়লেন অভিরূপ ,হাবিলদার বিশ্বাসকে। 

“ আরে খেয়েছি খেয়েছি … ব্যাস্ত হবেন না …” 

“ আরে আর একবার খান আমার সঙ্গে…”

চেয়ার টেনে বসতে গিয়েও কি ভেবে উঠে ভিতরে গিয়ে এক সহকর্মীকে চাপা গলায় কি একটা বলে ফিরে এলেন। এবার চেয়ারে বসে এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করে তারপর সোজা তাকালেন তাপসের দিকে ।

“ বলুন তাপস বাবু … নতুন কিছু হলো নাকি?… আর ম্যাডামের লিপি নিয়ে গবেষণা কদ্দুর !”

“ আরে বলবেন তো আপনি! … এদিকে আর কি ! আবার সেই কল…”

“ হুম… আপনাকে বলা হয়নি , ইনফ্যাক্ট না বলাই উচিত! কিন্তু আপনারা প্রথম থেকেই অনেকটা জড়িয়ে পড়েছেন বলে বলি, কলটি ডিকোড করা গেছে, আমাদের লালাবাজারের ল্যাংগুয়েজ স্পেশালিষ্ট উদ্ধার করেছেন। ”

“ তাই ! … কি বলছে …কি ভাষা!”

“ ভাষাটি হচ্ছে পাসতু বা পুশতু … দাঁড়ান …” ব্যাগ থেকে ফাইল বের করে একটা কাগজ মেলে ধরলেন অভিরূপ। “ বলা হচ্ছে ‘ কুর ওয়াদান … কুর ওয়াদান … মানানা ‘ 

“ মানে! … এর মানে কি?” 

“ এর পুসতুতে মানে হচ্ছে ‘ আপনার সমৃদ্ধি হোক …ধন্যবাদ’ ”

“ যাব্বাবা … এতো গুড উইশ! আমরা তো ভয়েই মরছিলাম…”

“ হুম … সম্ভবত এটি একটি সংকেত … যা আসছে খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চল থেকে! জানেন তো এটি কোথায়?”

“ না …মানে…ঠিক!”

“ এটি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী দুর্গম  একটি অঞ্চল ,উপজাতি অধ্যুষিত এবং মিলিটেন্ট হাব বলে কুখ্যাত।”

“ মানে! … এসবের সঙ্গে আবার …!”

“ কিসের সঙ্গে কিসের যোগ তা দেখাই আমাদের কাজ তাপসবাবু…বরং বলা যায় এখন এটা অনেক বড় জায়াগায় চলে গেছে! বলতে পারে একটা আন্তর্জাতিক চক্র রয়েছে এ সবের পিছনে, যার সঙ্গে যুক্ত  সমাজের উপরতলার বহু মেধাবী মানুষজনও। এদের বহু উইং কাজ করে বিভিন্ন দেশে একই সঙ্গে।

“ ওঃ … এরা কি স্মাগলার মানে…চোরাচালানকারী ফারি?” তাপস বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন দৃশ্যতই।

“না আবার হ্যাঁও … দেখুন তাপস বাবু , কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যা একেবারে সাদা বা কালো বলে ধরে নেওয়া যায় না! … একটা গ্রে পার্টও থাকে। এরা শুধুই যে টাকার জন্য এদের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে এমনটা নাও হতে পারে, এদের একটা বিশেষ মনস্তত্ত্বও থাকে বা আছে, থাকতে পারে কিছু  নির্দিষ্ট এথনিক সিক্রেট …এখনও কাজ চলছে এ নিয়ে, সুচন্দ্রা দেবী বেশ কিছুটা সাহায্য করেছেন আমাদের এ নিয়ে ওনার গবেষণা শেয়ার করে। আজই স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে কিছু জরুরী নির্দেশ এসেছে যা আপনার সঙ্গে আলোচনা সম্ভব নয়। শুধু এটুকুই আপনাকে জানালাম,কারন আপনারা ইতি মধ্যেই আমাদের কাজের বেশ সাহায্য করেছেন , চিন্তা করবেন না আমরা এবং আরও বড় দপ্তরের পেশাদার লোকজন কাজে নেমেছে।” 

তাপসের মাথা কেমন ভার ভার লাগছে এখন। কোথায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া কোথায় সুচন্দ্রা আর উনি … একটা রুমাল থেকে তো বেড়াল নয় ! একেবার ডাইনোসর…!! 

আচমকা ফোন বেজে উঠল তাপসের… সুচন্দ্রা ফোন করেছে। ফোন কানে নিয়ে মুখের রেখাগুলি বদলে যেতে লাগল তাপসের । কেমন একটা রক্তশূন্য ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে …

“ তাপস বাবু !…আপনি ঠিক আছেন ? কি হয়েছে কার ফোন?…”অভিরূপ ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

“ আ আমার স্ত্রী সুচন্দ্রার…ম…মাকে পাওয়া যাচ্ছে না …মিসিং…”

“ হোয়াট!”

 

 

এয়ারপোর্ট থেকেই যে কোয়ালিস গাড়িটা পিছু নিয়েছে তা বুঝে নিতে বেশীক্ষণ লাগেনি ফিরোজের। তার ক্যাবটা চৌরঙ্গী অঞ্চলের অনামী হোটেলের সামনে দাঁড়াতেই ফিরোজ ক্যাব থেকে নেমে সতর্কতার সঙ্গে একবার দেখে নেয় কোয়ালিস গাড়িটাকে । গাড়িটা কিছুটা দূরে একটা ভ্যাটের পিছনে নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়ে আছে , ভিতরটা অন্ধকার। 

ফিরোজ খুব স্বাভাবিক চলনে হোটেলের ভিতরে ঢুকে যায় । 

“ হ্যালো …কন্ট্রোলরুম ! হ্যাঁ স্যার অনিমেষ বলছি , টার্গেট চৌরঙ্গীর একটা হোটেলে ঢুকেছে ! আমরা নজর রেখেছি স্যার…”

“ ঠিক আছে অনিমেষ , কিপ ওয়াচিং … চোখের পলক ফেলনা ! হি ইস ভেরি স্মার্ট … ওকে তোলা যাবে না এখন , কিছুই পাওয়া যাবেনা ! আমাদের যতটুকু বলে সেন্ট্রালের টিম ,ততোটাই করব …”

“ ঠিক আছে স্যার …”

কোয়ালিসটা নিঝুম দাঁড়িয়ে অন্ধকারে গাড়ির আলো নিভিয়ে। খুব কাছ থেকে শুনলে ওয়াকিটকির কড়কড়ে আওয়াজের কিছু নিয়মিত তরঙ্গ বাহিত ট্রাফিক কন্ট্রোলের নির্দেশ ভেসে আসার শব্দ ছাড়া আর কিছু টের পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার সোডিয়াম ও নিয়নের আলোক রঙিন এই এলাকায় একটা হাল্কা ধোঁওয়ার চাদর ভেসে আছে । একটা ঘোলাটে ভাব থাকলেও দৃশ্যমানতা এমন কিছু কম নয় যে এখান থেকে হোটেলের ঢোকার রাস্তাটা স্পষ্ট দেখা যাবে না! অন্তত গাড়িতে বসে থাকা সতর্ক পেশাদার লোকগুলোর পক্ষে তা যথেষ্ট। 

কিন্তু এই স্কোয়াডের জানা নেই যে হোটেলটির কিচেনের পিছনে একটা দরজা আছে । আছে ডান দিকে গলির মধ্যে আরও একটি ফায়ার এক্সিট!  প্রায় ঘণ্টা খানেক পর সেই এক্সিট দিয়ে দেখা গেল একটি দীর্ঘ চেহারার ছায়ামূর্তি ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বেরিয়ে এসে উঠে পড়ল একটি আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা ছাই রঙের প্রাইভেট কারে। 

ফিরোজের গন্তব্য এখন দক্ষিণ কলকাতার একটি বহুতলে, নীতার কাছে। অনেক বোঝাপড়া বাকি ওর সঙ্গে! নীতার সঙ্গে সম্পর্কের শুরুটা বড় মধুর হলেও ফিরোজ বুঝে ছিলো নীতাকে ধরে রাখা মুশকিল। কিন্তু ততদিনে নীতা ওর আসক্তি হয়ে উঠেছে! শয্যায় অসম্ভব ভালো সঙ্গত দিতে জানা নীতার শরীরের প্রতিটা বিভঙ্গ, প্রতিটা খাদ ওকে নেশার মতো টানে। কিন্তু নীতাকে যে নিজের সম্পত্তি করে রাখা যাবেনা এটা টের পাচ্ছিলো ফিরোজ! কারন নীতা গড়পড়তা মেয়ে নয় এবং প্রচণ্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষী। একটা নিরাপত্তাহীনতাও তাড়া করে যাচ্ছিলো ফিরোজ কে, বুদ্ধিতে ও লাস্যে নীতা ক্রমশ কায়রোর অভিজাত সমাজে জায়গা করে ফেলছিলো দ্রুত। মাঝে মাঝেই অশান্তি হতে হতে একদিন নীতা যখন ইন্ডিয়ায় আসতে চাইলো তখন ফিরোজ সেভাবে আর আটকাতে চায়নি। শুধু তাই নয়, নীতা কে ভারতে পাঠানোর আর একটা উদ্দেশ্য ছিলো দিল্লি ও কলকাতা সহ অন্যান্য  মেট্রো শহরে এলিট ক্লাসে একটা যোগাযোগ তৈরি, নীতা তার স্বাভাবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় এবং সহজাত ক্ষমতায় একটা নেটওয়ার্ক যে গড়ে তুলবেই সেটা ফিরোজ জানত, হাই সোসাইটি ও কর্পোরেট লেভেলে লবিস্টের কাজের জন্য নীতা একদম নিখুঁত। এখন যা ওদের কাজে লাগবে। সংগঠনের তরফে মিশর, ও ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব ফিরোজের। কিন্তু এখানকার ইন্টেলিজেন্স কি কিছু আঁচ করেছে! এর আগেও ফিরোজ অনেকবার ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে এসে কাজ সেরে গেছে নিঃশব্দে , কিন্তু কোনো অসুবিধা হয়নি । ওর কাছে খবর আছে ওদের সেকেন্ড লেয়ারের এক হ্যান্ডেলার কদিন আগেই NIA র হাতে ধরা পড়েছে …তবে কি …!

আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরোজ এসে পড়বে। নীতা ওর প্রস্তুতি শেষ করে , ফিরোজ ওর কম বয়সের ভুল ,কিন্তু ফিরোজের দুর্নিবার আকর্ষণ থেকে এখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি নীতা । একটা বন্যতা আছে ফিরোজের যা ওকে নেশা ধরিয়ে দেয় আজও। তাছাড়া ফিরোজকে চটানো এখন ঠিক হবে না , এখনও কিছুদিন ফিরোজকে প্রয়োজন। 

এতদিন পর ফিরোজ আসছে, ওদের সন্ধ্যাটা যে একেবারে নিরামিষ কাটবে না সেটা মাথায় রেখেই নীতা নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে কালো স্লিভলেস সাটিনের গাউনে । আয়নার সামনে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নীতা , একটা তৃপ্তির হাসি খেলে যায় ওর ঠোঁটে । ফিরোজ কেন! যেকোনো পুরুষ মানুষকেই তুমি অবশ করতে পারো নীতা আহমেদ! নিজেকে মনে মনে বলে উঠল নীতা। 

সাউন্ড সিস্টেমে স্যক্সোফোন চালিয়ে দিতেই ডোরবেল বেজে উঠল । নীতা ধীরে সুস্থে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো , ফিরোজ দ্রুত ঘরে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।

একটা হাল্কা ঝিমঝিমে গন্ধ ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে , ফিরোজ টের পায় …মাস্ক ডিয়ার!  কোনো কথা না বলে সোজা নীতার দিকে তাকায় , নীতাকে আপাদমস্তক জরিপ করে কয়েক মুহূর্ত । আঃ … নীতা … ইউ আর টু মাচ… মনে মনে বলে ওঠে ফিরোজ। 

অনেক অনেকদিন পর ফিরোজ নীতাকে খুব আলগা সোজন্যমুলক আলিঙ্গন হলেও ছুঁতে পারল ! একটা মাদকতা ময় মিষ্টি গন্ধ উঠে আসছে নীতার শরীর থেকে , ফিরোজ এখনই শরীরে উত্তেজনা টের পায় নিজের । দুজনে গিয়ে সোফায় গা ডুবিয়ে বসে ।

“ স্কচ?” নীতা ফিরোজ কে জিজ্ঞেস করতে ফিরোজ মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

নীতা দুটো গ্লাসে মাকালানের সুদৃশ্য বোতল থেকে পেগ বানায় । নীতা জানে ফিরোজ অন রক পছন্দ করে , তাই আইস ট্রে থেকে দুটো  আইস কিউব নিয়ে ফিরোজের গ্লাসে দিয়ে বাড়িয়ে ধরে । নিজের গ্লাসে অল্প সোডা আর একটা কিউব নেয়। ফিরোজ একমনে নিজের ফোনে কি দেখে যাচ্ছে । গ্লাস হাতে নিয়ে ফোন রেখে দেয় সামনে গ্লাস টপ টেবলে। 

সোজা তাকিয়ে নীতাকে প্রশ্ন করে ফিরোজ “ তারপর ! লছমীর কিছু খবর ?”

নীতা ঠোঁট উলটে ঘাড় নাড়ে “ না: … ভাবনানীর কাছে থাকার খবরটা ফালতু ”

“ তাহলে ! … এদিকে তো হুজুরের চাপ বাড়ছে …ওটাকে তো চাইই চাই …” 

“ চেষ্টা তো চলছে … ”

“ তোমার সিন্ধি বেরাদরিতে কোনো খবর নেই !”

“ নাঃ …” 

“ ওটা চাইই নীতা… যা খবর তাতে এটা কনফার্ম যে ওটা এই শহরেই আছে … আমাদের কাছে যেটা আছে সেটা রেপ্লিকা …অরিজিনালটা এক বাঙালি টুরিস্ট কিভাবে হাতে পায়ে এবং নিয়ে চলে আসে ইণ্ডিয়ায় আজ থেকে কম করে চল্লিশ বছর আগে ইজিপ্ট থেকে। ”

“ কি আছে ওতে ! যে এত তার ডিমান্ড … !” 

ফিরোজ মুচকি হাসে “ আছে আছে …  যাইহোক আমাদের কাজ ওটা উদ্ধার করে হুজুরের হাতে তুলে দেওয়া , এখনও পর্যন্ত গত চল্লিশ বছরে ১৩ জন খুন হয়েছে ওটার জন্য । আরও হতে পারে …”

“ আমার ওসব ঝামেলায় ইন্টারেস্ট নেই ফিরোজ … কিউরিও র কারবার ভালোই চলছে , এখানে প্রচুর রিসোর্স ।”

“ আচ্ছা আমরা কি শুধু কাজের কথাই বলব নীতা !”

“ শুরু তো তুমিই করলে…” কিছুক্ষন নিস্তব্ধতা ঘরের মধ্যে নেমে আসে । তৃতীয় পেগের তরল গলাধঃকরণ করে ফিরোজ উঠে দাঁড়ায় । হাতটা বাড়িয়ে দেয় নীতার দিকে…

নীতাও উঠে দাঁড়িয়ে ফিরোজের হাত ধরে । ফিরোজ … এই সেই ফিরোজ ! যারজন্য পাগল হয়ে গেছিলো একদিন নীতা!

ঘরে ভেসে বেড়ানো স্যক্সোফোনের মূর্ছনায় দুজনে ঘনিষ্ঠ হয়ে তালে তাল মিলিয়ে শরীর দোলাতে থাকে । ফিরোজে এক হাত নীতা কোমর জড়িয়ে , আর এক হাতে নীতার বাঁহাত । ঘরে মধ্যের মৃদু আলো থাকলেও আলো আঁধারির তারতম্য ঘটাচ্ছে পাশের হাইরাইজের বিল বোর্ডের নিয়ন। বারোতলার উপরে নীতা আহমেদের ফ্ল্যাটটি এখন যেন একটা নিরিবিলি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ … নীতা আর ফিরোজ দুজনের মাথার মধ্যে খুব দ্রুত সরে যাচ্ছে ফ্ল্যাশ ব্যাকের রঙিন স্লাইডগুলো।

একটু বাড়তি টানে নীতা ফিরোজের বুকের সঙ্গে জুড়ে যায় । ভেঙ্গে পড়তে থাকে নীতার ভিতরের প্রতিরোধ ! নাকি ছিলোই তা ? তাই তো সন্ধ্যা থেকে এত শৃঙ্গার ! নীতার নেশা ধরতে থাকে ফিরোজের সেই আদি অকৃত্রিম বুনো গন্ধে । 

একে ওপরকে ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করতে থাকে । ফিরোজ নীতার পিঠের জিপর নামিয়ে দিতেই গাউন খুলে মেঝেতে পড়ে যায় । নীতার ফসফরাস শরীরে বিপদজনক বাঁকগুলিতে শুধু লেগে আছে পার্পল  মেটালিক থঙ , স্ট্র্যাপলেশ ব্রা …অসম্ভব উত্তেজনায় জেগে ওঠে ফিরোজের রিপু । নীতাকে তুলে নিয়ে সোফায় ফেলে ফিরোজ । নীতা খামচে ধরে আছে সুগঠিত, শুধুমাত্র একটা কালো ট্রাঙ্ক পরে থাকা ফিরোজের পিঠ , নোখের আঁচড়ে বুঝি চিড়ে যেতে থাকে পিঠ। ফিরোজ হাতের মুঠো খুলতেই চক চক করে ওঠে একটা ছোট্ট ছুরি …

নীতা উত্তেজনার মধ্যেও হেসে ওঠে , ফিরোজের এ স্বভাব তার পরিচিত , কত ইনার গারমেন্ট যে নষ্ট করেছে ফিরোজ । ফিরোজ ছুরি দিয়ে ছিন্ন করতে থাকে এক এক করে নীতার অবশিষ্ট বাঁধন গুলি। পিঠে চুমু খেতে খেতে কোমরে নামতে থাকে সে…কিন্তু একি ! চমকে ওঠে ফিরোজ …নীতার কোমরে , বাঁ নিতম্বের ঠিক ওপরে একটা ক্ষুদ্র ট্যাটু ! … মাছের আকৃতির সেই পরিচিত মনোগ্রাম যা একমাত্র কোর মেম্বারদেরই থাকে ! 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত