| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

উড়ান

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

সুপর্ণা ভট্টাচার্য

উড়োজাহাজের জানালা। মুখের সামনে সাদা মেঘের ছবি। ছুটন্ত ঘোড়া। উড়ন্ত বিহঙ্গ। ওই ত্তো মায়ের অবয়ব। মুকুটহীন । কোলে শিশু। কী ক্ষীণ । অমল নাম দিলো সে। নীল ক্যানভাসে টুপটুপ ফুটে উঠছে। আবার ভেঙে তুলো,তুলো মেঘ। এই,এই আবার ঝুপ করে উড়োজাহাজ ঢুকে পড়লো ছায়া,ছায়া ধূসর বাদল মেঘে।
কানের পাশে একটানা আওয়াজ । ভিতরে চোখ রাখলো। ছোট্ট দ্বীপ যেনো। পরীবৎ মেয়েরা নরম সুরে,আদর করে কথা বলে। হয়তো শেখানো । তবু,এরকম বলতে বলতে ওরা কেউ কেউ সেরকম কোমল হয়ে ওঠে।
খাঁচার ঘেরাটোপ থেকে এই অনন্তে উড়ান। কৃত্রিম ডানায় ভর করে।
গান ভেসে এলো বুকের মধ্যে থেকে,‘আমার মুক্তি অালোয়,আলোয়,এই আকাশে। যে বাউল মিশে থাকে তার সারাদিনের সংসারে,সে এ গান গেয়ে ডাক দিয়েছিলো বাহির পথে। তার কোনোকালেই সাহস হয়নি চৌকাঠ পার হতে!
নীচে ছোটো ছোটো সুখ দুখের ঘরবড়ি। ওখানে আজ শারদ উৎসবের তরঙ্গ।
’মহামায়ার আগমনী অরূপ ছন্দে বেজে উঠেছে’। এখন তো প্রতিমার বোধনের আগেই চক্ষুদান হয়ে যায়।
আহা!সরু রূপালি ফিতের মতো নদী। ও নদী মেঘের কোল থেকে কেমন শান্ত,ধীর দেখাচ্ছে । কিন্তু জানে সে,কত নদ,নদী এ শরতে দামাল হয়েছে!ভেসে গেছে কত জমি জিরেত,ক্ষেত খামার,ঘর বাড়ি। গ্রামের মণ্ডপে মা ভাসছেন ছপ্ ছপ্।
পুজো অর্থ কী মন্ত্র ,প্রার্থনা ,অঞ্জলি ?
উৎসব অর্থ কী মিলন,জাঁকজমক ,নতুন আভরণ ?
সে কী কারণে উপহার কিনেছে খুঁজে,খুঁজে!বেছে বেছে!টুকরো আদরে,টুকরো যত্নে,টুকরো মমতায়?খড়খড়ে হাতের তালু বুলিয়ে দিচ্ছিলো কেনো সে প্রিয় মুখগুলোয়,উপহার দেবার সময়,?স্পর্শ র এতো লোভ তার এখনো!?
নীচে গভীর নীল জল। স্বপ্ন!
তার ফ্রক পরা বেলায় দুগ্গা পুজোর সময় অমনি স্বপ্ন আঁকা নীল রঙের মন হয়ে যেতো সকলের। চাঁদার টাকা বাঁচিয়ে সব মণ্ডপে সারি দিয়ে বসিয়ে খিচুড়ি ,লাবড়া,চাটনি মায় বোঁদে পর্যন্ত খাওয়ানো হতো। সবাই তারা পাত পেড়ে বসে খেতো আঙুল চাটতে চাটতে। এমন উচ্চকিত কোলাহল ছিলোনা গো আমার শহরে ছিলোনা।
উড়োজাহাজ মাটির দিকে নামছে তো!
ওহো,ওইজন্যই নীল সমুদ্দুর দেখা যাচ্ছিলো!
বিশাখাপত্তনম।
বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে ফোন অন করতেই রিং টোন বেজে উঠলো।
—মা,কোথায় তুমি?
—বাহির পথে।
—কিইই!?
—সমুদ্রের কাছে এলাম।
—সে আবার কে?
—বন্ধু।
—বন্ধু!?তোমার ?কোথায় থাকে।
—আমার সঙ্গেই।
—তুমি কি হেঁয়ালি করছো?পুজোর সময় এতো চিন্তা ভালো লাগেনা।
—একদম চিন্তা কোরোনা।
—আরে বলে গেলে মহাভারত অশুদ্ধ হতো?
—আমার উড়ানটা শুদ্ধ হতো না।
—এই বয়সে উড়ান!তোমার এমন বন্ধু আছে,জানতাম না তো?
—সময় যে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে,তাই বন্ধুর কাছে উড়ান।
সুইচ অফ করে ফোনের সে দ্রুত গাড়িতে ওঠে।
এখানেও মণ্ডপ। তবে কলরব কম।
সে সমুদ্রর কাছে পৌঁছাতে চাইলো।
সে যে নদী।
মিলন উৎসবের উদযাপন হবে তাদের।
বুকের ভিতর শরতের পুজো গন্ধ পেলো সে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত